তিরুবনন্তপুরম: করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাপক ভাবে সমস্যায় পড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি৷ অনলাইন ক্লাসের উপর জোড় দেওয়া হলেও, এখনও প্রতিটি কোণায় পৌঁছয়নি ইন্টারনেট৷ অধিকাংশ পড়ুয়ার নেই মোবাইল ফোন রেনার সামর্থ৷ তাই সেই সকল এলাকায় ক্লাসরুমই ভরসা৷ কিন্তু স্কুলে পৌঁছনোটাও যে বড় হ্যাপা৷ এখনও স্বাভাবিক নয় পরিবহণ ব্যবস্থা৷ বাস বা ট্রেন কিছুটা চললেও, সংখ্যাটা অনেকটাই কম৷ এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের দায়িত্ব থেকে সরে আসেননি কেরলের আদিবাসী স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা মিনি কোর্মা৷ লকডাউনের বাধা পেরিয়ে প্রতিদিন ১৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে পৌঁছেছেন তিনি৷
আরও পড়ুন- প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হবে নতুন শিক্ষানীতি: শিক্ষামন্ত্রী
মালাপ্পুরাম জেলার উপজাতি জনপদ অম্বুলার আদিবাসী স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা মিনি কোর্মা৷ স্কুলের একক শিক্ষিকা হওয়ায় পড়ুয়াদের যাবতীয় দায়-দায়িত্বই তাঁর কাঁধেই ন্যস্ত৷ সেই দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গেই৷ প্রতিদিন ঘন জঙ্গলের পথ পেরেয়ি স্কুলে এসেছেন তাঁর খুদে পড়ুয়াদের পড়াতে৷ কেরলের ২৭০টি সিঙ্গেল টিচার স্কুলের মধ্যে একটি মিনি কোর্মার স্কুল৷ প্রতিদিন যে পথ দিয়ে তিনি স্কুলে যান, তা অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল৷ ঘন অরণ্যে রয়েছে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের বাস৷ পায়ে পায়ে জড়িয়ে রয়েছে বিপদ৷ কিন্তু কোনও কিছুই টলাতে পারেনি তাঁকে৷ আগামবাদম থেকে প্রতিদিন পায়ে হেঁটে প্রথমে ১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন তিনি৷ সড়ক পথ পেরনোর পর তিনি ঢুকে পড়েন পিচ্ছিল জঙ্গলের রাস্তায়৷ প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই জঙ্গলের পথ৷ এই জঙ্গলে রয়েছে বুনো শুয়োর, হাতি আর বাঘের উপদ্রপ৷ এখানেই শেষ নয়৷ এর পর পেরতে হয় নদী৷ নদীর উপর বাঁশের সেতু বেয়ে পৌঁছন আম্বুলা৷ সেখানেই রয়েছে তাঁর স্কুল৷
গত ছয় বছর ধরে একইভাবে স্কুলে পৌঁছন বছর ৪৪ এর মিনি৷ লকডাউনেও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি৷ গত কয়েক বছরে বন্যায় বহু বার নষ্ট হয়ে গিয়েছে বাঁশের সেতু৷ যা তাঁর পথকে আরও কঠিন করে তুলেছে৷ লকডাউনের আগে এখানে কিছু বাস চলত৷ কিন্তু লকডাউনের পর থেকে সেটাও বব্ধ হয়ে গিয়েছে৷ ফলে গোটা রাস্তাটাই হেঁটে যেতে হয় মিনিকে৷
আরও পড়ুন- মাটির টানে গ্রামে ফিরলেন সিলিকন ভ্যালি স্টার, গড়লেন বিনা পয়সার স্কুল
মিনি জানান, ছোট থেকেই হাঁটার অভ্যাস রয়েছে তাঁর৷ ছোটবেলায় ৭ কিলোমিটার পথ হেঁটে প্রাইমারি স্কুলে যেতেন তিনি৷ মিনি আরও বলেন, ‘‘যখন মামবাদে এমইএস কলেজে পড়াশোনা করতাম, তখন বাড়ি থেকে আমবাদমান পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার পথ রোজ হাঁটতাম৷ এর পর জিপে করে পৌঁছতাম কলেজে৷ ফলে এটা আমার কাছে নতুন কিছুই নয়৷ আর সবার আগে আমার দায়িত্ব৷’’