বন্যা বৃত্তান্ত: ডিভিসির কমিশনে বাংলার প্রতিনিধি, তবুও কেন জল ছাড়ার খবর পায় না রাজ্য?

বন্যা বৃত্তান্ত: ডিভিসির কমিশনে বাংলার প্রতিনিধি, তবুও কেন জল ছাড়ার খবর পায় না রাজ্য?

 

শেষ পর্ব

দেবময় ঘোষ: ঝাড়খণ্ডের কোন বাঁধ থেকে কখন কত জল ছাড়া হবে, তা ঠিক করে ‘দামোদর ভ্যালি রিভার রেগুলেটরি কমিশন’। ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরাও তাতে রয়েছেন। সবাইকে জানিয়েই পদক্ষেপ করা হয়। কতটা জল ছাড়া হবে, কোন পথ দিয়ে সেই জল যাবে, কোন কোন এলাকা প্রভাবিত হতে পারে, সবই আগে থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার আগে থেকে তা খবর কেন পায়না, তাই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।

এবছর মমতার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ডিভিসি। ৬ অগাস্ট ‘ডাউন টু আর্থ’ –  পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে – “Too much rain, dams & South Bengal floods: Is it really man-made as Mamata Banerjee complains” ডিভিসির মুখ্য বাস্তুকর সত্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, এমন নয় যে এবছরের মত জল অন্য কোনও বছর ছাড়া হয়নি। আর নদীর পলি পরিষ্কার করা ডিভিসির কাজ নয়। জল ছাড়ার আগে রাজ্য সরকারকে জানান হয়নি, এমন দাবিও উড়িয়ে দেন সত্তব্রতবাবু। জানান, বিশেষজ্ঞ কমিটিতে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি আছেন। জল ছাড়ার ৬ ঘন্টা আগে What’s App এর মাধ্যমে ‘Flood Warning’ জানিয়ে দেওয়া হয়। আবার ঠিক ৬ ঘন্টা পরে জল ছাড়ার ঠিক পূর্বে ফের ‘Release Intemation’ জারি করা হয়। কোন কোন জায়গা জলমগ্ন হতে পারে তা ওয়েবসাইটেও নির্দেশিত করা হয়।

প্রশ্ন আসতে পারে, ডিভিসির জল ছাড়ার প্রয়োজন হয় কেন? তাদের কী কোনও ভূমিকা নেই? কল্যাণ রুদ্র (সূত্র – ডয়চে ভেলে ৪.৮.২০১৭ / বন্যা অনেকাংশে ম্যানমেড। তাই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না) জানিয়েছিলেন, “মাইথন, পাঞ্চেৎ-সহ অন্যান্য জলাধারে তিন স্তরে জল সঞ্চিত থাকে৷ একেবারে নীচের স্তরে যেখানে পলি জমে থাকে৷ এটা খুব একটা কাজে আসে না৷ তার ওপরের স্তরটিকে বলে ‘লাইভ স্টোরেজ’৷ এখান থেকে সেচের জল দেওয়া হয়৷ তার উপরের স্তরটিকে বলে ‘ফ্লাড কুশন’৷ এই অংশটি খালি রাখার কথা৷ কিন্তু অনেকক্ষেত্রে প্রবল বৃষ্টির জেরে এই স্তরটি পূর্ণ হয়েছিল৷ তাই অতিবৃষ্টির পর জল না ছেড়ে ডিভিসির আর কোনো উপায় থাকে না৷ এর ফলে শুধু যে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাই নয়, উজানের দিকে ঝাড়খণ্ডের গ্রামগুলি ভেসে যাবে৷ তাই ডিভিসির সীমাবদ্ধতা আমাদের বোঝা উচিত৷”

কল্যানবাবুর কথায়, “ডিভিসির দায় কিছুটা তো আছেই৷ ডিভিসি একটা কাজ করতে পারত, যখন আবহাওয়া দপ্তর ঘোষণা করছে — বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ ঘনীভূত হচ্ছে, অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে৷ তখন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ আগেই কিছুটা জল ছেড়ে দিতে পারত, তাহলে বিপর্যয়ের মাত্রা কিছুটা কমানো যেত৷ এক্ষেত্রে ডিভিসিকে একটা ঝুঁকি নিতেই হয়৷ তারা ভাবে, কৃষির জন্য জল ধরে রাখা দরকার৷ বৃষ্টি কম হলে জলাধার পূর্ণ থাকলেও সমস্যা হয় না৷ তখন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ বাজি জিতে যান৷ কিন্তু বৃষ্টি বেশি হলেই বিপর্যয়৷ তাই ডিভিসিকে আংশিকভাবে দায়ী বলাই চলে৷”

তবে প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। যার উত্তর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি দেবেন কিনা বলা কঠিন। ম্যান মেড বন্যায় বুদ্ধবাবুর সরকার কী ভাবে দায়ী হয়েছিল। যদি তাই হয় তবে, বর্তমান তার মুখমন্ত্রীত্বে চলা রাজ্য সরকার কেন দায়ী নয়?

পর্ব ১ : বন্যা বৃত্তান্ত: কোনটা ম্যান মেড? বন্যা, নাকি বন্যার ঘোলা জলে কলুষিত রাজনীতি?

পর্ব ২ বন্যা বৃত্তান্ত: তখন সিপিএমের দোষে যদি ‘ম্যান মেড’ বন্যা, তবে এখন কার দোষে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *