রাজ্যগুলিকে বিনা সুদে ৫০ বছরের ঋণ উপহার  সীতারমণের

রাজ্যগুলিকে বিনা সুদে ৫০ বছরের ঋণ উপহার  সীতারমণের

নয়াদিল্লি: করোনা পরিস্থিতিতে বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে দেশের অর্থনীতি৷ চাহিদা ও জোগান দুই-ই তলানিতে ঠেকেছে৷ আনলক পর্বে জোগান কিছুটা বাড়লেও, চাহিদা সেই রূপ বৃদ্ধি হয়নি৷ এর জন্য মূলত দায়ি কর্মী ছাঁটাই ও বেতন হ্রাস৷ এই পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়াতে ক্রেতাদের হাতে বাড়তি অর্থের জোগান দিয়ে চাহিদা বাড়ানোর পথে হাঁটল কেন্দ্র৷  পাশাপাশি রাজ্যগুলিকে বিনা সুদে ৫০ বছরের জন্য ১২,০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ 

আরও পড়ুন- লোন মোরাটোরিয়ামের সময় বাড়ানো আর সম্ভব নয়, সুপ্রিম কোর্টকে জানাল কেন্দ্র ও আরবিআই

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারে চাহিদা বাড়াতে নগদ অর্থের জোগান বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে৷ সেই কথা বিবেচনা করেই দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সরকারি কর্মীদের জন্য লিভ ট্রাভেল কনসেসন (এলটিসি) ভাউচার এবং স্পেশাল ফেস্টিভাল অ্যাডভান্স স্কিম শুরু করার কথা ঘোষণা করেন সীতারমণ৷ এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা ভাউচারের মাধ্যমে তাঁদের এলটিসি এনক্যাশ করতে পারবেন। 

নিজেদের পছন্দ মতো জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রতি চার বছরে এলটিসি পান সরকারি কর্মচারীরা। এতে দুটি বিকল্প থাকে। প্রথমটি হল – ভারতের যে কোনও প্রান্তে ঘোরার সুযোগ কিম্বা হোমটাউনে যাওয়ার জন্য একবার এলটিসি। আর দ্বিতীয়টি হল – নিজের বাড়িতে যাওয়ার জন্য জোড়া এলটিসি। নির্দিষ্ট বেতনক্রম বা পদের ভিত্তিতে সেই অর্থ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ১০ দিনের লিভ এনক্যাশমেন্ট (বেতন ও মহার্ঘ ভাতা) দেওয়া হয়।

এদিন সীতারমণ বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জেরে কর্মীরা বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারছেন না৷ কিন্তু নিজেদের পছন্দের জিনিস কেনার জন্য এই টাকা তাঁরা ব্যবহার করতে পারবেন। যে দ্রব্যগুলির জিএসটি ১২ শতাংশ বা তার বেশি, সেগুলির ক্ষেত্রেই সেই টাকা খরচ করা যাবে।’’  কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত এই প্রকল্প কার্যকর থাকবে৷ এই প্রকল্পের জন্য সরকারের ৫,৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ডিজিটাল লেনদেন করা যাবে৷ কেন্দ্রের দাবি, এর ফলে বাজারে চাহিদা বাড়বে৷ 

আরও পড়ুন- সুখবর! বছর শেষেই পুরোদমে চালু হবে RTGS পেমেন্ট সিস্টেম! কী সুবিধা, জানুন বিস্তারিত

এছাড়াও এদিন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ রাজ্যগুলিকে তিনটি ধাপে বিনা সুদে ৫০ বছরের জন্য ১২,০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র৷ প্রথম ভাগে উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যকে ২০০ কোটি করে ঋণ দেওয়া হবে৷ তবে উত্তরাখণ্ড এবং হিমাচল প্রদেশ পাবে ৪৫০ কোটি করে৷ দ্বিতীয় ধাপে ১৫ তম ফিনান্স কমিশনের সুপারিশ অনুসারে বাকি রাজ্যগুলির মধ্যে ৭,৫০০ টাকা ভাগ করে দেওয়া হবে৷ অর্থমন্ত্রী জানান, প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্বে দেওয়া সুদ বিহীন ঋণের অর্থ ২০২১ এর ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করতে হবে৷ যার ৫০ শতাংশ এখন দেওয়া হবে এবং সেই অর্থের ব্যবহার অনুযায়ী পরবর্তী অর্থ প্রদান করা হবে৷ এছাড়াও যে সকল রাজ্যগুলি আত্মনির্ভর আর্থিক ঘাটতি প্যাকেজে চারটির মধ্যে অন্তত তিনটি সংস্কার করবে, সেই রাজ্যগুলির জন্য তৃতীয় ধাপে ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে৷  

জিএসটি ক্ষতিপূরণের বকেয়া টাকা নিয়ে অধিকাংশ রাজ্যই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে৷ ঘাটতি মেটাতে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্র৷ এই প্রস্তাবের চরম বিরোধিতা করে রাজ্যের তৃণমূল সরকার৷ এদিন ৪৩ তম জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে পর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন,”পরিকাঠামো এবং সম্পদ তৈরিতে অর্থ খরচের অনেকগুলি প্রভাব রয়েছে৷ এটি শুধুমাত্র বর্তমান জিডিপি-ই নয়, ভবিষ্যতেও জিডিপি বৃদ্ধিতে কাজে আসবে৷ আমরা রাজ্য ও কেন্দ্রে মূলধন খরচে নতুন গতি দিতে চাই৷’’ 

আরও পড়ুন- RBI Monetary Policy: অপরিবর্তিত রইল রেপো রেট

এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রের মূলধন খরচ হিসেবে অতিরিক্ত ২৫০০ কোটি টাকা বাজেট এর ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ এই অর্থ খরচ হবে রাস্তা, প্রতিরক্ষা, পরিকাঠামো, জল সরবরাহ, নগরন্নয়ন খাতে৷ অর্থমন্ত্রী বলেন,”আজকের সমাধান, আগামীর সমস্যা হওয়া উচিত নয়৷ কেন্দ্রীয় সরকার মনে রেখেছে যে, চাহিদা বাড়াতে যে পদক্ষেপ করা হবে, ভবিষ্যতে দেশের মানুষের উপর তা যেন মুদ্রাস্ফীতির বোঝা হয়ে না হয়ে দাঁড়ায়  বা সরকারকে ব্যাপক ঋণ নিতে না হয়৷’’  
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *