নিজস্ব প্রতিনিধি: আগামী বছরের গোড়ার দিকেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। বর্তমানে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন মামলায় তদন্তে অনেকটাই গতি বাড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের মতো প্রথম সারির তৃণমূল নেতারা। যার প্রভাব পঞ্চায়েত নির্বাচনে পড়বে বলে অনেকের মত। এই অবস্থায় রাজ্য প্রশাসনের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আমজনতার কাছে তুলে ধরতে মরিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যে একাধিক কড়া বার্তা দিলেন দলীয় নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রশাসনিক আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন- সিবিআই নিয়ে কেন অবগত থাকছে না পুলিশ? ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
উল্লেখ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বহু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় অস্থায়ী পদে নিয়োগ নিয়েও বহু প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ তৃণমূলের একশ্রেণির নেতাদের মদতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রাজ্যের বহু পুরসভায় কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। অথচ রাজ্যের অর্থ দফতরের কাছে সেই নিয়োগের ব্যাপারে কোনও খবর নেই। এই পরিস্থিতিতে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন যে, রাজ্যকে না জানিয়ে পুরসভায় অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ করলে তাঁদের বেতনের দায়িত্ব রাজ্য সরকার নেবে না। আসলে বিভিন্ন পুরসভায় অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বহু সময় নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। তাই স্থায়ী বা অস্থায়ী যে কোনও কর্মী নিয়োগে যাতে সামান্যতম অনিয়ম না হয়, এদিন সেই বার্তাই দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নিয়োগ কমিটির অনুমতি ছাড়া নিয়োগ করা চলবে না। স্থায়ী বা অস্থায়ী যে কোনও পদে নিয়োগের আগে অর্থ দফতরকে সেটা জানাতে হবে। সেই সঙ্গে জানাতে হবে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরকেও। এরপর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অনুমতি পাওয়া গেলে নিয়োগ করা যাবে।
এর পাশাপাশি নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, সরকারি কাজে সামান্যতম ঢিলেমি বরদাস্ত করা হবে না। অভিযোগ এলে এক সপ্তাহের মধ্যে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই সমস্ত নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন সরকারি আধিকারিকরা যেন আরও বেশি তৎপরতার সঙ্গে সমস্ত কাজ করেন। আর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত স্তরে এক লক্ষ টাকার বেশি যে কোনও কাজের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিং বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে সেই বার্তাই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
যদিও বিরোধীদের প্রশ্ন, যেসব ঘটনার কথা মুখ্যমন্ত্রী বলছেন সেগুলি কি আগে তাঁর জানা ছিল না? এই অভিযোগ তো আগে বহুবার উঠেছে। তখন কেন মুখ্যমন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেননি, সেই প্রশ্ন উঠছে। তবে কি দুর্নীতির অভিযোগে মারাত্মকভাবে বিদ্ধ হয়ে ব্যাকফুটে চলে যাওয়ার পর ভাবমূর্তি ফেরাতে মরিয়া হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এসব কথা বলতে হচ্ছে? এই প্রশ্ন এখন আছড়ে পড়েছে গোটা বাংলায়। তাই মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে যে সমস্ত দাওয়াই দিয়েছেন, তার ডিভিডেন্ড পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কতটা পায় সেটাই এখন দেখার।