নয়াদিল্লি: দিল্লির রোহিনী আদালতে শক্রপক্ষের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া ‘গোগী’ ছিল দিল্লি পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’৷ তার দাপটে একটা সময় ত্রস্ত থাকত দিল্লির মানুষ৷ তবে গোটা দেশ কার কথা জানল মৃত্যুর পর৷ কিন্তু কী ভাহে তৈরি হল ‘গোগী’? কী ভাবে জিতেন্দ্র মান থেকে সে হয়ে উঠল কুখ্যাত গ্যাংস্টার? তাঁর জীবন কাহিনী অনেকটা চিত্রনাট্যের মতো৷
আরও পড়ুন- ভারত সরকারের তহবিলই নয় ‘পিএম কেয়ার্স’ ফান্ড! স্পষ্ট জানাল কেন্দ্র
অতি সাধারণ পরিবারের ছেলে জিতেন্দ্র তখন দিল্লির শ্রদ্ধানন্দ কলেজের পড়ুয়া৷ ছাত্র রাজনীতি করা এক তরুণ৷ তবে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতা মোড় বদলে দেয় তাঁর জীবনের৷ ভোটের আগে দলবল নিয়ে বড়জোড় ধমক-চমক দিয়ে বেরানো জিতেন্দ্র অন্ধকার জগতে প্রবেশ করল হাতে মানুষের রক্ত মেখে৷ পরবর্তী কালে সেই হয়ে উঠল গোগী৷
প্রিয় বন্ধু সুনীলের সঙ্গে শত্রুতাই অপরাধ জগতের দিকে ঠেলে দিয়েছিল শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের ‘দাদা’ জিতেন্দ্র মানকে৷ প্রতিহিংসার জেরে সে খুন করে সুনীলের এক বন্ধুকে৷ এর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় গোগী বনাম সুনীলের দ্বৈরথ৷ দিল্লির অপরাধ জগতে লেখা হয় অন্ধকার এক ইতিহাস৷ প্রসঙ্গত, পরবর্তী সময়ে এই সুনীলই হয়ে ওঠে টিল্লু৷ আজ দিল্লির রোহিনী আদালতে টিল্লু গোষ্ঠীর হাতেই গোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান৷
২০১০ সালে শ্রদ্ধানন্দ কলেজের ঘটনার এক বছর পর গ্রেফতার হয় গোগী। ততক্ষণে সে অপরাধ জগতের অন্যতম পাণ্ডা হয়ে উঠেছে৷ প্রিয় বন্ধু সুনীল তখন তার প্রধান শক্র৷ তাকে খুন করার ভূত চেপে গিয়েছে গোগীর মাথায়। ২০১১ সালে গোগীকে যখন গ্রেফতার করা হয়, তখন তার বয়স মাত্র ২০। এর পর অন্ধকার জগতে গোগীর শাখা বহুদূর বিস্তৃত হয়েছে৷ তোলাবাজি, খুন, রাহাজানিতে গোগীর দলের দৌরাত্ম্যে দিল্লির মানুষ তখন ভয়ে সিঁটিয়ে৷ মঝেমধ্যেই রাতবিরেতে গাড়ি অপহরণ করতে বেরতো গোগীর দল। কেউ দেখে ফেললে তাঁকে মৃত্যুই ছিল তাঁর নিয়তি৷
টিল্লুর সঙ্গে তখন জোড় কদমে চলছে গোগীর গ্যাংওয়ার৷ ২০১৬ সালে আরও একবার গোগীকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। কিন্তু গোগী তখন আগের চেয়েও শক্তিশালী৷ জেলের মধ্যে থেকেই গোটা নেটওয়ার্ক সামলাচ্ছে৷ গোগীর দলে তখন নাম লিখিয়েছে অনেক নামজাদারাও। তিহার জেল থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পথে তাদের সাহায্যেই আরও একবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ো পালিয়ে যায় গোগী। ফের শুরু হয় লুকোচুরি খেলা৷
নানা দুষ্কৃতীমূলক কাজের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে গভীর হচ্ছিল টিল্লুর সঙ্গে গোগীর শত্রুতা৷ এদিকে, একের পর এক অপরাধ করলেও গোগীকে ধরতে পারছিল না দিল্লি পুলিশ৷ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ ফেসবুকে আড়ি পেতে গোগীর নাগাল মেলে৷ ইতিমধ্যে হরিয়ানার এক জনপ্রিয় লোকগায়িকা হর্ষিতা দাহিয়াকে খুন করেছে সে। তার হাতে লেগেছে আরও এক গ্যাস্টার বীরেন্দ্র মানের রক্ত৷ এমনকি নিজে ভিডিয়ো রেকর্ড করে পবন আঁচল ঠাকুর নামে বিরোধী গোষ্ঠীর এক ঘনিষ্ঠকেও খুন করেছে বলে জানায় গোগী।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের ‘মিশন গোয়া’ শুরু, ঠাসা কর্মসূচি নিয়ে রাজ্যে দুই সাংসদ
অপরাধ জগতে তথন বিশাল নেটওয়ার্ক গোগীর৷ একের পর এক খুন করেও বারবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালাচ্ছিল সে৷ তবে একটা ভুল চাল তাকে নিয়ে যায় হাজতে৷ দিল্লির একটি বিখ্যাত ক্যাফেতে বসে নিজের ছবি পোস্ট করে দেয় এই তরুণ গ্যাংস্টার। সেই ছবি দেখেই লোকেট করে পুলিশ৷ গ্রেফতার করা হয় গোগীকে৷ অভিযোগ, প্রায় দেড় বছর জেলে বন্দি থেকেও নানা অপরাধ করেছে সে৷ অবশেষে শুক্রবার দিল্লির রোহিণী আদালতে শেষ হল একটা কুখ্যাত অধ্যায়৷