Aajbikel

প্রয়াত ফুটবল সম্রাট, তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী বিশ্ব ফুটবলের প্রথম কিংবদন্তি পেলে

 | 
পেলে

ব্রাসিলিয়া: প্রয়াত ফুটবল সম্রাট পেলে। থামল বিশ্ব ফুটবলের এই মহাতারকার লড়াই। মৃত্যুকালে  বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। পেলেই বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার, যিনি তিন বার বিশ্বকাপ জয় করেছিলেন৷ ২০২২-এ সেই বিশ্বকাপের পরেই প্রয়াত হলেন কিংবদন্তী।  ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি৷ 

 

 

 

আরও পড়ুন- ভারতে এবার অলিম্পিক্সের আসর! নীল নকশা তৈরি, জানালেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী

 

দিন কয়েক আগেই পেলের কন্যা জানিয়েছিলেন, এবারের বড়দিন হাসপাতালেই কাটাবেন তাঁর। অপেক্ষা ছিল নতুন বছরের। কিন্তু ‘নতুন সূর্য’ আর দেখা হল না ফুটবল সম্রাটের। ২০২১ সাল থেকেই অন্ত্রের ক্যানসারে আক্রান্ত হন কিংবদন্তী ব্রাজিলিয় ফুটবলার। কাতার বিশ্বকাপ চলার সময় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে৷ গত ২৯ নভেম্বর সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ফুটবল সম্রাটকে। সেই সময়ে অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, হয়তো বিশ্বকাপ চলার মাঝেই আসবে হৃদয়বিদারক সংবাদটা। 


গত ২২ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই তাঁর ক্যানসারের প্রকোপ বেড়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সেই থেকে হাসপাতালেই ছিলেন কিংবদন্তী৷ কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন পেলে৷ বড়দিনে বিছানায় অসুস্থ বাবাকে জড়িয়ে ধরে ছবি পোস্ট করেছিলেন তাঁর কন্যা কেলি। গত শনিবার হাসপাতালে পৌঁছন পেলে-পুত্র এডিসনও। গত কয়েকদিন পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালেই কাটিয়েছেন৷ তাঁর সারা শরীর ফুলে উঠেছিল। কেমোথেরাপিও কাজ করছিল না। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়াও করতে পারছিলেন না ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার। কাউকে চিনতেও পারছিলেন না৷ যন্ত্রণা উপশমে তাঁকে রাখা হয়েছিল প্যালিয়েটিভ কেয়ারে। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। চিরনিদ্রার দেশে চলে গেলেন ফুটবল সম্রাট৷ অবসান হল একটা যুগের৷

ব্রাজিলের মিনাস জেরাইসে জন্ম হয়েছিল পেলের। তাঁর বাবাও ফুটবল খেলতেন৷ তিনি ছিলেন ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের ফুটবলার ডোনডিনহো। বাবা ফুটবল খেললেও, পেলের ছোটবেলা কেটেছিল চরম দারিদ্রতার মধ্যেই৷ সেই সময় ফুটবলাররা বিশেষ বেতন পেতেন না। তবে বাবাকে দেখে ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল তাঁর৷ পড়াশোনা বিশেষ করেননি। বরং অভাব অনটনের সংসারে পেট চালাতে চায়ের দোকানে কাজ করতে হয় তাঁকে৷ যা পেতেন তা দিয়েই মেটাতেন হাতখরচ৷ বাকি সময় রাস্তাতেই খেলে বেরাতেন পেলে। তবে চামড়ার ফুটবল দিয়ে নয়, এ ‘ফুটবল’ ছিল অন্য রকম। মোজার ভিতর কাগজ পুরে সেটাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে, বানানো হত বল৷ তারপর সেটা নিয়েই চলত লাথালাথি৷ 


একটু বড় হওয়ার পর আসল ফুটবল খেলার সুযোগ আসে তাঁর কাছে৷ স্থানীয় বাউরু এলাকার বিভিন্ন অপেশাদার লিগে খেপ খেলে কাটে তাঁর ছেলেবেলা। গোল করা এবং বল ড্রিবলিং করার ক্ষমতা তাঁকে দিয়েছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর৷ তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখন ব্রাজিলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল আরও একটি খেলা, ‘ফুটসল’ (ইন্ডোর ফুটবল)। সেই খেলাও চুটিয়ে খেলেছিলেন ফুটবল সম্রাট। ছোট জায়গায় বল কাটানোর ক্ষমতা এবং দুরূহ কোণ থেকে গোল করার পিছনে যে ‘ফুটসল’ খেলার অভিজ্ঞতা কাজ করেছিল, সে কথা পরবর্তীতে স্বীকার করে নিয়েছিলেন ফুটবল সম্রাট। আর ফুটসল খেলার সময়েই তিনি ওয়ালদেমার দে ব্রিটোর নজরে পড়ে যান৷ 

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব স্যান্টোস থেকে শুরু হয়েছিল তাঁর ফুটবল কেরিয়ার৷ স্যান্টোসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসাবে লেখা রয়েছে পেলের নাম। দীর্ঘ ১৯ বছর স্যান্টোসে খেলার পর কসমসে যোগ দিয়েছিলেন পেলে৷ সেই ক্লাবের হয়েই কলকাতায় এসেছিলেন ফুটবল সম্রাট। ইডেন গার্ডেন্সে খেলেছিলেন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে৷ কাদাজল ভরা মাঠেও পেলের যে পায়ের জাদু দেখিয়েছিলেন, তা ভুলতে পারেননি ওই ম্যাচের দর্শকেরা।


 
হাতের বাইরে চলে যাওয়া ম্যাচও পায়ের জাদুতে জিতিয়ে দিতেন ফুটবল সম্রাট। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তাঁর। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে গোল করেন তিনি৷ ১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু হয় তাঁর৷ জীবনের প্রথম বিশ্বকাপেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর জাত। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পেলে। তাও আবার সব থেকে কম বয়সে। ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে জোড়া গোল তাঁকে ব্রাজিলের অন্যতম সেরা ফুটবলারের তকমা এনে দেয়। সেটা ছিল শুরু৷ এর পর বর্ণময় ফুটবল কেরিয়ারে তিন-তিনবার বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। 


 ১৯৬২ বিশ্বকাপে সেরা ফুটবলার হিসেবেই নেমেছিলেন পেলে। ততদিনে দলে অবশ্য গ্যারিঞ্চা, গিলমারের মতো তারকা ফুটবলারও দাগ কাটতে শুরু করেছেন। পূর্বতন চেকোশ্লোভাকিয়ার বিরুদ্ধে একটি শট মারতে গিয়ে চোট পান পেলে এবং বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যান। পরে গ্যারিঞ্চার সৌজন্যে ১৯৬২-র বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ব্রাজিল।

১৯৬৬ বিশ্বকাপ অবশ্য ভালো যায়নি ব্রাজিলের কাছে। প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেয় সেলেকাওরা। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ছিল পেলের জীবনে শেষ এবং অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ। ফাইনালে ইটালিকে ৪-১ ব্যবধানে হারায় ব্রাজিল। 


এক সময় রিয়াল মাদ্রিদ,  ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড, জুভেন্টাস,  ইন্টার মিলান-সহ বিশ্বের নামীদামি ক্লাবগুলি টাকার থলি হাতে বসে থাকতেন পেলেকে সই করানোর জন্য৷ কিন্তু ব্রাজিল ছেড়ে কোথাও খেলতে যাননি ফুটবল সম্রাট৷ ফুটবল ছাড়ার পর ইউনেস্কোর ‘গুডউইল অ্যাম্বাসাডর’ হয়েছিল পেলে। সেই সময় বিভিন্ন দেশে গিয়ে ফুটবলের প্রসারে অনেক কাজ করেছেন।


 

Around The Web

Trending News

You May like