‘পরিবারবাদ আর তোলাবাজিতে ১ নম্বরে বাংলা’, তোপ অমিত শাহের

‘পরিবারবাদ আর তোলাবাজিতে ১ নম্বরে বাংলা’, তোপ অমিত শাহের

f386e39e985645c2d96921044bf426a0

বোলপুর:  শনিবার মেদিনীপুরে ছিল মোগা শো৷ রবিবার বোলপুরে একগুচ্ছ কর্মসূচি আর মেগা রোড শো’র পর সাংবাদিক বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷ এদিন সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই তিনি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেন৷ দুর্নীতি, তোলাবাজিতে তৃণমূল পয়লা নম্বর বলেও তোপ দাগেন৷  

আরও পড়ুন- ‘সুযোগ নিয়ে পিছন থেকে ছুরি’, শুভেন্দু প্রসঙ্গে বিস্ফোরক সুব্রত

অমিত শাহ বলেন,  তৃণমূলের কর্মীরা যে ভাবে নাড্ডার কনভয়ে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি তার নিন্দা করে৷ ব্যক্তিগত ভাবেও আমি তার নিন্দা করি৷ এই হামলা বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতির উপর হামলা নয়, বাংলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর এই হামলা করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় দায়ভার তৃণমূলের৷ ক্ষমতার দম্ভ এর জন্য দায়ী৷ তবে এই ধরনের হামলা চালিয়ে বিজেপি-কে রোখা যাবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি৷ তাঁর কথায়, যত বেশি হামলা হবে, তত বেশি শক্তি নিয়ে বাংলার মাটিতে নিজেদের শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে ভারতীয় জনতা পার্টি৷ এই হিংসার জবাব গণতান্ত্রিক পথেই দেওয়া হবে৷ 

তিনি আরও বলেন, এই হামলার পর রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া আসা প্রয়োজন ছিল, তেমনটা আসেনি৷  রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ দুর্নীতিও রাজ্যে চরম পর্যায়ে উঠেছে৷ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিপূরণ হিসাবে কেন্দ্র যে টাকা পাঠিয়েছিল, সেই টাকা নিয়েও দূর্নীতি হয়েছে৷  রাজ্যের শাসক দলের কর্মকর্তারা ওই টাকা নিয়ে দূর্নীতি করেছেন৷ করোনার সময় গরিব মানুষদের জন্য ৯ মাসের খাবার পাঠিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ সেই খাবারের বস্তা উঠাও হয়ে গিয়েছে৷ গরিব মানুষকে ক্ষুধার্থ থাকতে হয়েছে৷ সিএজি নির্দেশের বিরুদ্ধে কেন সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে রাজ্য? কীসের ভয়? আসলে দুর্নীতি হয়েছে বলেই এতো ভয় পাচ্ছে বলে সুর চড়ান তিনি৷ তাঁর অভিযোগ, ক্ষমতায় যাঁরা আছেন, তাঁরা দুর্নীতির কথা জেনেও সবাই চুপ৷ রাজনীতিতে পরিবাদবাদ চললে বারবার এমন ঘটনাই ঘটতে থাকবে৷ 

তিনি জানান, স্বাধীনতার পর শিল্প ক্ষেত্রে বাংলার অবদান ছিল ৩০ শতাংশ৷ তিন দশকের বাম জমানা আর এক দশকের তৃণমূল শাসনে এই গ্রাফ ক্রমাগত নীচে নেমে ৩.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷ এই পরিবর্তন আনতে পারেন একমাত্র নরেন্দ্র মোদী৷ বিজেপি ক্ষমতায় এসে সোনার বাংলা গড়ে তুলবে বলেও তাঁর আশ্বাস৷ তিনি জানান, ১৯৬০ সালে বাংলার মাথাপিছু আয় মহারাষ্ট্রের চেয়ে ১০৫ গুণ বেশি ছিল৷ এখন সেটা কমে মহারাষ্ট্রের অর্ধেকের কম হয়ে গিয়েছে৷ এর জন্য দায়ী কে? প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ১৯৬০ সালে বাংলা ধনী রাজ্য হিসাবে প্রথম থেকে তৃতীয় স্থানের মধ্যে থাকত৷ আজ অনেক নীচে নেমে গিয়েছে৷ 

আরও পড়ুন- ‘ভাইপোর দাদাগিরি’ শেষ করে বাংলায় হবে পরিবর্তন, হুঙ্কার শাহের

১৯৫০ সালে চিকিৎসা সামগ্রীতে ৭০ শতাংশ উৎপাদন হত পশ্চিমবঙ্গে৷  এখন তা কমতে কমতে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে৷ বাংলার সমৃদ্ধ জুট শিল্প আজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ প্রতি ব্যক্তি আয়ের ক্ষেত্রে ৩২ রাজ্যের মধ্যে বাংলার স্থান ২২ নম্বরে৷ অমিত শাহ বলেন, ‘‘আমি জানি,  রাজ্য সরকার এই পরিসংখ্যানকে  চ্যালেঞ্জ করবে৷ কিন্তু আমিও চ্যালেঞ্জ করছি, কোনও একটি জায়গা ঠিক করুন, আমাদের যুব সভাপতি আপনাদের সঙ্গে বিতর্কে যোগ দেবে এবং এই তথ্য প্রমাণ করে দেবে৷’’ 

তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কোনও শিশু যখন জন্ম নেয়, তখন সে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জন্মায়৷ রাস্তা ঘাটের হালও বেহাল৷ গর্তে ভরা রাস্তা, না রাস্তার মধ্যে গর্ত, তা বোঝাই যায় না৷ বিদ্যুতের মান খারাপ৷ কেন্দ্রীয় যে সব প্রকল্পে টাকা দেওয়া হচ্ছে, সেই টাকা খরচই হচ্ছে না ৷ বিদেশি বিনিয়োগ ২০১১ সালেও ১ শতাংশ ছিল৷ এখনও তাই আছে৷ শিক্ষা থেকে চিকিৎসা সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে বাংলা৷ কিন্তু হিংসা, দুর্নীতি, পরিবারবাদ, তোলাবাজিতে ১ নম্বরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ৷ গরিব কৃষকদের বছরে ৬ হাজার টাকা দিচ্ছে মোদী সরকার৷ কিন্তু সেই টাকা পেতে দিচ্ছে না তৃণমূল৷ অনলাইনে ২৩ লক্ষ কৃষক আবেদন করেছেন, কিন্তু সরকার সই করতে নারাজ৷ স্বাস্থ্যবিমার টাকাও পাচ্ছে না বাংলার মানুষ৷ তোপ দেগে তিনি বলেন, ‘‘আপনি চিন্তা করবেন না৷ আগামী নির্বাচনে আপনার সরকার আর থাকবে না৷ আমি কোথা থেকে এসেছি, আমাকে কেমন দেখতে এ সব ভুলে আমাদের সমর্থন করুন৷’’ 

বহিরাগত প্রশ্নে অমিত শাহ বলেন, ‘‘দিদি যখন কংগ্রেসে ছিলেন, তখন ইন্দিরা গান্ধী বাংলায় আসলে কি তাঁকে বহিরাগত বলতেন? প্রণব দা বা নরসিংহ রাও এলে কি বলতেন? আপনারা কি এমন রাজ্য চান, যেখানে অন্য রাজ্যের মানুষ আসতে পারবে না? বাংলার মানুষ উদার মনের৷ অপপ্রচারে কান দেবেন না৷ 
    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *