কলকাতা: টানটান উত্তেজনা৷ রুদ্ধশ্বাস জয়৷ অবশেষে ৪-২ ব্যবধানে টাইব্রেকারে কাটল ৩৬ বছরের খরা৷ বিশ্বকাপ ঘরে তুলল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা৷ আরও একবার মেসির পায়ের জাদু দেখল ফুটবল বিশ্ব৷
আরও পড়ুন- বিশ্ব ‘ক্লাব কাপ’ নিয়ে বড় ঘোষণা ফিফার! টুর্নামেন্টে ডাক পাবে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল?
রবিবারের সন্ধ্যায় কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে লেখা হল এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস৷ প্রথমার্ধে খেলা ছিল কিছুটা একপেশে৷ ৪৫ মিনিটের মধ্যেই দুই গোল করে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা৷ দেখা যায়নি এমবাপের ম্যাজিকও৷ দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ফ্রান্সের খেলা ছিল ফিকে৷ কিন্তু খেলার মোড় বদলে যায় ৮০ মিনিটের মাথায়৷ পেনাল্টি থেকে গোল করেন এমবাপে৷ এর কয়েক মিনিটের মধ্যে আরও একটি গোল করেন তিনি৷ খেলা তখন ২-২৷ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খেলার মীমাংসা না হওয়ায় দেওয়া হয় অতিরিক্ত সময়৷ সেই সময়ের মধ্যে মেসি এবং এমবাপে দু’জনেই একটি করে গোল করেন৷ স্কোর দাঁড়ায় ৩-৩৷ অবশেষে পেনাল্টি শুটআউটে ৪-২ গোলে জিতে যায় অর্জেন্তিনা৷ বিশ্বকাপ ওঠে ফুটবলের জাদুকর লিওনেল মেসির হাতে৷
১৯৮৭ সালের ২৪ জুন, মধ্য আর্জেন্টিনায় জন্ম ফুটবল সম্রাট লিওনেল মেসির৷ তাঁর বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ছিলেন আর্জেন্টিনার রোজারিওতে স্টিল কারখানার কর্মী৷ মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন পার্ট-টাইম ক্লিনার৷ যদিও তাঁর পৈতৃক ভিটে ছিল ইতালির আকোনা শহরে। পরে তাঁর এক পূর্বপুরুষ অ্যাঞ্জেলো মেসি ১৮৮৩ সালে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন। মেসির দুই দাদা এবং একটি ছোট বোন রয়েছেন। ছোট বেলায় গ্রোথ হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন মেসি৷ তাঁর চিকিৎসার ভার বহন করার ক্ষমতা ছিল না পরিবারের৷ সেই সময় বার্সেলোনা তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন৷
মেসির যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন তিনি৷ কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে। ছোট থেকেই লিওর ধ্যানজ্ঞান ছিল ফুটবল৷ কিন্তু মাত্র ১১ বছর বয়সে গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে তাঁর। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি আগ্রহ দেখালেও সেই সময় তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। মেসির চিকিৎসার খরচ ছিল মাসে ৯০০ মার্কিন ডলার। সেই সময় মেসির ভবিষ্যৎ খানিক অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। উচ্চতা কম থাকায় নানা মন্তব্যও শুনতে হয়েছে তাঁকে৷ কিংবদন্তী এই ফুটবলারের ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চিত, ঠিক সেই সময় বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ মেসির পাশে এসে দাঁড়ান৷ মেসির প্রতিভা তাঁর নজর এড়ায়নি৷ মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কার্লেস।
মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার চুক্তি নিয়েও একটি গল্প রয়েছে৷ জানা যায়, লিওর সঙ্গে চুক্তির সময় হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তাঁর বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে মেসি বার্সেলোনার যুব অ্যাকাডেমি লা মাসিয়াতে যোগ দিয়ে নতুন উদ্দীপনায় আবার তার খেলোয়াড় জীবন শুরু করেন। এক সময় যে তারকার খেলোড়ার জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল, সেই মেসির হাতেই উঠল ফুটবল বিশ্বকাপ৷ আবেগে লেখা হল কাতার বিশ্বকাপ৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>