দলের রাশ টেনে বিদ্রোহীদের তীব্র আক্রমণ মমতার, বাংলায় আমিই অবজার্ভার!

দলের রাশ টেনে বিদ্রোহীদের তীব্র আক্রমণ মমতার, বাংলায় আমিই অবজার্ভার!

বাঁকুড়া:  বাঁকুড়ার জনসভা থেকে যেমন দলীয় কর্মীদের বার্তা দিলেন, তেমনই বিরোধীদের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিন বিজেপি-কংগ্রেস ও বামেদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে তিন ধরনের লোক থাকে লোভী, ভোগী আর ত্যাগী৷ সিপিএম সবচেয়ে বড় লোভী আর বিজেপি হচ্ছে ভোগী৷ কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস করতে হলে ত্যাগী হতে হবে৷ দলীয় কর্মীদের সেই বার্তাই দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ 

আরও পড়ুন- ‘আমি জেলে থেকেও বাংলাকে জেতাব’, বাঁকুড়া থেকে হুঙ্কার মমতার

বাঁকুড়া, জঙ্গল মহলে একসময় বামেরা কী ভাবে অত্যাচার চালাত সেই খতিয়ানও তুলে ধরেন তৃণমূল নেত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার মানুষ কি সেই অত্যাচারের দিন ভুলে গিয়েছেন?’’ সিপিএমের হার্মাদরাই রং বদলে বিজেপি’তে গিয়েছে৷ নারদা-সারদা মামলা থেকে বাঁচতে বিজেপি’র পায়ে পড়েছে৷ এদিকে তৃণমূল নেতাদের জেলে পাঠানোর ভয় দেখানো হচ্ছে৷ এর পরেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে আমাকে গ্রেফতার করুক৷ আমি জেলে থেকেও তৃণমূলকে ক্ষমতায় ফেরাব৷’’ নাম না করে এদিন  আক্রমণ শানান বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকেও৷ তিনি বলেন,  “কেউ কেউ বলছেন গোমূত্র খেলে করোনা হবে না। তিনি তো খেয়েছিলেন৷ তাহলে ওঁনার করোনা হল কী ভাবে?” গোমূত্র থেকে সোনা তৈরির মন্তব্য নিয়েও কটাক্ষ করেন নেত্রী৷ 

শনুকপাহাড়ীর জনসভা থেকে জলীয় কর্মীদের রাশও শক্ত হাতে ধরেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ তিনি বলেন, দলে ১০০ জনের মধ্যে ১০০ জনই ঠিক হয় না৷ কারও ভুল হলে আমরা তা সংশোধন করে নেব৷ কোনও ব্যক্তি মানুষের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে ভুল বুঝবেন না৷ কারও রিপোর্ট কার্ড খারাপ থাকলে তাঁকে বলি কাজ করতে হবে না৷ নতুন কর্মী গড়ে নেব৷ এরপরই সুর চড়িয়ে তিনি বলেন, “কেউ কেউ ভাবছেন, বাইচান্স ওঁরা ক্ষমতায় চলে আসতে পারে, তাই ওঁদের সঙ্গে তলে তলে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁদের জানিয়ে রাখি, ওঁরা কোনওদিন বাংলায় ক্ষমতায় আসবে না। চান্সই নেই তো বাইচান্স৷” তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘একজন কর্মী হিসাবে সারা বাংলায় আমিই অবজার্ভার৷  কে কী করছে, কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে তাঁর সম্পূর্ণ হিসেব রাখছি এবং রাখব৷ আমি সবটাই জানি৷ কিন্তু কিছু বলছি না৷’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ কেউ তৃণমূল করে আবার অন্যদিকেও যোগাযোগ রাখে৷ এটা ভাববেন না যে দিদি জানে না৷ তাঁদের দিদি ছেড়ে রেখেছে৷ যোগাযোগ রেখে সেদিকের খবরটাও পাস করছে৷ ছাগলের দুটো ছানাকে ঘরে রেখে দিতে হয়, আর একটাকে ছেড়ে দিতে হয়৷ আমরা মনে করি তাঁরা ছাগলের তৃতীয় সন্তান৷ ধান্দাবাজ৷ এই ধান্দাবাজদের সংখ্যা অবশ্য খুবই কম৷’’ দলের কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর নির্দেশ, ‘‘নজর রাখুন রাত্রেবেলা কে বেড়িয়ে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে৷’’ 

আরও পড়ুন- নজরে সিভিক ভলেন্টিয়াররা, দ্রুত আই কার্ড দিতে চলেছে রাজ্য সরকার

তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, যাঁরা টাকা দিয়ে বাংলা দখল করার চেষ্টা করছে তাঁদের বলে রাখি বাংলা টাকার কাছে মাথা নত করে না৷ ধমকির কাছেও আত্মসমর্পণ করে না৷ জঙ্গলমহল নিয়ে তাঁরা জেতার গর্ব করেন৷ আর আমি জঙ্গলমহল নিয়ে গর্ব করি যে সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পেরেছি৷ আগামী দিনে তাঁদের বলতে হবে সারা ভারত পারলেও, বাংলাটা পারলাম না৷ তিনি বলেন, বিজেপি কাউকে কাউকে ভয় দেখাচ্ছে যে ওঁরা ক্ষমতায় আসবে৷ লোকসভায় আগেও ওঁরা টাকা দিয়েছিল কিন্তু আমরা ধরতে পারিনি৷ এবারে খপাখপ ধরব৷ আর বলব টাকা নিয়ে নেবেন কিন্তু ভোট দেবেন না৷ বিজেপি’কে ভোট দেওয়ার আগে সকলকে সাবধানও করেন দেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশের মানুষ ভয়ে কথা বলতে পারে না৷ আপনারা দাঙ্গা, এনআরসি, ক্যাগ, এনপিআর দেখেছেন৷ ভোট দিলেই ওঁরা ঠাকুমা-ঠাকুর দা’র জন্মের সার্টিফিকেট দেখতে চাইবে৷ যা আমরা হতে দেব না৷ তিনি বলেন, ২১ –এ জোড় ধাক্কা দেব বিজেপি’কে৷ বিজেপি’র পরিবর্তন চাই৷  নেত্রীর কথায়, রাজ্যে তৃণমূলই থাকবে৷ টাকা দিয়ে ওঁরা জিততে পারবে না৷ তিনি বলেন, সারা বছর রাজ্যের মানুষকে দেখে না। অথচ নির্বাচনের আগে মানুষের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে কেউ কেউ। টাকা দিলে নিয়ে নেবেন৷ কারণ টাকাটা ওদের নয়৷ আপনাদেরই টাকা৷’’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বঙ্গ সফর ও তফশিলী বাড়িতে বসে খাওয়া নিয়েও এদিন কটাক্ষ করেন দলনেত্রী৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাইরে থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এসে তফশিলী ঘরে বসে খাচ্ছেন৷ এদিকে থাকছেন পাঁচ তারা হোটেলে৷ আদিবাসী মা, ভাই, বোনেদের সঙ্গে উনি প্রতারণা করা হচ্ছে৷ এভাবে মানুষের কাছে যাওয়া যায় না৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *