কলকাতা: বদলি নিয়ে শিক্ষকদের দীর্ঘ দিনের দাবি মিটিয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুল শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া এখন থেকে সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে হবে৷ প্রয়োজন হবে না ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’-এর৷ কিন্তু অনলাইন পোর্টাল ঘিরে তৈরি হল একাধিক সমস্যা৷
আরও পড়ুন- চলছে না লোকাল ট্রেন, জনরোষ ঠেকাতে রাতারাতি সক্রিয় রেল পুলিশ
শিক্ষা দফতরের আইওএসএমএস পোর্টালে শিক্ষদের প্রোফাইলে তিনটি সেকশনের ( আপার, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি) অপশন দেওয়া হয়েছে৷ সেই অপশনে ‘নর্মাল সেকশন’ না থাকায় দেখা দিয়েছে বিপত্তি। সাধারণত ২০১৬ সালের আগে নিউ সেট আপ জুনিয়র হাই স্কুলগুলিতেও নর্মাল সেকশন হিসাবেই শিক্ষকরা নিযুক্ত হতেন। সেই সময় আপার প্রাইমারি হিসাবে আলাদা কোনও সেকশন ছিল না। কিন্তু শিক্ষক প্রোফাইলে নর্মাল সেকশন এর কোনও অপশন না থাকায় ২০১৬ সালের আগে কাজে যোগ দেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমস্যায় পড়েছেন৷ অর্থাৎ তারা সেকেন্ডারি সেকশন (নবম-দশম) নিতে পারছে না, কারণ তাঁদের স্কুলে অ্যাকাডেমিক সেকশন পঞ্চম থেকে অষ্টম পর্যন্ত। আবার আপার প্রাইমারি সেকশনও (পঞ্চম থেকে অষ্টম) নিতে পারছে না৷ কারণ তাঁরা ২০১৬ সালের আগে নর্মাল সেকশনে (পঞ্চম-দশম) নিয়োগ পেয়েছিলেন। নর্মাল সেকশনকে ভেঙেই পড়ে আপার ও সেকেন্ডারি সেকসন করা হয়৷ এর ফলে জুনিয়র হাই স্কুলের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকরা ট্রান্সফারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নতুন পোর্টাল অনুযায়ী নর্মাল সেকশনের স্নাতকোত্তরদের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক সেকশনের স্নাতকোত্তরদের মধ্যে আপস বদলি হবে না৷ কিম্বা নিউ সেটআপ স্কুলের সেকন্ডারি শিক্ষকদের সঙ্গে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের সেকন্ডারি শিক্ষকদের আপস বদলি হবে না। পোর্টাল খুললেই এই অপশন ‘মিস ম্যাচ’ দেখাচ্ছে! অর্থাৎ যাঁরা পুরনো শিক্ষক তাঁদের সঙ্গে নতুন শিক্ষকদের আপস বদলি সম্ভব নয়৷ নতুন কোনও শিক্ষক নর্মাল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পোস্টে সাধারণ বদলি পাবে না এবং পুরনো শিক্ষক-শিক্ষিকারা নতুন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পোস্ট পাবেন না৷
আরও পড়ুন- শিক্ষকের কুকীর্তির পর্দাফাঁস! বন্ধুকে নিয়ে ছাত্রীকে ‘ধর্ষণ’! বিজেপি করায় ষড়যন্ত্র, দাবি স্ত্রীর
২০১৬-র আগে স্নাতক জেনারেল, অনার্স এবং স্নাতকোত্তর সকল শিক্ষকই মাধ্যমিকের সাধারণ শাখায় নিযুক্ত হয়েছেন৷ ব্যতিক্রম ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন, এডুকেশনের মতো বিষয়গুলি৷ আর গোল বেধেছে এখানেই৷ একজন শিক্ষক (অনার্স/স্নাতকোত্তর) ২০১৬-র আগে মাধ্যমিকে নিয়োগ পেয়েছেন৷ একই বিষয়ে অন্য একজন ২০১৬-র পর উচ্চমাধ্যমিকে নিযুক্ত হয়েছেন৷ দু’জন শিক্ষক একই যোগাত্যসম্পন্ন হলেও শাখা বিভাজনের জন্য নয়া পোর্টালে আপস বদলি সম্ভব হচ্ছে না৷ অথচ বদলির সরকারি নিয়মে এই নির্দেশিকার উল্লেখ করা হয়নি৷
সমগ্র বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সংগঠন ‘অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে শিক্ষা দফতরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে অনলাইন বদলির ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক সেকশনের সমস্যা সমাধান করে সকলকে বদলির সুযোগ, অনলাইনে জেনারেল বদলি শুরু ও আইওএসএমএস সাইটকে আরও সক্রিয় ও আধুনিকীকরণের দাবিতে আজ শিক্ষামন্ত্রী, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, কমিশনার ও এসএসসি সেক্রেটারির কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন- গরু পাচারের লেজ টানতেই সিবিআই নজরে ৫০-৬০ প্রভাবশালী
২০১৪ সালে জেনারেল ট্রান্সফার কার্যকর হওয়ার পর দীর্ঘ দিন কেটে গিয়েছে৷ এখনও পর্যন্ত তা শুরু হয়নি৷ মিউচুয়াল বদলি কিম্বা স্পেশাল বদলির মাধ্যমে কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলির সুযোগ পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি সামান্য। বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে মিউচুয়াল বদলি প্রক্রিয়া চালুর কথা বলা হলেও অবিলম্বে পূর্বের মতো আবেদনের ভিত্তিতে জেনারেল বদলি প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানানো হয়েছে৷ তবে এই প্রক্রিয়াটিও অনলাইনের মাধ্যমে করার কথা বলা হয়েছে৷