যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেন ছাড়তে নারাজ! পোষ্য প্যান্থার-জাগুয়ারের জন্য বম্ব শেল্টার বানালেন ভারতীয় চিকিৎসক

যুদ্ধের মধ্যেও ইউক্রেন ছাড়তে নারাজ! পোষ্য প্যান্থার-জাগুয়ারের জন্য বম্ব শেল্টার বানালেন ভারতীয় চিকিৎসক

কিয়েভ: রাশিয়ার আক্রমণে টালমাটাল ইউক্রেন৷ লাগাতার বোমা বর্ষণে ছিন্নভিন্ন ডনবাস৷ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে সন্তর্পনে ইউক্রেন থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে সেদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের৷ সকলে যখন প্রাণ হাতে নিয়ে দেশে ফিরতে মরিয়া, তখন পোষ্যদের ফেলে ইউক্রেন ছাড়তে নারাজ ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক গিরি কুমার পাতিল৷ 

আরও পড়ুন- অন্তর্বাস পড়ে ভোট দিলেন অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দারা! কারণ শুনতেই চোখ কপালে বিশ্ববাসীর

গত ছয় বছর ধরে ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলের সেভেরোডোনেটস্ক শহরের বাসিন্দা এই চিকিৎসক৷ তাঁর কাছে রয়েছে দুটি ‘বিগ ক্যাট’৷ একটি ব্ল্যাক প্যান্থার এবং একটি জাগুয়ার৷ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে কোনও ভাবেই তিনি দুই পোষ্যকে একা ফেলে রেখে আসবেন না বলে কিয়েভে ভারতীয় দূতাবাসের দ্বারস্থ হন৷ কিন্তু সঠিক জবাব পাননি৷ দিন কয়েক আগে প্রকাশিত একটি বিবিসি প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ২০ মাস আগে কিয়েভের চিড়িয়াখানা থেকে বাঘ দুটিকে দত্তক নিয়েছিলেন পাটিল৷ সাধের পোষ্যদুটিকে ছেড়ে দেশে ফিরতে রাজি হননি চিকিৎসক৷ অশান্ত পরিস্থিতির মধ্যেও পাটিল প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাজারে গিয়েছেন৷ পোষ্যদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন৷ কারফিউর আগেই বেরিয়ে পড়তেন তিনি।

রুশ হামলা থেকে দুই পোষ্যকে বাঁচাতে তাদের জন্য ৮০ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করে আরামপ্রদ সেল্টার তৈরি করেন পাতিল৷ সংবাদমাধ্যমকে সে কথা নিজেই জানিয়েছিলেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত চিকিৎসক৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমি প্রায় ২০০ মিটার দীর্ঘ একটি বম্ব শেস্টার তৈরি করছি। এর জন্য প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। চিড়িয়াখানাগুলো বিগ ক্যাটদের রাখতে চায় না বলে আমার কাছে অন্য কোনও বিকল্প ছিল না। একবার এই শেল্টার তৈরি হয়ে গেলে আমাকে হিউম্যান করিডোর খোলার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।” বাড়ির পিছন দিকে এই শেল্টারটি তৈরি করেছেন পাতিল৷ এর জন্য নিজের সম্পত্তি এমনকী গাড়িটিও বেচে দেন তিনি৷ ছয় জন কর্মী দিন রাত খেটে এই শেল্টারটি তৈরি করেন৷  

এদিকে ছেলের চিন্তায় উদ্বেগে তাঁর বাবা-মা৷ বার বার ফোন করে তাঁকে বাড়ি ফেরার জন্য আকুতি মিনতি জানিয়েছেন৷ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পাটিল বলেছিলেন, ‘‘আমার বাবা-মা আমাকে ফোন করে বারবার বাড়িতে আসতে বলছেন, কিন্তু আমি পোষ্য দুটিকে ছেড়ে যেতে পারছি না।”

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে দুই মাস আটকে থাকার পর অবশেষে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গিরি কুমার পাতিল৷ স্থানীয় সেনারা তাঁকে অপরাধী বলে ভুল করেছিলেন৷ তাঁকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল৷ এর পরেই তিনি ভারতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতে পৌঁছানোর পরেই, যে কোনও মূল্যে তাঁর ‘সন্তানদের’ ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন পাতিল। 

তিনি বলেন, ‘‘ভারতে ফেরার পরেই আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করব এবং যে কোনও মূল্যে আমার বাচ্চাদের ফিরিয়ে আনার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’’ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যে নিজের রেস্তোরাঁ এবং বাড়ি হারাতে হয় গিরি কুমারকে। পরিস্থিতি এখন অত্যন্ত খারাপ। এখন পোষ্য বাঘ দুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি উদগ্রীব৷ তাঁর আশা, এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে ভারত সরকার৷ 

tiger

অন্ধ্রপ্রদেশের পশ্চিম গোদাবরী জেলার বাসিন্দা গিরিকুমার ২০০৭ সালে ডাক্তারি পরার জন্য ইউক্রেনে গিয়েছিলেন৷ সেভেরোডোনেস্কের একটি সরকারি হাসপাতালে কাজ করার পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে দেশে একজন অর্থোপেডিস্ট হিসেবে প্র্যাক্টিস করছিলেন৷ ৪০ বছরের এই চিকিৎসকের একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। যেখানে তিনি নিজেকে জাগুয়ার কুমার বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর জাগুয়ারের বয়স ২০ মাস ও প্যান্থারটি ৬ মাসের৷