কলকাতা: ইংল্যান্ডের শিল্প তালুকে আচমকাই গোলাগুলির শব্দ৷ বেশ ক’দিন ধরেই এমনটা হচ্ছে৷ না না, কোনও দুষ্কৃতীহানা নয়৷ এই গুলি চালাচ্ছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা! অবাক হচ্ছেন? তাহলে বলি, এ গুলি বন্দুকের নয়৷ বরং অপ্রচলিত উপায়ে দূষণহীন জ্বালানি তৈরি করাই এর লক্ষ্য।
আরও পড়ুন- এ যে অবিকল মানুষ! চোখ মেরে, মুচকি হেসে যন্ত্রমানবীর প্রশ্ন, ‘আমি বাস্তব হলে কেমন হয়?’
‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’ নামে অক্সফোর্ডের এক সংস্থার দাবি, জ্বালানি সমস্যা দূর করতে তাঁদের এই গবেষণা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে চলেছে৷ যা থেকে ভবিষ্যতে অপ্রচলিত জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে৷ কমতে পারে পরিবেশ দূষণের মাত্রা।
কিন্তু কী ভাবে মিটবে জ্বালানির চিরাচরিত হাহাকার? জানা গিয়েছে, অপ্রচলিত জ্বালানি উৎপন্ন করতে একটি ৭০ ফুট লম্বা যন্ত্র তৈরি করেছেন নিউক্লিয়ার ফিউশন সংস্থার বিজ্ঞানীরা। যা দেখতে অবিকল পিস্তলের মতো৷ এর নাম ‘বিগ ফ্লেন্ডলি গান’৷ ওই পিস্তলটি অবশ্য ‘প্রোটোটাইপ’। ভবিষ্যতে অফুরন্ত জ্বালানির সমস্যা মেটাতে এটিই তাঁদের প্রধান অস্ত্র বলে দাবি ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’-এর৷
অক্সফোর্ডের ওই সংস্থার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে গবেষণাগারে অপ্রচলিত জ্বালানি তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন তাঁরা৷ এর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এই বিশেষ পিস্তল৷ যার নকশা তৈরি করতে সময় লেগেছে ১০ মাস৷ খরচ হয়েছে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে দশ কোটি টাকা। এহেন ‘অস্ত্র’ নাকি বিশ্বের আর কোথাও নেই।
‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন’ জানাচ্ছে, ৭২ ফুট লম্বা ইস্পাতের তৈরি ওই পিস্তল থেকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭ কিলোমিটার গতিবেগে গুলি ছোড়া যায়৷ যার মাধ্যমে অফুরন্ত দূষণহীন জ্বালানি উৎপন্ন করা সম্ভব হবে৷
বিজ্ঞানীদের দাবি, তাঁরা পারমাণবিক ফিউশন তৈরির খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছেন৷ এর জন্য সংস্থার পরীক্ষাগারে গুলি ছোড়াছুড়ি করতে হবে তাঁদের৷ এতেই নাকি আগামী দিন নতুন জ্বালানি উপহার দিতে পারবে তারা৷
কিন্তু কী ভাবে কাজ করে এই পিস্তলটি? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই পিস্তল থেকে একটি গুলি ছুড়তে প্রায় ৩ কেজি গানপাউডার প্রয়োজন। এর জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পিস্টন কাজে লাগে।
একটি ব্যারেলে রাখা হয় হাইড্রোজেন গ্যাস৷ তার উপর চাপ সৃষ্টি করে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে যায় ওই পিস্টনটি। এর পর সেটি পৌঁছে যায় শঙ্কু আকৃতির একটি খোপে৷ এর পর একটি ধাতব ঢাকনার মধ্যে গিয়ে তা বিস্ফোরণ ঘটায়। তার আগে ওই খোপের গ্যাসকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় ভেঙে দেয়। ভ্যাকুয়াম চেম্বার থেকে বেরনোর পর প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৭ কিলোমিটার গতিতে ছুটে গিয়ে লক্ষ্যভেদ করে এই পিস্তলের গুলি। লক্ষ্যবস্তুটি অবশ্য নিউক্লিয়ার ফিউশন। এতে গুলি আঘাত করার পরই ফিউশনের নিউক্লিয়াসগুলি একসঙ্গে ফিউজ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এটি একটি ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত।
পৃথিবীকে আলোকিত করতে এ ভাবেই শক্তি উৎপাদন করে আমদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্য। প্রায় একশো বছর ধরে সেই কায়দাতেই শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। যাতে কৃত্রিম উপায়ে জ্বালানি উৎপন্ন করা যায়।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>