শাহবাজ মন্ত্রিসভায় গুরু দায়িত্বে পাঁচ নারী, জেনে নিন তাঁদের পরিচয়

শাহবাজ মন্ত্রিসভায় গুরু দায়িত্বে পাঁচ নারী, জেনে নিন তাঁদের পরিচয়

নয়াদিল্লি: রাতারাতি ইমরান খান সরকারের পতন ঘটিয়ে পাকিস্তানের রাজ্যপাট হাতে নিয়েছেন নয়া প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ৷ ক্ষমতায় আসার পর গত এক সপ্তাহ ধরে নিজের হাতে মন্ত্রিসভা সাজিয়েছেন তিনি৷  বুধবার মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন তাঁর ক্যাবিনেটের ৩৭ জন সদস্য৷ আর এখনেই লুকিয়ে ছিল চমক৷ দেখা যায়, তাঁর মন্ত্রিসভা  আলো করে রয়েছেন পাঁচ নারী।  তাঁরা হলেন- হিনা রব্বানি খার, শেরি রহমান, মরিয়ম ঔরঙ্গজেব, আয়েষা গউস পাশা ও শাজিয়া মারি৷ সদ্য প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্ত্রিসভায় নারীরা সেভাবে গুরুত্বই পাননি। এখানেই ইমরান সরকারের চেয়ে ব্যতিক্রমী শরিফ ক্যাবিনেট৷ 

আরও পড়ুন- মসজিদে প্রার্থনা চলাকালীন বিস্ফোরণ! আফগানিস্তানে মৃত্যু মিছিল

হিনা রব্বানী খার: সাল ২০১১৷ পাকিস্তান পায় তার প্রথম মহিলা মন্ত্রীকে৷ শুধু তাই নয়, সর্বকনিষ্ঠ বিদেশষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত হন হিনা রব্বানি খার৷ মাত্র ৩৪ বছর বয়সে গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি৷ 

১৯৭৭ সালের ১৯ নভেম্বর পাকিস্তানের মুজাফফরগড় জেলায় জন্ম হিনার৷ পড়াশোনা করেছেন আমেরিকা থেকে৷ ২০০২ সালে হিনা তাঁর বাবা গোলাম নূর রব্বানির রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসাবে রাজনীতিতে পদার্পন করেন৷ মুজাফফরগর থেকে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন। এরপর শওকত আজিজ সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হন। ২০০৮ সালে ফের জয়ী হন হিনা৷ সেবার তাঁকে কেন্দ্রীয় অর্থ ও শিল্প মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ ওই বছরই তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টিতে (পিপিপি) যোগদান করেন৷ এরপর জেনারেল পারভেজ মুশারফের মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি সকারের সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্ত্রীদের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন হিনা। ২০১১ সালে হিনাকে বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ দায়িত্ব গ্রহণের পরেই ভারতে আসেন তিনি৷ দ্য গার্ডিয়ানের উদ্ধৃতি অনুসারে, ‘‘খারের গ্ল্যামারাস টার্ন মিডিয়াকে মুগ্ধ করে৷’’

দুই বছরের মেয়াদে, সফল উদ্ভাবনী বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করে চলেছিলেন হিনা৷ ভারত এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিসাধনেও জোর দিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে আমেরিকার উপর নির্ভরতা হ্রাস করার পক্ষেও সওয়াল করেছিলেন পিপিপি নেত্রী৷

মরিয়ম ঔরঙ্গজেব- মরিয়ম ঔরঙ্গজেবকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ যে ভূমিকার সঙ্গে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত৷ পূর্ববর্তী পিএমএল-এন সরকারের মুখপত্র ছিলেন তিনি৷ মরিয়ম তাঁর বিশেষ কর্মোদ্যমের জন্য সারাবিশ্বে খ্যাত। ২০১৩ সালে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। মরিয়ম নওয়াজ শরিফের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। দু’জনে একসঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। মরিয়মের মা তাহিরা ঔরঙ্গজেবও ছিলেন পাক সাংসদ৷ 

ব্রিটেন থেকে উন্নয়ন ও পরিবেশ নীতিতে মাস্টার্স করার পরেই মারিয়ম তাঁর মা-বাবার মতো রাজনীতির দুনিয়ায় পা রাখেন৷ ২০১৩ সালে যোগ দেন পিএমএল-এন শিবিরে৷ সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন৷ ২০১৬ সালে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মন্ত্রিসভায় তথ্য, সম্প্রচার এবং ন্যাশনাল হেরিটেজ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

শেরি রহমান- আমেরিকায় পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত শেরি রহমানকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে। আমেরিকায় পাক দূত হিসেবে শেরির কর্মদক্ষতা  প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷  তিনি তথ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মিডিয়া সেন্সরশিপ নিয়ে তাঁর সরকারের সঙ্গে মতপার্থক্য তৈরির পর ২০১৯ সালে পদত্যাগ করেন। শেরির মা ছিলেন স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ 

১৯৬০ সালের ২১ ডিসেম্বর করাচিতে জন্ম শেরি রহমানের। সাংবাদিক হিসেবে ২০ বছর কাজ করার পর ২০০২ সালে রাজনীতির দুনিয়ায় আসেন৷ পিপিপির সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে ২০০৮ সালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের স্বাধীন মন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার আক্ষরিক অর্থেই বিকশিত হয়৷ 

শাজিয়া মারি- ২০১৩ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে জিতে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রবেশ করেছিলেন শাজিয়া মারি। তাঁর রাজনৈতিক শিকড় কিন্তু অনেক গভীরে৷ ঠাকুরদা আলি মহম্মদ মারির উত্তরসুরী তিনি৷  যিনি ভারত ভাগের আগে সিন্ধু পরিষদের সাংসদ ছিলেন। তাঁর বাবা আতা মহম্মদ মারি একজন এমএনএ এবং  সিন্ধু বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। তাঁর মা পারভিন আতা মারিও ছিলেন পাক সাংসদ৷

বেনজির ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম (বিআইএসপি) মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শাজিয়া মারিকে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন শাজিয়া। ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর করাচিতে জন্ম তাঁর৷ ২০০২ সালে সিন্ধুর প্রাদেশিক পরিষদে প্রথম নির্বাচিত হন শাজিয়া। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সিন্ধুর প্রাদেশিক বিদ্যুৎমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এই পিপিপি নেত্রী। 

আয়েষা গউস পাশা- ১৯৬২ সালের ৩ মার্চ লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন আয়েষা গউস পাশা। করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি পড়াশোনা৷ শাহবাজ সরকারের অর্থ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন)-এর প্রার্থী হিসেবে ২০১৩ সালে পঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের মে মাসে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রাদেশিক মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। তাঁকে পাঞ্জাবের অর্থমন্ত্রীও করা হয়। ২০১৮ সালে পঞ্জাবে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থেকে পিএমএল-এন-এর টিকিটে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন আয়েষা গউস পাশা।