বন্যা বৃত্তান্ত: তখন সিপিএমের দোষে যদি ‘ম্যান মেড’ বন্যা, তবে এখন কার দোষে?

বন্যা বৃত্তান্ত: তখন সিপিএমের দোষে যদি ‘ম্যান মেড’ বন্যা, তবে এখন কার দোষে?

পর্ব ২

দেবময় ঘোষ: রাজনীতিতে ‘ইস্যু’ লাগে। ২০০০ সালে থেকে বন্যার পর (তৎকালীন বিরোধী নেত্রী) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে আসছেন , ‘ম্যানমেড ফ্লাড’। বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। বছর বছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বলেন। কিন্তু, বিরোধী নেত্রী মমতা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতার মধ্যে একটি তফাৎ আছে। তৎকালে, রাজ্যের তদানীন্তন শাসক বামেদের দিকেই আঙুল তুলেছিলেন তিনি। ২০০১-এর বিধানসভা নির্বাচনে অন্যতম বড় ইস্যু হয়ে উঠেছিল ‘ম্যানমেড’ বন্যার অভিযোগ। কথায় কথায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পদত্যাগ দাবি করতেন মমতা।

বামপন্থীদের দাবি, চিত্র বদলেছে। প্রেক্ষাপট বদলেছে। এখন দামোদর ভ্যালি করপোরেশন’কে (ডিভিসি) দোষ দেন মমতা। দোষ দেন প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ডকে। বাম জমানাতেও প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আসা জলেই বাংলা ভেসেছিল। অনেক ক্ষেত্রে, বাংলায় খুব বেশি বৃষ্টি হয়নি ঠিকই, কিন্তু ঝাড়খণ্ডে প্রবল বর্ষণের জেরে বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়তে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েছিলেন। ফলে যা হয় তাই হয়েছে। বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা বানভাসি হয়েছিল।

ঝাড়খণ্ডে এবং ভুটানে বৃষ্টি বেশি হলে তার প্রভাব বাংলায় চিরকালই পড়ে। কারণ ঝাড়খণ্ড এবং ভুটান থেকে আসা জল বাংলা হয়েই সমুদ্রের দিকে যায়। কিন্তু ২০০০ সালে সেই প্রাকৃতিক কারণটিকে গুরুত্ব দিতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, ‘ম্যানমেড ফ্লাড’ কথাটিতে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ট পাওয়া যায় হয়ত। তার উপর রাজ্য সরকারের দিকে দোষ চাপিয়ে দিতে পারলে তো কোনও কথাই নেই। জলমগ্ন পীড়িত মানুষ মাথার উপর রাজ্য সরকারকে দেখে। তার ভালমন্দ বিচার করে। ডিভিসির দোষ-গুণ বিচার করার সময় নেই তাদের।

বুদ্ধবাবুর সরকারের উপর দায় চাপিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু রাজ্য সরকারের উপর এই দায় চাপান কতটা যুক্তি সংগত তা বিচার করে দেখেননি। এখানে বামপন্থীদের প্রশ্ন, এ বার তাঁর নিজের জমানায় যখন পাশের রাজ্যের বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়া হচ্ছে এবং তার জেরে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে, তখন দায় নিজের মাথায় কেন নেবেন না মমতা? কেন ডিভিসি’র দিকে আঙুল তুলবেন?

পর্ব ১ : বন্যা বৃত্তান্ত: কোনটা ম্যান মেড? বন্যা, নাকি বন্যার ঘোলা জলে কলুষিত রাজনীতি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − seven =