‘বাংলাকে বাঁচান’! মমতা-শুভেন্দুর দ্বৈরথে ‘শিল্প বার্তায়’ আজও প্রাসঙ্গিক বুদ্ধবাবু!

‘বাংলাকে বাঁচান’! মমতা-শুভেন্দুর দ্বৈরথে ‘শিল্প বার্তায়’ আজও প্রাসঙ্গিক বুদ্ধবাবু!

কলকাতা:  হাইপ্রোফাইল নন্দীগ্রামে মেগা ফাইটের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই অন্যতম ফ্যাক্টর ২০০৭ সাল৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের আবেগকে কাজ লাগিয়ে এই কেন্দ্রে ‘প্রেস্টিজ ফাইটে’ নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী৷ আর আন্দোলনের মাটিতে দাঁড়িয়েই অধিকারী পরিবারকে ‘খলনায়ক’ করে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর বিস্ফোরক দাবি, ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ বাপ-বেটার অনুমতিতেই নন্দীগ্রামে ঢুকেছিল চটি পড়া পুলিশ৷ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যে ফের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ফের চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ 

আরও পড়ুন- মমতার যাত্রাপথে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান! TMC-BJP মুখোমুখি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র নন্দীগ্রাম

নন্দীগ্রামে গুলি চালানো ও ১৪ জনে মৃত্যুর দায় এতদিন বুদ্ধদেববাবুর ঘাড়েই চাপিয়ে এসেছিল বিরোধীরা৷ কিন্তু রাজনীতির চক্রব্যূহে সেই নন্দীগ্রামেই মমতা-শুভেন্দুর সম্মুখ সমরে বদলে গেল ইতিহাস৷ শুভন্দুঘাতী অস্ত্রে মমতা কি পরোক্ষ ভাবে বুদ্ধদেব বাবুকেই অভিযোগ মুক্ত করলেন না? এই প্রশ্নও ক্রমশ জোড়াল হয়ে উঠেছে৷ অন্যদিকে, শুভেন্দু বারবার বলে এসেছেন, নন্দীগ্রাম কোনও দল বা ব্যক্তির আন্দোলন নয়৷ এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের আন্দোলন৷ কিন্তু যে নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে শুভেন্দু অধিকারী রাজনীতির আঙিনায় মাথা তুলেছিলেন, তাঁকে সেই আন্দোলনেরই খলনায়ক করার প্রয়াস চালালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর এই দ্বৈরথের মাঝে ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ অথচ তাৎপর্যপূর্ণভাবে এক সময় রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখে স্বীকার করেছিলেন, ‘নন্দীগ্রামে গুলিটা না চললেই ভালো হত’৷ 

আর আজ নন্দীগ্রামে যখন তৃণমূল-বিজেপি’র দড়ি টানাটানি, তখন অসুস্থ বুদ্ধবাবুর বার্তা, ‘নন্দীগ্রামে এখন শ্মশানের নীরবতা৷ সেদিনের কুটিল চিত্রনাট্যের চক্রান্তকারীরা আজ দ্বিবিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলার যুব সমাজ।’’ বামেদের তরফে প্রকাশিত একটা ভিডিয়ো বার্তায় বুদ্ধদেববাবু কাঠগড়ায় তুলেছেন তৃণমূলকে৷ তাঁর কথায়,  রাজ্য রাজনীতিতে এ এক সন্ধিক্ষণ৷ বামফ্রন্ট আমলে কৃষির বিকাশের সঙ্গে যে শিল্পের প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল, তা আস অবলুপ্ত৷ বামফ্রন্ট সরকারের অপসারণের পর তৃণমূল সরকার রাজ্যজুড়ে ভায়বহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে৷ রাজ্যের অর্থনীতি বিপর্যস্ত৷ কৃষিতে দেখা দিয়েছে সঙ্কট৷ কৃষিজ পণ্য আকাশ ছোঁয়া৷ অন্যদিকে শিল্পায়ন সম্পূর্ণ স্তব্ধ৷ গত ১০ বছরে উল্লেখযোগ্য একটা শিল্পও আসেনি৷ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ নাগরিক জীবনের চাহিদাগুলি অবহেলিত৷ গণতন্ত্র আজ আক্রান্ত৷’’  

আরও পড়ুন- ‘তৃণমূল-বিজেপি ২ জোকারের লড়াই চলছে’, ফের মুখ খুললেন অধীর!

২০০৬ সালে বাম সরকার নন্দীগ্রামে একটি মেগা বিজনেস হাব গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল৷ ঠিক হয়েছিল তিনটি পর্যায়ে মোট ৩৫ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করবে সরকার৷ এই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করেছিল সেখান মানুষ৷ তাঁদের সেই অসন্তোষকে হাতিয়ার করে রাতারাতি গড়ে উঠেছিল ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি৷ তার পর হলদি নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে৷ পুলিশের পোশাকে গুলি চলেছে৷ শহিদ হয়েছেন ১৪ জন৷ যাঁদের রক্তে লেখা হয় রাজ্যে পালা বদলের ইতিহাস৷ পালা বদলালেও রাজ্যে আজও এল না উল্লেখযোগ্য শিল্প৷ তাই হয়তো বুদ্ধদেববাবুর বার্তা, কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’, আজও প্রাসঙ্গিক৷   


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − two =