‘সাইবেরিয়ায় বরফের নীচে মিলেছিল হদিশ, ২৪ হাজার বছর পর বেঁচে উঠল ‘ডেলয়েড রটিফার’

‘সাইবেরিয়ায় বরফের নীচে মিলেছিল হদিশ, ২৪ হাজার বছর পর বেঁচে উঠল ‘ডেলয়েড রটিফার’

কলকাতা: এই পৃথিবী এক আজব রহস্যে মোড়া৷ এর পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে কত সহস্র অজানা কাহিনী৷ পৃথিবীর কোনায় কোনায় এমন অনেক কিছুই লুকিয়ে রয়েছে, যা  আমাদের কাছে অজানা৷ এই সব অজানা রহস্যগুলি সামনে আসার পর স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্ববাসী। এমনই এক রহস্যের সন্ধান মিলেছিল মাটির নীচের আধার থেকে৷ মিলেছিল ‘ডেলয়েড রটিফার’ সন্ধান৷ যা নিয়ে পরবর্তীতে অনবরত গবেষণা চালিয়ে যান রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। তা থেকেই উঠে আসে বহু অজানা তথ্য৷ 

আরও পড়ুন- সন্তানকে বুকে আঁকড়ে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ক্যামেরাম্যান, জিম্বাবোয়ে টি ২০-তে অনন্য দৃশ্য

গবেষণায় জানা গিয়েছে, হিমাঙ্কের অনেক নীচের তাপমাত্রাতেও বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকতে পারেন ডেলয়েড রটিফার৷ তার জলন্ত প্রমাণও রয়েছে বিজ্ঞানীদের হাতে। রাশিয়ার সুদূর উত্তরে ইয়াকুতিয়া নামে একটি জায়গায় গবেষণা চালাচ্ছিলেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। সেখানে আলাজেয়া নদীর মাটি থেকে খোঁজ মেলে এক অদ্ভুত প্রাণীর। নাম ডেলয়েড রটিফার৷ 

এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এরা চরম পরিবেশের মধ্যেও বেঁচে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা ডেলয়েড রটিফারকে মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তাতে দেখা যায়, বরফের মধ্যে ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যেও টানা দশ বছর বেঁচেছিল ডেলয়েড রটিফার। তবে গবেষণা এখানেই থামাননি রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। কতখানি প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে এই প্রাণীটি বেঁচে থাকতে পারে তা পরখ করে দেখতে চাইছিলেন তাঁরা।

 

ডেলয়েড রটিফারের সন্ধান মেলে সাইবেরিয়ার বরফের পুরু আস্তরণের নীচে ১১ ফুট ভিতরে৷ এইরকম কঠিন পরিবেশেও বেঁচেছিল ডেলয়েডগুলি৷ সেখানে ডেলয়েড রটিফারের সঙ্গে নেমাটোড এবং রাউন্ডওয়ার্মও খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। ৩.৫ মিটার তলায় জীবন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ডেলয়েড রটিফারকে। পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেন, ডেলয়েড রটিফারের বয়স ২৩ হাজার ৯৬০ থেকে ২৪ হাজার ৪৮৫ বছরের মধ্যে। ডেলয়েড রটিফারের আকার খুবই ছোট৷ সেই নিরিখে তার দৈহিক বৈশিষ্ট্য অনেক বেশি জটিল।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ডেলয়েড রটিফার একটি বহুকোষী প্রাণী। এদের দেহের আকার কয়েক মাইক্রোমিটার মাত্র৷ কিন্তু, শরীরে রয়েছে মস্তিষ্ক, মুখমণ্ডল, পাকস্থলী, মাংসপেশি এমনকি জননতন্ত্রও উপস্থিত। সাধারণত, আর্দ্র পরিবেশে ডেলয়েড রটিফারের দেখা মেলে। জলজ পরিবেশ ছাড়াও তাদের আস্তানা রয়েছে গাছের ডালে৷ কোষের ভিতর কোনও ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে নিজেরাই তা সারিয়ে ফেলে ডেলয়েড রটিফার। সেই ক্ষমতা রয়েছে তাদের৷ কিন্তু কোন পদ্ধতিতে এই অসাধ্যসাধন? সেই উত্তর এখনও অজানা।

অযৌন জনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডেলয়েড রটিফার বংশবৃদ্ধি করে। বিজ্ঞানীরা ডেলয়েড রটিফারকে মহাকাশেও পাঠিয়েছেন। সেখানকার পরিবেশে তারা বেঁচে থাকতে পারে কি না, তা নিয়েও গবেষণা চালানো হচ্ছে৷ তবে, এই অণুজীবের অনেক বৈশিষ্ট্য এখনও রহস্যের জালে জড়িয়ে। তারা আর কী কেরামতি করতে পারে সেটাই এখন দেখার৷