কদিন আগেও অনুব্রত ছিলেন চুপসে যাওয়া বেলুন, মুখ্যমন্ত্রী পাশে দাঁড়াতেই কেষ্টর মুখে কথার ফুলঝুরি

কদিন আগেও অনুব্রত ছিলেন চুপসে যাওয়া বেলুন, মুখ্যমন্ত্রী পাশে দাঁড়াতেই কেষ্টর মুখে কথার ফুলঝুরি

নিজস্ব প্রতিনিধি: যাকে বলে কথার ফুলঝুরি! ফের চেনা মেজাজে দেখা যাচ্ছে বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। অথচ গরু পাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বেশ কয়েক দিন ধরে অনুব্রতর মুখে কোনও কথাই শোনা যায়নি। সেই সময় একেবারে নেতিয়ে গিয়েছিলেন এই দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা। যাকে বলে চুপসে যাওয়া বেলুন হয়ে গিয়েছিলেন বীরভূমের কেষ্ট। কিন্তু এখন তিনি আবার স্ব-মেজাজে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যেই। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটাই আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে তৃণমূল নেতাকে।

আরও পড়ুন-CID-র বিরুদ্ধে বিস্ফোরক জেলবন্দি দেবযানীর মা, তৃণমূল বিরোধিতায় আরও ধার বাড়াবেন শুভেন্দু?

নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের বুথকর্মী সম্মেলনে উপস্থিত থেকে মমতা বীরভূম জেলার দলীয় নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেছেন, অনুব্রতকে বীরের মতো জেল থেকে নিয়ে আসতে হবে। আর সেটা অনুব্রতকে কতটা যে অক্সিজেন জুগিয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই শুক্রবার মঙ্গলকোটের পুরনো বোমা বিস্ফোরণের মামলায় বেকসুর খালাস ঘোষিত হওয়ার পর অনুব্রতকে বলতে শোনা গিয়েছে, “সত্যের জয় হল”। এরপর তাঁর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান অন্যান্য মামলা থেকেও কি তিনি মুক্তি পাওয়ার আশা করছেন? জবাবে অনুব্রত বলেন,” কেন, আমি কি অন্যায় কিছু করেছি নাকি? সবেতেই বেকসুর খালাস হব। খালি দেখে যাও!” সেই সঙ্গে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে,” জেলে কন্টিনিউ কেউ থাকে না। নিশ্চয়ই ছাড়া পাব। দিদি বলার পর আর বলার কিছু থাকে না। দিদি পাশে আছে এটাই যথেষ্ট। আমি চোর না ডাকাত, যে আটকে রাখবে। নিশ্চয়ই ছাড়া পাব, ছাড়া পেলে যাব। এ আর বলার কি আছে”।

অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতেই এ সব কথা বলতে শোনা গিয়েছে অনুব্রতকে। সেই সঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন,  “পঞ্চায়েত ভোট তো এখনও ঘোষণা হয়নি। হলে দেখে নেবেন।” আর অনুব্রতকে খোশমেজাজে থাকতে দেখে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন, এবার নতুন কি ডায়ালগ শোনা যাবে তাঁর মুখ থেকে? জবাবে অনুব্রত বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট তো এখনও আসেনি। নতুন ডায়ালগ পঞ্চায়েত ঘোষণা হলে দেব।” সেই সঙ্গে বিরোধীদের বার্তা দিয়ে বলেন, “ফাঁকা থাকবে বিডিও অফিস। নিজে নিজেই ফাইল করবে, আবার নিজে নিজেই চলে আসবে। আমরা চাই সুস্থ ভাবে ভোট হোক। ভদ্রভাবে, সুস্থভাবে ভোট হবে। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোনও গণ্ডগোল হয়েছিল কি? সেই রকম ভোট হবে।” সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছেন  অনুব্রত মণ্ডল।

তবে অনুব্রত যে শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা বলেছেন, তাতে  নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বিরোধীরা। কারণ বীরভূমের তথাকথিত শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা সকলেই জানেন। পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা হয়, সে কথা ভাল করেই জানে রাজ্যবাসী। রাজনৈতিক মহল মনে করছে বীরভূমে দলীয় সংগঠন ধরে রাখতেই মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে অনুব্রতর পাশে দাঁড়িয়েছেন। আসলে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে যেভাবে তৃণমূল ছেঁটে ফেলেছে তা নিয়ে আশঙ্কা ছিল অনুব্রতর মনে। প্রয়োজনে তাঁকেও ছেঁটে ফেলা হতে পারে, সম্ভবত এমন আশঙ্কা করে গ্রেফতার হওয়ার পর কয়েকটা দিন কেষ্ট চুপচাপই ছিলেন। আসলে তখন তিনি জল মাপছিলেন। আর যখনই দেখেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পাশে রয়েছেন তখনই বেরিয়ে পড়েছেন খোলস ছেড়ে। আর তারপরই অনুব্রতর মুখে কথার ফুলঝুরি। এবার থেকে যে  এমনটাই চলবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।