সিবিআই নিয়ে কেন অবগত থাকছে না পুলিশ? ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

সিবিআই নিয়ে কেন অবগত থাকছে না পুলিশ? ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি: ইডি এবং সিবিআই, বিগত কয়েক মাস ধরে রাজ্য রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান  বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে এই দুই তদন্তকারী সংস্থার কার্যকলাপ। দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল। অভিযোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধীদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে এই দুই সংস্থাকে। এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা কলকাতা তথা রাজ্য জুড়ে কখন, কোথায়, কীভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে, সে সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজখবর পুলিশের কাছে থাকুক, এমনটাই চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পুলিশের কাছে সে খবর থাকছে না বলেই মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন। এই বিষয়টি নিয়ে বুধবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে সূত্রের খবর। 

আরও পড়ুন- পুজোর আবহে কতটা সফল হবে BJP-র নবান্ন অভিযান? কীভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন শুভেন্দু?

 রাজ্যে যখন সিবিআই আধিকারিকরা বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন তখন তার সবিস্তার খবর কেন পুলিশ পাচ্ছে না, সে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। যখন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চলছে তখন মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীন জানতে চান, ” মলয় ঘটকের বাড়িতে কী সিবিআই এখনও আছে, নাকি বেরিয়ে গিয়েছে?” কিন্তু সেখানে উপস্থিত পুলিশকর্তারা এই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারায় ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর মুখ্যমন্ত্রীকে তখন বলতে শোনা গিয়েছে,” আপনাদের কাছে কোনও খবর থাকছে না? কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে, ইচ্ছামতো যেখানে খুশি ঢুকে পড়ছে। মাঝরাতেও ঢুকে পড়ছে। কিন্তু আপনাদের কাছে কোনও খবরই থাকছে না  এভাবে চলতে পারে না, আপনাদেরও খবর রাখতে হবে।” সেই সঙ্গে তিনি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের সিপির উদ্দেশে বলেন,”আপনার ওখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনও খবরই কি রাখেন না?” 

এখন প্রশ্ন, এমন কথা কেন বললেন মুখ্যমন্ত্রী? ওয়াকিবহাল বহল মনে করছে আসলে মুখ্যমন্ত্রী চান কলকাতা তথা রাজ্য পুলিশের তৎপরতা যেন আরও বৃদ্ধি পায়। পুলিশের কাছে সমস্ত খবর যেন আগাম চলে আসে।  কোথাও যদি এমন কিছু ঘটে যায় যাতে তৃণমূল সরকারের মুখ পুড়বে, তা আর বরদাস্ত করবেন না মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছরের গোড়ার দিকেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। সেখানে পুলিশের গাফিলতিতে যদি কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটে যায় তাহলে তার দায় নিতে হবে তৃণমূল সরকারকে। আসলে বাগুইআটিতে জোড়া ছাত্র খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়টি। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন পুলিশ যদি সজাগ না থাকে তাহলে বিরোধীরা রাজ্য সরকারকে আরও কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে। আসলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি গরু পাচার, কয়লা পাচার প্রভৃতি কাণ্ড নিয়ে প্রবল অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে তৃণমূল সরকার। তাই গত বিধানসভা নির্বাচনে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিপুল সংখ্যক আসনে জিতে রাজ্যে তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসেও এসব কারণে তৃণমূলকে ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন পুলিশের ‘সোর্স নেটওয়ার্ক’ সিস্টেম যেন আরও বৃদ্ধি পায়। তাতে প্রশাসন চালানো অনেক বেশি সুবিধাজনক হবে। সেই লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, পুলিশ প্রশাসনের ‘সোর্স নেটওয়ার্ক’ আরও বাড়াতে হবে। আর সেটা প্রত্যাশিত মানে পৌঁছয়নি বলেই মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − ten =