টার্গেট SSC! শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্যে বিষয় নির্বাচন করে কলেজে ভর্তি হচ্ছেন পড়ুয়ারা

টার্গেট SSC! শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্যে বিষয় নির্বাচন করে কলেজে ভর্তি হচ্ছেন পড়ুয়ারা

 

কলকাতা: উচ্চশিক্ষার পর কোন খাতে বইবে জীবন? কী হবে জীবনের লক্ষ্য? অধিকাংশ ছেলেমেয়ের কাছেই কি প্রথম অপশন হয়ে দাঁড়াচ্ছে শিক্ষকতার চাকরি? স্নাতকে ছাত্রছাত্রীদের বিষয় নির্বাচনের বহর অন্তত এমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে পড়ানো হয় এমন বিষয়গুলির প্রতি ঝোঁক বাড়ছে ছাত্রছাত্রীদের৷ অনেকটাই ব্রাত্য হয়ে পড়ছে অর্থনীতি, দর্শন ও সংস্কৃতর মতো কিছু বিষয়৷ 

আরও পড়ুন- নদী-জঙ্গলের বিপদ ঠেলে প্রতিদিন ১৬ কিমি হেঁটে স্কুলে পৌঁছন এই শিক্ষিকা

নিউ আলিপুর কলেজের অধ্যক্ষ জয়দীপ ষড়ঙ্গীর কথায়, ‘অর্থনীতি পড়ে এসএসসিতে তো আর চাকরি হবে না, তাই এই বিষয় পড়ে কী হবে? ছাত্রছাত্রীরা মধ্যে হয়তো এমন ধারণা তৈরি হয়েছে৷ তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, অর্থনীতি এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে উচ্চতর শিক্ষায় না গেলে দারুণ কেরিয়ার তৈরি বেশ কষ্টসাধ্য৷ আর যাঁরা অর্থনীতি পড়ার জন্য অত্যন্ত উৎসাহী, তাঁরা স্বভাবতই দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিক্স বা এই ধরনের নামজাদা প্রতিষ্ঠানগুলির দিকেই ঝুঁকবে। তিনি আরও জানান, নিউ আলিপুর কলেজে অর্থনীতির পাশাপাশি ফিলোজফি এবং সংস্কৃতের চাহিদা এ বছর একেবারে নেই বললেই চলে। গত কয়েক বছর ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংস্কৃত নিয়ে পড়ার ঝোঁক অনেকটাই বেড়েছিল৷ কিন্তু এবারের ছবিটা একেবারেই আলাদা৷ অন্যান্য বিষয়গুলিতে যেখানে রেকর্ড সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে চাইছে, সেখানে অর্থনীতিতে ১৫ জন, ফিলোজফিতে ১২ জন এবং সংস্কৃতে মাত্র ২ জন ভর্তি হয়েছে।

প্রায় একই সুর যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজকুমার রায়ের কথাতে। এই কলেজে অর্থনীতিতে ১৯টি আসন রয়েছে। সেখানে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ন’জন৷ অন্যদিকে, এ বছর ফাইনাল ইয়ারে ইকোনমিক্স অনার্সে রয়েছে মাত্র এক জন পড়ুয়া৷ পঙ্কজবাবু বলেন, ‘এটা বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে৷ ফাইনাল সেমিস্টারে ইকোনমিক্স অনার্সের পড়ুয়া মাত্র একজন। অথচ অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন তিনজন। এটা তো মানবসম্পদের ক্ষতি।’’ 

আরও পড়ুন- প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হবে নতুন শিক্ষানীতি: শিক্ষামন্ত্রী

মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের অবস্থাও প্রায় এক৷ কলেজের ভর্তি কমিটির সর্বোচ্চ দায়িত্বে থাকা শিক্ষক কৃষ্ণ দাস বলেন, অন্যান্য বিষয়গুলিতে ভর্তি হওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছে৷ কিন্তু সেখানে অর্থনীতির চাহিদা একেবারেই নেই৷ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজেও দেখা গেল অভিন্ন চিত্র। মাইক্রোবায়োলজির মতো বিষয়ে এই কলেজে দেড় হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী ভর্তির আবেদন জানিয়েছে৷ ইংরেজিতেও প্রায় একই সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে৷ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রতিটি স্কুলে সাধারণ পাঠ্যবিষয় হিসাবে থাকা বাংলা, ইতিহাস, ভূগোলের মতো বিষয়ে আবেদনের সংখ্যাও নেহেত কম নয়৷ সেখানে দাঁড়িয়ে একেবারেই কদর নেই অর্থনীতির৷ 

শিক্ষক হওয়ার লক্ষ্যে কলেজে কলেজে বিষয় নির্বাচনের প্রবণতা বাড়লেও খুব একটা সন্তোষজনক ফলাফল মিলছে না স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায়৷ কেননা দীর্ঘ ৭ বছর ধরে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও থমকে রয়েছে৷ রয়েছে গুরুচ্ছে অনিয়মের অভিযোগ৷ হাজার তিনেক মামলা জমে রয়েছে হাইকোর্টে৷ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন জমা নেওয়া হলেও ৩ বছরেও শূন্যপদ ও পরীক্ষা দিন জানতে পারেনি রাজ্য৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক নিয়োগে রয়েছে নানা জটিলতা৷ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যে সমস্ত পড়ুয়ারা কলেজে ভর্তির জন্য বিষয় নির্বাচন করছেন, অদূর ভবিষ্যতে তাঁকা আদৌও স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে চাকরি পাবেন তো? পাল্টে প্রশ্ন তুলছেন টেট ও এসএসসি উত্তীর্ণ, দীর্ঘ দিন ধরে চাকরির অপেক্ষায় থাকা বহু শিক্ষক পদপ্রার্থী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *