নয়াদিল্লি: ঘড়িতে তখন সন্ধে সাতটা হবে৷ সরকারি গুদামে তখনও চলছে তাঁর জীবন সংগ্রাম৷ প্রতিদিন সকাল ৮টা বাজলেই শুরু হয়ে যায় এক অদম্য লড়াই৷ দিন ভর পিঠের উরর ভারী বস্তা চাপিয়ে বয়ে চলেন তিনি৷ প্রতি কুইন্টাল বস্তায় মেলে ১০ টাকা৷ বস্তার ভাড়ে নুইয়ে পড়ে পিঠ৷ যেন এখনই হাড়গুলো এখনই মড়মড় করে ভেঙে পড়বে৷ কিন্তু মনের জোড়ে আবার উঠে দাঁড়ান৷ রুজির টানে এগিয়ে চলে একদা চ্যাম্পিয়ন রেসলার সংগ্রাম৷ মনে এক রাশ আশা, আবার ফিরে পাবেন কাঁদা-মাটির দঙ্গল৷
আরও পড়ুন- কৃষক-বিদ্রোহ: মুখ পুড়িয়ে ২ রাজ্যে ধান কেনার নির্দেশ কেন্দ্রের
হরিয়ানার বাহাদুরগড়ে সরকারি গুদামে কাজ করা সংগ্রাম এক সময় বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করতেন৷ কিন্তু করোনা সংক্রমণ মাথাচাড়া দেওয়ার পর থেকেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে কুস্তির লড়াই৷ তাই পেটের টানে আপাতত কুলির কাজকেই বেছে নিয়েছেন তিনি৷ সংগ্রাম বলেন, ‘‘দঙ্গলে যোগ দিয়ে প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা উপার্জন করতাম আমি৷ কিন্তু এখন সব বন্ধ৷’’ পরিবারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তাঁর৷ এতদিনে জমানো পুঁজিও সব শেষ৷ সরকারি গুদামে কাজ করে মাস গেলে এখন প্রায় ৫ হাজার টাকা উপার্জন হয় তাঁর৷ এই টাকায় পাঁচজনের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁকে৷ শুধু সংগ্রাম নয়৷ সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সারা দেশের কুস্তিগিররা৷ জীবন ধারনের জন্য বেছে নিতে হয়েছে অন্য পেশা৷
পঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং নিজ রাজ্য হিমাচলপ্রদেশে দঙ্গল মাতানো দেশ রাজের অবস্থাও প্রায় এক৷ দেশ রাজ যিনি গোলু প্রধান নামেই অধিক পরিচিত, তিনি এখন মান্ডির শ্রমিক৷ দেশ রাজ বলেন, ‘‘মাসে এখন সাত—আট হাজার টাকা রোজগার করি৷ দঙ্গল তো অলিম্পিক কুস্তি নয় যে সরকারি সাহায্য পাওয়া যাবে।’’ আবার গুরিন্দর সিং ওরফে গুগ্গা এখন সবজি বিক্রেতা৷ তাঁর কথায়, দঙ্গল ছাড়া উপার্জনের অন্য কোনও পথ ছিল না আমার৷ আমি জানি না আর কতদিন এভাবে চলবে৷ দঙ্গল ছাড়া জীবন সত্যিই কঠিন হয়ে উঠেছে৷ ঠিকমতো খাওয়াও জোটে না…অনুশীলন তো বহু দূরের কথা। শুধু শশা ও পেঁপে খেয়েও দিন কেটেছে।’’
আরও পড়ুন- বাতিল হতে পারে বহু রেশন কার্ড! ৪ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না দিলে বিপত্তি!
দ্রোণাচার্য পুরষ্কার জয়ী মহাবীর প্রসাদ হরিয়ানার খ্যাতিমান কোচ। দঙ্গলের কুস্তিগিরদের মধ্যে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়। রাজ্যে অসংখ্য দঙ্গলের আয়োজন করেন তিনি৷ তিন দশক ধরে অনেকেরই হাতে খড়ি ঘটেছে তাঁর কাছে। তিনি বলেন, দঙ্গলে শুধু টাকাই উপার্জন হয় না। ঘি, দুধ, বাদাম, ফলের রস খেতে হয় কুস্তিগিরদের। একজন কুস্তিগিরের প্রতিদিনের খাবার খরচ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতন। খাবারের মধ্যে দুধ, বাদাম, কিসমিস, ফল–ফলাদি এসব নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু। কিন্তু এখন দু’বেলার রুটি জোগাড় করাই দায় হয়ে উঠেছে৷