কলকাতা: বিহারের ভোটে এবার তারুণ্যের ঝড়৷ বেকারত্ব ইস্যুকে মূলত হাতিয়ার করেই ভোট ময়দানে নেমেছিলেন তেজস্বী যাদব৷ মহাগাটবন্ধন জোট ক্ষমতায় এলে ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ছিলেন তাঁরা৷ তেজস্বীর এই প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট হয়েছে বিহারের যুব সমাজ৷ যাঁরা বেকারত্বের জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে রয়েছে৷ কুর্সি বাঁচাতে তাই ১৬ লক্ষ সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসেন নীতীশ কুমার৷ কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে মিলবে এই চাকরি, সেই সদুত্তর মেলেনি৷ বছর ঘুরলে ভোট বাংলায়৷ এ রাজ্যের হালও প্রায় এক৷ বিরোধীরা বেকারত্বের ইস্যুতে বারবার বিদ্ধ করেছে শাসক দলকে৷ ফলে এই বার বিধানসভা নির্বাচনে মিলবে এক অন্য ঝাঁঝ৷
আরও পড়ুন- কীভাবে হবে ছট পুজো? হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের ভূমিকা
ইটিভি-ভারতের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্যে বিরোধী দলের অভিযোগ, গত দশ বছরে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পর্যায়ক্রমে কমেছে৷ বেড়েছে বেকারত্ব৷ খরচে লাগাম টানতে গিয়ে প্রায় বন্ধ স্থায়ী নিয়োগ৷ ব্যবসার হালও তথৈবচ৷ বিনিয়োগ কোথায়? বরং যে শিল্পগুলি চালু ছিল, সেগুলি হয় বন্ধ, নয়তো ভিন রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে৷ যা আগামী নির্বাচনে সরকারের বিরুদ্ধে বড় ইস্যু হতে চলেছে৷ ইটিভি ভারতকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই৷ ওভার ড্রাফটিংয়ের ফলে দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার। সরকারি চাকরিতে স্থায়ী পদগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে। স্থায়ী নিয়োগ প্রায় বন্ধ। বদলে চুক্তি ভিত্তিক কর্মী নিয়োগের পন্থা নিয়ে দলীয় কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগামী তিন বছরে নতুন করে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্র ধার্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ অতীতের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে তিনি ব্যর্থ৷ চাকরি দিতে পারেননি বেকার যুবকদের৷ ফলে ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিশেষ সুবিধা করতে পারবে না তৃণমূল কংগ্রেস৷” অর্থাৎ বিহারের মতো এরাজ্যেও বেকারত্ব যে একটা বড় ইস্যু হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য৷
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে একজোট হয়ে লড়বে কংগ্রেস-বামফ্রন্ট৷ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস জোটের স্লোগানও হবে এই বেকারত্ব৷ অধীরবাবুর কথায়, বাম-কংগ্রেস জোট শক্তি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে নতুন করে বিনিয়োগের রাস্তা খুলে যাবে৷ তৈরি হবে কর্মসংস্থান৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে বেকারত্বের হার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে৷ তৃণমূল সরকারের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছে না রাজ্যের মানুষ৷ আগামী বিধানসভা নির্বাচনে নতুন জোট সরকার ক্ষমতায় এলে সবার আগে কর্মসংস্থান এবং শিল্প বিনিয়োগের উপরেই নজর দেওয়া হবে ৷ ’’
আরও পড়ুন- দেখা হবে রাজনীতির ময়দানে! নন্দীগ্রামের শহিদ মঞ্চে শুভেন্দুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রাজ্যে ফের পালা বদলের আশায় রয়েছেন সিপিআইএম-এর পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসুও৷ তাঁর কথায়, ‘‘বামফ্রন্টের জমানায় প্রতিবছর নিয়মিত ভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হত৷ প্রতি বছর শিক্ষক নিয়োগ হত। নিয়মিত পরীক্ষার মধ্যমে সরকারি চাকরিতেও স্থায়ী নিয়োগ করা হত৷ কিন্তু তৃণমূল জমানায় তা প্রায় বন্ধ৷ প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ মমতা সরকার। রাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ শূন্যপদ তৈরি হয়েছে৷ নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে নিশ্চিতভাবে স্থায়ী কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে৷’’
তবে বিরোধীদের অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর বক্তব্য, মিথ্যে প্রচার করে রাজ্যের মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছে বিরোধীরা৷ একথা সত্যি যে গত কয়েক বছর শিল্পক্ষেত্রে প্রত্যাশামতো বড় বিনিয়োগ আসেনি। সেটা শুধু বাংলায় নয়, কোনও রাজ্যেই আসেনি। তবে গত কয়েক বছর ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে বংলায় যে রেকর্ড পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়েছে, তা অন্য কোনও রাজ্যে হয়নি৷ এই বিষয়ে মিলেছে খোদ ভারত সরকারের স্বীকৃতি৷