উন্নয়ন বনাম ধর্মীয় বিভাজন! নন্দীগ্রামে পাল্লা কোন দিকে ভারি?

উন্নয়ন বনাম ধর্মীয় বিভাজন! নন্দীগ্রামে পাল্লা কোন দিকে ভারি?

নিজস্ব প্রতিবেদন: নজিরবিহীনভাবে পশ্চিমবঙ্গে এবারের বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে ৮ দফায়। এতগুলো দফার মধ্যে একদিনের ভোট নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা, তা হলফ করে বলা যায়। সেটি হল ১ এপ্রিলের নির্বাচন। এদিন এবারের বিধানসভা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র নন্দীগ্রামে নির্বাচন যেখানে মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। 

একদা মমতার ছায়া সঙ্গী হিসেবে পরিচিত শুভেন্দু এবার গেরুয়া শিবিরের নাম লিখিয়ে তাঁর বিরুদ্ধেই প্রার্থী হয়েছেন নন্দীগ্রাম থেকে। আর অবশ্য ভাবে বলা যায়, বিজেপি শিবিরের নাম লেখানো মানেই প্রচারে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাবে ধর্ম। আর অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী তথা নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচারে বারবার হাতিয়ার হচ্ছে উন্নয়ন। তাই নন্দীগ্রামের এই লড়াই শুধুমাত্র রাজনৈতিক লড়াই নয়, এই লড়াই উন্নয়ন বনাম ধর্মীয় বিভাজনের। তাই নন্দীগ্রাম শেষ হাসি কাকে হাসাবে, এই প্রশ্নের উত্তর জানতে উদগ্রীব রাজ্যের প্রত্যেকে। 

আরও পড়ুন- নন্দীগ্রামে মমতার ভাড়া বাড়ির অদূরে পুজো দিলেন অমিত শাহ

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচারে সর্বদা উন্নয়নের কথা বলেন। কন্যাশ্রী থেকে শুরু করে যুবশ্রী, রূপশ্রী, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের পাশাপাশি ১০০ দিনের কাজে বাংলার সাফল্য, রাজ্যের নারী নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নকে প্রাধান্য দেন। এবারের নির্বাচনে এই সমস্ত জিনিস সামনে এসেছে ঠিকই কিন্তু তার পাশাপাশি বিভাজনের এবং বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অবগত করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অবশ্যই তৃণমূল কংগ্রেস থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিজেপি শিবিরে যোগদানের পরেই যেন বাংলার রাজনীতির সার্বিক চিত্র পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। 

আরও পড়ুন-  মোদীর বাংলাদেশ সফর আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন! কমিশনে অভিযোগ তৃণমূলের

এখন কথায় কথায় মীরজাফর এবং গদ্দার শব্দ শোনা যায়, উল্টোদিকে উন্নয়ন এবং প্রগতির কথার থেকে বেশি শোনা যায় ধর্মের বিভাজন এবং হিন্দুত্বের কথা। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপির প্রচারের মূল স্তম্ভ ধর্ম, তাই বাংলার নির্বাচনে তার প্রাধান্য বাড়বে এতে সন্দেহ করার কোন জায়গা নেই। আর বিজেপিকে টক্কর দিতে তৃণমূল কংগ্রেসকেও ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে একাধিক নেতাকে চণ্ডীপাঠ করতে হচ্ছে, ঠাকুরের নাম নিতে হচ্ছে সভামঞ্চে বক্তৃতা দেওয়ার সময়। অতএব, প্রত্যক্ষ নির্বাচনের লড়াইয়ের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে ও একে অপরকে টক্কর দিতে আসরে সকলেই। 

আরও পড়ুন- হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রামে লড়ছেন ৮ প্রার্থী! কী তাঁদের যোগ্যতা, সম্পদ? জানুন খুঁটিনাটি

ধর্মীয় মেরুকরণ বিজেপির প্রচারের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এবারের বাংলা বিধানসভা নির্বাচন একেবারেই ব্যতিক্রমী নয়। অন্যান্য রাজ্যে ভোট প্রচারে বিজেপি নেতারা যেমন যেমন মন্তব্য করেন এবং হিন্দুত্বের কথা তুলে ধরেন, এবারেও বাংলার নির্বাচনে একই দৃশ্য ধরা পড়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই বিজেপি তোষণের রাজনীতি করার অভিযোগ করেছিল। সেই অভিযোগ এখন আরো দৃঢ় হয়েছে, একইসঙ্গে রাজ্যবাসীকে বলা হচ্ছে যে তারা যেন এই তোষণের সঙ্গ না দেন। সব মিলিয়ে অবশেষে সেই ধর্ম বনাম উন্নয়ন লড়াই জনসমক্ষে ধরা দিয়েছে। 

আরও পড়ুন- নিমতাকাণ্ডে বৃদ্ধা মৃত্যুর ঘটনায় এবার খুনের মামলা দায়ের

এবারের বিধানসভা নির্বাচন আরো তাৎপর্যপূর্ণ কারণ একাধিক তৃণমূল কংগ্রেস সদস্য এবার নিজের দলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে শিশির অধিকারী, তাবড় রাজনৈতিক নেতা-সাংসদ এবং মন্ত্রীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে এবারের বিধানসভা নির্বাচন অন্য গুরুত্ব পেয়েছে। 

আরও পড়ুন- কেন বাংলাদেশে মোদী? তৃণমূলের অভিযোগের পাল্টা জবাব বিজেপির

চমকপ্রদ ব্যাপার, এখন নন্দীগ্রামে ভোট প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে মূলত ধর্মকে হাতিয়ার করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উল্লেখ করছেন ‘বেগম’ হিসেবে, চাকরি কিংবা শিল্পের কথা না বলে বলছেন, কারা আগামী দিনে তিলক কপালে টেনে ঘুরতে পারবেন, কে থাকলে পারবেন না। এমনকি বাংলার বিজেপি নেতৃত্বের যারা যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করে আওয়াজ তুলছেন তাদের বেশিরভাগ মন্তব্যে প্রাধান্য পাচ্ছে সেই ধর্মই। এদিকে বিরোধীদের আক্রমণ করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মকে প্রত্যক্ষভাবে হাতিয়ার না করলেও পরোক্ষে হাতিয়ার করছেন, তবে তাঁর বক্তব্যে প্রাধান্য পাচ্ছে উন্নয়ন এবং রাজ্যের প্রগতির কথা। ঘুরেফিরে প্রশ্ন সেই একটাই, উন্নয়ন বনাম ধর্মীয় বিভাজন, জিতবে কে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *