কিয়েভ: প্রায় তিন মাস ধরে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউক্রেন। রুশ আগ্রাসানের থামার কোনও লক্ষণ নেই। ছবির মতো সাজানো একের পর এক শহর ধ্বংসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বাড়ি, সাজানো বাগান। তার মধ্যেও নিরস্ত্র ইউক্রেনের স্থানীয় বাসিন্দারা নতুন করে বাঁচার আশা খুঁজে নিতে চাইছেন। রুশ হামলায় ভেঙে পড়া বাড়িতেই বাস করার চেষ্টা করছেন। সঙ্গে রয়েছে হলুদ বসন্ত আর দেশের প্রতি অফুরান ভালোবাসা।
আরও পড়ুন- সমূহ বিপদ! পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে কুতুব মিনারের ৩ গুণ বড় এক গ্রহাণু
ইউক্রেনে এখন বসন্তের হাওয়া। মাঠে মাঠে প্রকৃতি তার ভালোবাসা উজার করে দিয়ে যেন ইউক্রেনের প্রতিটি মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। বসন্তের দ্বারে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনের মাঠে ফুলের সমারোহ। হলুদ ফুল। টিউলিপ থেকে ড্যাফোডিল কিংবা গোলাপ, সব ফুলের রঙ হলুদ। প্রকৃতি যেন এভাবেই ইউক্রেনের মানুষের নতুন করে জীবনে ফেরার লড়াইকে স্বাগত জানাচ্ছে। ইউক্রেনে হলুদ রঙের তাৎপর্য ব্যাপক। তাই তো মাঠ ভর্তি হলুদ ফুলের সমারোহ দেশের প্রতি ভালোবাসার পারদটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই তো ইউক্রেনের বাসিন্দারা বলছেন, ‘গ্লানি, কষ্ট ভুলিয়ে এই হলুদ বসন্ত মাতৃভূমিকে রক্ষা করার ডাক দিচ্ছে। এই হলুদ ফুল তো তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
ইউক্রেনের শিশুদের পাঠ্য পুস্তকে জাতীয় পতাকা নিয়ে একটা অধ্যায় রয়েছে। তখন থেকেই শিশুদের মনে দেশের প্রতি ভালোবাসার বীজ বপন হয়। মূলত কৃষি নির্ভর ইউক্রেনের পতাকার দুটো রঙ। হলুদ আর নীল। নীল দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের প্রতীক। আর হলুদ গম ক্ষেতের সারির প্রতীক। রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ এই দুটো রঙকেই নিজেদের হাতিয়ার করে নিয়েছেন। ইউক্রেনের গির্জায় শহিদ সেনাদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে, ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের হাতে একগোছা হলুদ টিউলিপ। ইউক্রেনের প্ল্যাটফর্মে জীবন যুদ্ধের নতুন লড়াইয়ে মানুষকে স্বাগত জানাতেও সাধারণ মানুষ বেছে নিয়েছে হলুদ টিউলিপ। সেই হলুদ টিউলিপ ইউক্রেনের ভেঙে পড়া অর্থনীতিকে সামান্য হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। বসন্তের হলুদ ফুলে কিছুটা হলেও সচল হচ্ছে ইউক্রেনের অর্থনীতি।
আরও পড়ুন- কৃষ্ণসাগরে ডুবেছে রুশ যুদ্ধজাহাজ! ইউক্রেনের হামলা না নিজেদের ‘ভুল’
ইভানা কিউজিভ। দেশ তখন হলুদ ফুলের মতো সুন্দর আর শান্ত ছিল। তখন একটা নামী সংস্থায় হিসাব রক্ষকের কাজ করতেন। আর অবসরে করতেন ফুলের ব্যবসা। হলুদ রঙের ড্যাফোডিলস আর ব্লুবেলস গোছাতে গোছাতে বলেন, ‘এই যুদ্ধ আমাদের থেকে সব কেড়ে নিয়েছে। গ্রাম, বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বহু মানুষ প্রাণ বাঁচাতে অন্য দেশে চলে গিয়েছেন। আমাদের রুটি রুজি একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই হলুদ ফুল নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে। গত কয়েকদিনে হলুদ ফুলের চাহিদা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। আমরা জোগান দিতে পারছি না।’