নয়াদিল্লি: দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দেওয়ালির আগে নতুন প্যাকেজ নিয়ে এলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন৷ এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, করোনার মধ্যে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে৷ জিএসটি আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গত কয়েক মাসে যে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার জেরেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি৷ বাজারে চাহিদাও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে৷
আরও পড়ুন- ধনতেরাসে সোনা কিনতে চান? সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলোচ্ছে না জনতার
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বছর অক্টোবর মাসে জিএসটি আদায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা ছিল৷ এই বছর ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি হয়েছে৷ যা ১০ শতাংশ বেশি৷ অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইতিবাচক বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ সীতারমন বলেন, মুডিজের তরফে উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে৷ তাঁরা আগে জানিয়েছিল চলতি বছর অর্থনীতি ৯.৬ শতাংশ সংকুচিত হবে৷ তবে বর্তমানে তা ৮.৯ শতাংশ হয়েছে বলে তাঁদের রিপোর্ট।
এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প ১.০ এর ভূয়সী প্রশংসা করেন সীতারমণ৷ তিনি বলেন, ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড প্রকল্প চালু করা হয়েছে৷ এর ফলে উপকৃত হয়েছে ৬৮.৬ কোটি মানুষ। আন্তঃরাজ্যের ক্ষেত্রেও সুবিধা এসেছে। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর স্বনিধি প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন তিনি৷ এই প্রকল্পের আওতায় কমপক্ষে ২৬ লক্ষ ৬২ হাজার ঋণের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে৷ ৩০টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ১৩৭৩.৩৩ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, হকারদের আত্মনির্ভর প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ উপকৃত হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকরা৷ কৃষকদের জন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে৷ কিষাণ কার্ডের জন্য ১ কোটিরও বেশি আবেদন এসেছে৷ ব্যাঙ্কগুলি ১৫৭.৪৪ লক্ষ কৃষককে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে৷ বর্তমানে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন ২.৫ কোটি কৃষক৷ অতিরিক্ত জরুরি কার্যনির্বাহী তহবিলের অধীনে নাবার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের ২৫ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের সার কেনার জন্য ৬৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দেওয়া হবে৷
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মৎস সম্পদ যোজনায় ২১টি রাজ্যের জন্য ১৬৮১.৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ NBFCs এবং HFCs আবাসন খাতে স্পেশাল লিকুইডিটি প্রকল্পে ৭,২২৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷ ইমার্জেন্সি ক্রেডিট লিকুইডিটি গ্যারান্টি প্রকল্পে ৬১ লক্ষ ঋণ গ্রহীতার জন্য ২.০৫ লক্ষ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১.৫২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়ে গিয়েছে৷ এছাড়াও অর্থমন্ত্রী বলেন, আত্মনির্ভর ভারত ২.০ প্রকল্পে এসবিআইয়ের হাত ধরে উৎসব কার্ড এসেছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা এলটিসি ক্যাস ভাউচার এবং ফেস্টিভ্যাল অ্যাডভান্স প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন৷
আরও পড়ুন- সোনায় লগ্নিতে লক্ষ্মীলাভ, ১ বছরে ‘রিটার্ন’ ৩৬ শতাংশ! চড়া বাজার
আত্মনির্ভর ৩.০ প্যাকেজে মোট ১২টি ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী৷ প্রথমেই হল আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনা৷ লকডাউনে কাজ হারানো মানুষদের জন্য আত্মনির্ভর রোজগার যোজনা নিয়ে এসেছে অর্থ মন্ত্রক৷ ১ অক্টোবর থেকে এই প্রকল্প লাগু করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে একাধিক সুবিধার কথা ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, যাঁরা ১ মার্চ ২০২০ থেকে ১ সেপ্টেম্বর ২০২০ এর মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন, তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন৷ যাঁদের মাসিক উপার্জন ১৫ হাজার টাকার কম, ইপিএফও রেজিস্টার্ড প্রতিষ্ঠানে যোগ দিলে, তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন৷ আগামী ২ বছর সুবিধা পাওয়া যাবে৷ যে সংস্থাগুলিতে ১ হাজারের কম কর্মী থাকবে, সেই সংস্থায় নতুন কর্মী ও সংস্থার ভাগের ইপিএফও’র ২৪ শতাংশ বহন করবে কেন্দ্র। যে সকল সংস্থায় কর্মী সংখ্যা ১ হাজারের বেশি, সেই সকল সংস্থায় শুধুমাত্র কর্মীদের ভাগের ১২ শতাংশ অর্থ বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার৷ এর ফলে সংস্থাগুলি কর্মসংস্থানে উৎসাহিত হবে৷
নিয়ে আসা হয়েছে পিএম আবাজ যোজনা৷ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় বাড়ি তৈরির কাজে কমপক্ষে ৭৮ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কাঁচামালের চাহিদা বাড়বে। এর জন্য অতিরিক্ত ১৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।এছাড়াও এমার্জেন্স ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি প্রকল্প ২১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার কথাও ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ নতুন ইসিএ স্টিমুলাস ঘোষণা করা হয়েছে৷ উৎপাদন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে ১,৪৬ হাজার কোটি টাকার ইনসেনটিভ ঘোষণা করা হয়েছে৷
আরও পড়ুন- সন্তানের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যপূরণে কতটা প্রস্তুত থাকবেন? জেনে নিন হিসেব-নিকেষ
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনার আওতায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। মনরেগা অর্থাৎ ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে এই টাকা খরচ করা হবে। এই খাতে সরকারের বাজেট বেড়ে হল ১ লক্ষ ১১ হাজার কোটি। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন করে গতি সঞ্চার হবে বলে উল্লেখ করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী৷ করোনা পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণার জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। এই টাকা ডিপার্টমেন্ট অফ বায়োটেকনোলজির হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্মলা সীতারমন। এছাড়াও মূলধন ও শিল্প ব্যয়ের জন্য ১০,২০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বাজেট সরবরাহ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে৷