আমাকে মোটা বোলো না! এমন চেহারাতেও লাস্য ঝরানো যায়, তা দেখিয়ে দিলেন তানভি

আমাকে মোটা বোলো না! এমন চেহারাতেও লাস্য ঝরানো যায়, তা দেখিয়ে দিলেন তানভি

কলকাতা: স্থূলতা নিয়ে অনেকের মধ্যেই হীনমন্যতা কাজ করে৷ কিন্তু, সৌন্দর্যের শর্ত কি শুধুই তন্বী হওয়া? ছিপছিপে না হলে কি সুন্দর হওয়া যায় না? বদ্ধমূল সেই ধারণা অবশ্য ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে। স্থূলকায় নারীরাও কিন্তু ব়্যাম্পে হেঁটে তাক লাগাতে পারেন, মোটা হয়েও যে ফ্যাশনিস্তা হয়ে ওঠা যায়, ‘পাঠান’ সিনেমায় দীপিকা পাড়ুকোনের মতো ‘বেশরম রং’-এর গানের তালে কোমর দুলিয়ে তাক লাগানো যায়, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মুম্বইয়ের তানভি গীতা রবিশঙ্কর।

আরও পড়ুন- জন্ম পাকিস্তানে, ছিলেন সেনাবাহিনীতেও, রোগী দেখেন মাত্র ২০ টাকায়! পদ্মশ্রী পেলন গরিবের ডাক্তারবাবু

নিজের স্থূলতাকে কখনই ইচ্ছেপূরণের পথে বাধা হতে দেননি তানভি। বরং নিজের স্থূল চেহারা নিয়েই চারদিকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বছর ৩০-এর এই তরুণী। দীপিকার মতো ছিপছিপে নন তো  কী! তাঁর মনে রয়েছে আত্মবিশ্বাস ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি৷ সেই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে সুন্দরী করে তুলেছে।

‘পাঠান’ ছবিটি মুক্তির আগে থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল ‘বেশরম রং’ গানটি নিয়ে৷ সেই গানে দীপিকার মতোই পোশাক পরে নাচলেন সাহসী তানভি। ভিডিয়ো তৈরি করে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও পোস্ট করলেন তিনি। মুহূর্তে ভাইরাল হয় ওই রিলস। স্থূলকায় চেহারায় যে ভাবে দীপিকার অনুকরণে কোমর দোলালেন তানভি, তা দেখে বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। 

মোটা হয়েও বিকিনি তে নিজেকে মেলে ধরা যায়, তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ তানভি৷ তবে এই আত্মবিশ্বাস এক দিনেই অর্জিত হয়নি। স্থূলতার জন্য বহু টিটকিরি শুনতে হয়েছে তাঁকে। তবে সেই সব টিটকিরি তাঁকে দমাতে পারেনি৷ বরং সমালোচনার আগুনে পুড়ে আরও বেশি মজবুত হয়েছেন৷ জেদ এবং আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই ফ্যাশন দুনিয়ায় নিজেকে প্রস্ফুটিত করেছেন৷ 

tanvi

ফ্যাশন দুনিয়ার প্রতি তানভির বরাবরের টান৷ কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর স্থূলত্ব৷ মোটা হয়ে কি ‘ক্যাটওয়াক’ করা যায়? এই প্রশ্নই বারবার থাবা বসাত তাঁর মনে৷ 

এরই মধ্যে তানভির কাছে একটা সুযোগ আসে। ‘প্লাস-সাইজ ফ্যাশন শো’র আয়োজন করে একটি সংস্থা। এই সুযোগই তানভির জীবন আমূল বদলে দেয়। যে চেহারার জন্য ছোট থেকে কপালে শুধু কটূক্তি জুটত, সেই চেহারাকে সঙ্গী করেই র্যািম্পে ঝড় তুললেন তানভি। সেখানে গিয়েই তিনি জানলেন,  তিনি একা নন। তাঁর মতো আরও অনেকেই আছেন৷ যাঁরা স্থূলকায় হয়েও লড়ে চলেছেন৷ এই ঘটনা তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়৷ 

মিজের মোট চেহারা নিয়েই খুশি তানভি। তবে প্রথমে এমনটা ছিল না৷ ওজন কমাতে অনেক কসরত করেন৷ তাতে তাঁর ওজন কমেও যায়। কিন্তু শরীর ভেঙে পড়ে। তানভিরা দক্ষিণ ভারতীয় হলেও থাকেন মুম্বইয়ে। পুণে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর মুম্বইয়ে ফিরে আসেন৷  ইচ্ছা ছিল, পেশাদার নৃত্যশিল্পী হওয়ার৷ তবে স্থূলতা নিয়ে তাঁর পক্ষে নাচ নিয়ে বেশি দূর এগানো সম্ভব হবে না বলেও অনেকে দাগিয়ে দিয়েছিলেন৷ তবে সে সব শুনে নাচের প্রতি তানভির ভালবাসা উবে যায়নি।

tanvi

নাচ শেখার জন্য ‘ডান্স অ্যাকাডেমি’তে ভর্তি হয়ে যান তানভি। অনেক চেষ্টা করে ২৫-৩০ কেজি ওজনও কমিয়ে ফেলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘যা খেতাম, বমি করে ফেলতাম। সারা দিন নাচের পর জিমে শরীরচর্চা৷ তার পর বাড়ি ফিরে মাত্র দুটো সিদ্ধ ডিম খেতাম। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা শরীরচর্চা করে ২৫ কেজি ওজন কমাই। তবে এতে আমার শরীরের হাল খারাপ হয়ে গিয়েছিল।’’ ২৫ কেজি ওজন কমানোর পরও ‘ডান্স অ্যাকাডেমি’তে যোগ দেওয়া হয়নি তাঁর৷ কারণ তাঁকে আরও ওজন কমাতে বলা হয়েছিল। সেই সময় তানভি বুঝতেই পারেননি যে  ‘ইটিং ডিজঅর্ডারে’ ভুগছিলেন৷ 

২০১৭ সালে প্রথম বার বিকিনি পরেন ‘ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটার’ তানভি। তার পর থেকেই চেহারা নিয়ে তাঁর মনের ভীতি কেটে যায়। স্থূলকায় তরুণীও যে মোহময়ী হতে পারেন, সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন তানভি। তাঁর কথায়, মোটা মানুষরা ‘হট’ নন, এমনটা একেবারেই ভুল ধারণা। কাকে লাস্যময়ী লাগছে, সেটা মনের ব্যাপার, চেহারার নয়।’’