ত্রিপুরা নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে তৃণমূল? চারটি উপ-নির্বাচনে আগেই নিশ্চিহ্ন জোড়াফুল

ত্রিপুরা নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে তৃণমূল? চারটি উপ-নির্বাচনে আগেই নিশ্চিহ্ন জোড়াফুল

নিজস্ব প্রতিনিধি: জমে উঠেছে ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন পর্ব। জমজমাট লড়াই হতে চলেছে সেখানে। শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস-সিপিএম জোট বেঁধেই লড়াই করবে। কে কোন  আসনে লড়বে চলছে সেই প্রস্তুতির পালা।  এছাড়া জনজাতি অধ্যুষিত ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক বিজেপিকে জোর লড়াই দিতে তৈরি তিপ্রা মোথা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কি করবে তা নিয়ে বহুদিন ধরেই জল্পনা চলছিল। শেষমেশ দেখা গেল তারা কোনও জোটে যাচ্ছে না, বা বলা ভাল তৃণমূলকে কেউ জোটে নিতে চাইছে না। তাই ত্রিপুরার  ৬০টি বিধানসভা কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থী দিতে চায়। ইতিমধ্যেই প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে বৈঠক করেছেন ত্রিপুরা তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেই রাজ্যের দলীয় সভাপতি পীযুষকান্তি  বিশ্বাস। কিন্তু প্রশ্ন ত্রিপুরায় কি আদৌ জোড়াফুল ফুটবে? যার উত্তরে রাজনৈতিক মহল মনে পড়ছে সেই সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে।

বছর দেড়েক আগে ত্রিপুরা পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল বেশ তেড়েফুঁড়ে নেমেছিল। আগরতলা পুরসভায় সিপিএমকে পিছনে ফেলে তারা দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। এছাড়া আমবাসা পুর পরিষদের নির্বাচনে তারা একটি ওয়ার্ডে জয় পেয়েছিল। সব মিলিয়ে তৃণমূল ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল সেই পুরসভা নির্বাচনে। তখন থেকেই তৃণমূল বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু ত্রিপুরায় গত বছর ৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে তৃণমূল জোর ধাক্কা খায়। চারটি কেন্দ্রেই তাদের জামানত  বাজেয়াপ্ত হয়। তৃণমূল ভোট পেয়েছিল মাত্র ২.৮৫ শতাংশ। সেখানে কংগ্রেস এবং সিপিএম দুটি দলই ২০ শতাংশের মতো ভোট পায়। অর্থাৎ এই দুটি দলের সম্মিলিত ভোট ৪০ শতাংশ ছিল। তখন থেকেই ত্রিপুরার মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করে বিজেপিকে হারাতে পারে একমাত্র কংগ্রেস-সিপিএমের জোট, অন্য কেউ নয়। তাই ত্রিপুরায় দিন দিন তৃণমূলের শক্তিক্ষয় হয়েছে। বিজেপি থেকে যে সমস্ত বিধায়ক তৃণমূলে গিয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই দল ছেড়েছেন। উল্লেখ্য সেই উপনির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি তৃণমূলের তারকা সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা, মিমি চক্রবর্তী -সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যাপক প্রচার করেছিলেন। কিন্তু তার নিটফল হয়েছে শূন্য। সেই উপনির্বাচনে বিজেপি তিনটি এবং কংগ্রেস একটিতে জয় পেয়েছিল। তাই আসন্ন ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভূমিকা কি হতে চলেছে এই প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠছে।

সেক্ষেত্রে ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বলছে তৃণমূল সেখানে শুধুমাত্র ‘ভোটকাটুয়া’ হিসেবেই লড়াইতে নামতে চলেছে। অর্থাৎ তারা কিছু ভোট পাবে, কিন্তু কোনও  বিধানসভা কেন্দ্রেই জয়ের ধারে কাছে পৌঁছতে পারবে না। এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের একাংশ। সেক্ষেত্রে তৃণমূল কাদের ভোট কাটবে সেটা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য কংগ্রেস ও সিপিএম বারবার অভিযোগ করে আসছে তৃণমূল বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রার্থী দিয়ে মূলত কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দেয়। একের পর এক রাজ্যে তারা এমনটাই করে চলেছে বলে অভিযোগ। ত্রিপুরাতেও সেই একই ঘটনার পুনাবৃত্তি করতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল, এখন থেকেই সেই প্রচার করতে শুরু করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। আসলে তৃণমূল যদি  বিরোধীদের ভোট কাটে তবে নিশ্চিত ভাবে তার সুবিধা পাবে বিজেপি। গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গিয়েছে তৃণমূল ৬ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছিল। সেখানে ভোট কেটে একাধিক আসনে বিজেপির জয়ের পথ সুগম করে দেয় তৃণমূল। সেই সমস্ত কেন্দ্রে বিজেপির কাছে হার স্বীকার করতে হয় কংগ্রেসকে। এই আবহের মধ্যে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ন্যূনতম ছাপ ফেলতে পারবে না বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি চাইবে তৃণমূল ‘ভোট কাটুয়া’ হিসেবে ময়দানে থেকে কংগ্রেস ও সিপিএমের যাত্রাভঙ্গ করুক। কিন্তু গত বছর উপ-নির্বাচনে ত্রিপুরার মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁরা নিজেদের ভোট নষ্ট করতে চাইবেন না। বিজেপিকে যারা হারাতে পারবে সেই দলকেই ভোট দেবেন তাঁরা। তাই ত্রিপুরা নিয়ে তৃণমূল যে সামান্যতম আশার আলো দেখছে না তা স্পষ্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ত্রিপুরায় ফের আক্রান্ত তৃণমূল, এমবিবি কলেজে ধুন্ধুমার

ত্রিপুরায় ফের আক্রান্ত তৃণমূল, এমবিবি কলেজে ধুন্ধুমার

আগরতলা:  ত্রিপুরায় ফের আক্রান্ত তৃণমূল৷ আগরতলায় মহারাজা বীর বিক্রম কলেজে তৃণমূলের উপর হামলার অভিযোগ৷ উল্লেখ্য, আগামীকাল ‘টিএমসিপি’র প্রতিষ্ঠা দিবস৷ ত্রিপুরা জুড়ে এই অনুষ্ঠান পালনের কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল৷ তার আগে এই হামলায় সরগরম ত্রিপুরার রাজনীতি৷ হামলার দায় অস্বীকার করেছে বিজেপি৷ 

আরও পড়ুন- আম আদমি পার্টিতে সোনু? নতুন ভূমিকায় জল্পনা বাড়ালেন অভিনেতা

জানা গিয়েছে আগামীকাল আগরতলা সহ ত্রিপুরার প্রতিটি কলেজে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের তরফে ‘টিএমসিপি’র প্রতিষ্ঠা দিবসের কর্মসূচি পালন করা হবে৷ এদিন তারই প্রস্তুতি চলাকালীন আক্রান্ত হয় তৃণমূল৷ আগরতলায় যুব তৃণমূল কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিজেপি’র বিরুদ্ধে৷ জানা গিয়েছে, আজ সকালে এমবিবি কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব তৃণমূলের কর্মীরা আগামীকালের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ সেই সময় এক মহিলা কর্মীকে নিগৃহীত করা হয় বলে অভিযোগ৷ এর পর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের আরও কিছু কর্মী ওই কলেজে গিয়ে পৌঁছলে, তাঁদেরকেও মারধর করা হয়৷ এক ঘণ্টার উপর এই অশান্ত চলে৷ এরই মধ্যে পুলিশ পৌঁছয়৷ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের অভিযোগ পুলিশের সামনেই তাঁদের মারধর করা হয়েছে৷ বেশ কয়েকজনের আঘাত লেগেছে৷ অনেকের পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে৷ 

আরও পড়ুন- কলেজিয়ামের সুপারিশে সায়, সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান মহিলা বিচারপতি পেতে চলেছে দেশ

এদিকে, এই ঘটনার পরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতারা কলেজের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন৷ এখনও পর্যন্ত বেশ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বেশ কিছু কর্মীকে আটক করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ যদিও গোটা ঘটনা অস্বীকার করেছে বিজেপি৷ তাদের বক্তব্য, এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই৷ কোনও রকম রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া হয়নি৷  
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ত্রিপুরায় আক্রান্ত তৃণমূল, রক্তাক্ত অবস্থায় পথ অবরোধ দেবাংশুদের

ত্রিপুরায় আক্রান্ত তৃণমূল, রক্তাক্ত অবস্থায় পথ অবরোধ দেবাংশুদের

 

আগরতলা: অভিষেক বন্দ্যপাধ্যায়ের উপর হামলার পর ত্রিপুায় আক্রান্ত তৃণমূল৷ এদিন আক্রান্ত হন যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য, সুদীপ রাহা ও জয়া দত্ত৷ অভিযোগ সবকিছু দেখার পরেও ঠুঠু জগন্নাথ পুলিশ৷ এদিন দেবাংশ বলেন, বাংলার বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন করতে চাই, এটাই কি গণতন্ত্র? 

আরও পড়ুন- সম্মতি ছাড়া স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও ধর্ষণের সমান, ঐতিহাসিক রায় হাইকোর্টের

ধলাই জেলার আমবাসায় গাড়ি করে যাচ্ছিলেন দেবাংশুরা৷ সেই সময় তাঁদের উপরক হামলা চালানো হয়৷ তাঁদের গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়৷ তৃণমূল নেতাদের মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ৷ দেবাংশু বলেন, আমাদের সারা গায়ে গাড়ির ভাঙা কাঁচ৷ সারা গায়ে চোট৷ এদিকে রক্তাক্ত অবস্থাতেই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তার উপর বসে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা৷  এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা৷ 

ত্রিপুরায় গিয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যুতে সরব হয়েছে তৃণমূল৷ প্রায় প্রত্যেক দিনই কোনও না কোনও নেতা ত্রিপুরায় গিয়ে সংগঠনকে মজবুত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন৷  বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে এখন থেকেই জোড় কদমে প্রচার শুরু করেছে এ রাজ্যের শাসক দল৷ এই পরিস্থিতিতে আজ ধলাই জেলা গিয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা৷ সেখানে আমবাসায় প্রথমে তাঁদের গাড়ি আটকানো হয়৷  পরে তাঁদের গাড়িতে ভাঙচুরও করা হয়৷ গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ সুদীপ ও দেবাংশুর৷

আরও পড়ুন- বদলে গেল বাইক চাপার নিয়ম, গুচ্ছ বিধি নিষেধ জারি করল কেন্দ্র

সব মিলিয়ে উত্তেজনার আবহ ত্রিপুরায়৷ ছবিতে দেখা গিয়েছে, গাড়ির ভিতর ভর্তি কাঁচের টুকরো৷ গাড়ির সিটও ভাঙচুর করা হয়েছে৷ গাড়ির ভিতর পড়ে রয়েছে আধলা ইঁট৷  এ বিষয়ে  অবশ্য বিজেপি’র কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷  টুইট করে অভিষেক বলেন, ‘‘ত্রিপুরার গুণ্ডারা তাঁদের প্রকৃত রং দেখিয়েছে৷  তৃণমূল কর্মীদের উপর যে ভাবে বর্বরোচিত আক্রমণ চালানো হয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের অধীনে ‘গুণ্ডা রাজ’ চলছে৷’’ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *