মাথার উপর গনগনে লাল সূর্য, প্রাণপণে সে দিকেই কি ছুটছে পৃথিবী? কেমন হবে শেষের সে দিন?
কলকাতা: তবে কি শেষের শুরু? প্রকৃতির নিয়মে একদিন কালের গর্ভে সমাহিত হবে পৃথিবী? সম্প্রতি মহাকাশে নতুন এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ যা এখন বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। মনে করা হচ্ছে এই গ্রহের পরিণতিই বুঝিয়ে দেবে কী ভাবে এক দিন মহাজাগতিক নিয়মে ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী।
আরও পড়ুন- চার দশক সফর শেষে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে ‘মৃত’ উপগ্রহ! ঘটবে সংঘাত?
এই গ্রহের গোটা আকাশ জুড়ে সূর্য। দিন-রাতের পার্থক্য নেই বললেই চলে। ক্ষীণ হতে হতে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে রাতের আধার। এই গ্রহের পরিস্থিতি দেখে প্রশ্ন জেগেছে, তবে কি একই ভাবে শেষের পথে এগিয়ে যাবে পৃথিবী?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মহাকাশে খোঁজ পাওয়া এই নতুন গ্রহটির নাম কেপলার-১৬৫৮বি। ২০১৯ সালে কেপলার টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রথম এই গ্রহের হদিশ পান বিজ্ঞানীরা। মহাকাশে কেপলার-১৬৫৮বি-এর শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। দ্রুত গতিতে নক্ষত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে সে। আগামী কয়েক হাজার বছরের মধ্যে তা নক্ষত্রে বিলীন হয়ে যাবে। মহাকাশে আর থাকবে না এর অস্তিত্ব। তীব্র গতিতে মৃত্যুর দিকে দু’হাত বাড়িয়ে ছুটে চলেছে কেপলার-১৬৫৮বি। তার মৃত্যুপথের ছবি ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের টেলিস্কোপে।
পৃথিবী থেকে গ্রহটির দূরত্ব প্রায় ২ হাজার ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে। কেপলার-১৬৫৮ এর সঙ্গে সৌরজগতের গুরুগ্রহের সাযুজ্য রয়েছে। শুধু দেখার দিক থেকেই নয়, কেপলার-১৬৫৮বি প্রায় বৃহস্পতির আকারেরই সমান। তাই একে ‘হট জুপিটার’ বা ‘উষ্ণ বৃহস্পতি’ও বলা হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা হিসাব কষে বলছেন, সূর্য থেকে তার নিকটতম গ্রহ বুধের যা দূরত্ব, কেপলার-১৬৫৮বি এবং তার সূর্যের মধ্যেকার দূরত্ব তার চেয়ে ৮ গুণ কম। তার নক্ষত্রকে চিন দিনের কম সময়ের মধ্যে প্রদক্ষিণ করে ফেলে কেপলার-১৬৫৮বি৷
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কেপলার-১৬৫৮বি-র সঙ্গে তার নক্ষত্রের দূরত্বই ক্রমশ কমে আসছে। নিজের নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে বছরে প্রায় ১৩১ মিলিসেকেন্ড করে কম সময় নিচ্ছে কেপলার-১৬৫৮বি। ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটারস’ নামক বিজ্ঞান বিষয়ক একটি পত্রিকায় কেপলার-১৬৫৮বি নিয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধে বলা হয়েছে, হট জুপিটার যে গতিতে নক্ষত্রের দিকে এগিয়ে চলেছে, তাতে ৩০ লক্ষ বছরের কম সময়ের মধ্যে তা নক্ষত্রে বিলীন হয়ে যাবে।
একই ভাবে হয়তো মহাজাগতিক নিয়মে পৃথিবীর শেষ ঘনিয়ে আসবে! কিন্তু কোন নিয়মে? এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। তবে একাধিক সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন একসময় সূর্যের সঙ্গে পৃথিবীর দূরত্ব কমে আসবে৷ কেপলার-১৬৫৮বি-এর মতোই হয়তো পরিণতি হবে পৃথিবীর।
কেমন হবে শেষের সেই দিন? বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, পৃথিবীর আগে সূর্যে বিলীন হবে বুধ এবং শুক্র৷ তার পর আসবে নীল গ্রহের পালা৷ ধীরে ধীরে সূর্যের অনেক কাছে চলে যাবে পৃথিবী। এই দূরত্ব যত কমবে, ততই পৃথিবীর আকাশে বড় হতে থাকবে সূর্য। আকাশে তার রং হবে গনগনে আগুনের মতো লাল। সেই তাপে বিলীন হবে পৃথিবীর প্রাণ৷ কিন্তু এই বিপদ ঘনাবে কবে? হাভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের গবেষক শ্রেয়স ভিসপ্রগাদার কথায়, ‘‘বিপদ সম্মুখে নয়৷ আজ থেকে হয়তো ৫০০ কোটি বছর পর ঘনিয়ে আসবে পৃথিবীর শেষের দিন৷ যখন পৃথিবীর আকাশের দখল নেবে রক্ত রাঙা সূর্য৷