কাবুল: মুহূর্তের মধ্যে যেন বদলে গেল গোটা একটি দেশের চালচিত্র৷ নিজেকে একটু একটু করে গুছিয়ে নেওয়া আফগানিস্তানের আকাশে এখন তালিবানের রক্তচক্ষু৷ এক লহমায় চোখের সামনে যেন গুঁড়িয়ে যাচ্ছে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীর স্বপ্ন৷ আগামী প্রজন্মরা জঙ্গি হবে নাতো? দুশ্চিন্তায় প্রযোজক, পরিচালক ও চিত্রনাট্যের রচয়িতা বছর ৪০-এর রোয়া৷
আরও পড়ুন- তালিবানের সঙ্গে বৈঠক করল ভারত! দেওয়া হল বেশকিছু কড়া বার্তা
তাঁর কথায়, ‘‘আফগানিস্তানে শিল্প, সংস্কৃতি, সিনেমা, তথ্যচিত্র এবং সঙ্গীতের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে। পাখির কোলাহল হঠাৎ করে স্তব্ধ হয়ে গেল যেমন নিঃশব্দতা গ্রাস করে, ঠিক তেমনই এ দেশের শিল্প জগতে নৈঃশব্দ্য নেমে এসেছে।’’ ২০ বছর আগে তালিবান জমানাতেই শৈশব ও কৈশোর কেটেছে রোয়ার। চোখের সামনে দেখেছেন তালিবানের নৃশংসতা৷ সেই বিভীষিকা এখনও চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে তাঁর৷ দুই দশক আগের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে আফগানিস্তানে৷
দেশের আসু ভবিষ্যৎ নিয়ে রোয়ার গলায় ঝরে পড়ল উদ্বেগের সুর৷ তাঁর কথায়, ‘‘এক ঝাঁক নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়ে, যাঁরা এতদিন তালিবানি শাসনের গল্প শুনে এসেছে, তারা এবার প্রত্যক্ষ ভাবে তা অনুভব করছে৷ আজ তাঁদের ভবিষ্যৎ সঙ্কটের মুখে৷ যাঁরা বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য, সংস্কৃতি বা সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন, সেই সকল ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’’
আরও পড়ুন- কপ্টারে লাশ ঝুলিয়ে ঘোরাচ্ছে তালিবান! মার্কিন সেনা যেতেই প্রকাশ্যে ‘আসল রূপ’
তালিবানের ভয়ে বহু মানুষ দেশ ছেড়েছে৷ ভিটে-মাটি ছেড়ে ভিন দেশে ঠাঁই নেওয়া সেই সকল মানুষের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত৷ কিন্তু তা সত্বেও তাঁদের জন্য খুশি রোয়া৷ কিন্তু যাঁরা দেশেই পড়ে রয়েছে, তাঁদের জন্য উদ্বেগে ছটফট করছে তাঁর মন৷ যে তরুণ প্রজন্ম তালিবানের দেশে রয়ে গেল, তাঁরা আগামী দিনে সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে জঙ্গি হয়ে উঠবে নাতো? তিলতিল করে গড়ে ওঠা স্বপ্ন যখন চোখের সামনে বিসর্জন যাবে, তখন তাঁরা চরমপন্থার পথ বেছে না নেয়৷ রোয়ার একটাই চিন্তা, উন্নতির পথে তালিবানি কাটায় বিদ্ধ হয়ে জঙ্গি তালিকায় নাম লেখাবে নাতো? তেমনটা হলে একটা গোটা প্রজন্মই যে নষ্ট হয়ে যাবে৷ সারার সঙ্গে একমত আফগানিস্তানের আরও এক নামজাদা চিত্রপরিচালক তথা অভিনেত্রী সাহা সাহর জাকি৷
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবেও দু’বার এসেছেন রোয়া৷ কিন্তু আর সেই সুযোগ হবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দিহান৷ ২ বছর আগে হেরাটে শুরু হয়েছিল আন্তর্জাতিক মহিলা চলচ্চিত্র উৎসব। ওই উৎসবের প্রধান উদ্যোক্তা এবং নির্দেশক ছিল রোয়ার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা রোয়া ফিল্ম হাউস। উল্লেখ্য, সেটা ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র আন্তর্জাতিক মহিলা চলচ্চিত্র উৎসব। সারা বিশ্বের মহিলা পরিচালকদের তৈরি ৩,০০০ সিনেমা প্রদর্শীত হয়েছিল ওই চলচ্চিত্র উৎসবে৷ কিন্তু আগামী দিনে আফগানিস্তানের মাটিতে এমন চলচ্চিত্র উৎসব হয়তো স্মৃতি হয়েই থাকবে!