জন্ম পাকিস্তানে, ছিলেন সেনাবাহিনীতেও, রোগী দেখেন মাত্র ২০ টাকায়! পদ্মশ্রী পেলন গরিবের ডাক্তারবাবু

জন্ম পাকিস্তানে, ছিলেন সেনাবাহিনীতেও, রোগী দেখেন মাত্র ২০ টাকায়! পদ্মশ্রী পেলন গরিবের ডাক্তারবাবু

ভোপাল: ঐশ্বর্যের হাতছানি কোনও দিনই বিভ্রান্ত করতে পারেনি তাঁকে৷ নিজের কর্তব্যে অবিচল থেকে করে চলেছেন নিজের কাজ৷ রোগীর রোগ নির্ণয় করে লিখে চলেন প্রেসক্রিপশন। ভাবছেন এমন ডাক্তার তো অনের আছ৷ কিন্তু, না৷ বাকি সকলের থেকেই তিনি অনেকটাই আলাদা৷ আজও মাত্র ২০ টাকা ফি নিয়ে চিকিৎসা করেন গরিবের মসিহা৷ অনেকে তো আবার সেই ২০ টাকাও দিতে পারেন না। তাতেও ডাক্তারবাবুর বিরক্তি নেই। তাঁদের বিনামূল্যেই চিকিৎসা করেন তিনি৷।

আরও পড়ুন- মিলতে পারে গুচ্ছ সুযোগ-সুবিধা! অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের বাজেটের দিকে তাকিয়ে মধ্যবিত্তরা

শুরুতে ফি ছিল ২ টাকা। তারপর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফি কিছুটা বাড়াতে বাধ্য হন। তাও সেটা সামান্যই। এতদিনে তাঁর ফি হয়েছে মোটে ২০ টাকা। চেম্বার খুলতে পারেন না, তার আগে থেকেই রোগীদের লম্বা লাইন পড়ে যায়। কারও কাছে তিনি ,’ভগবান’৷ কারও কাছে ‘গরিবের ডাক্তারবাবু’। মধ্যপ্রদেশের প্রবীণ এই ডাক্তারবাবুকে এ বছর পদ্ম সম্মানে সম্মানিত করল কেন্দ্রের সরকার।

১৯৪৬ সালের ১৬ জানুয়ারি পাকিস্তানে জন্ম হয় তাঁর। দেশভাগের পর, সপরিবারে ভারতে চলে আসেন তাঁরা৷ ৭১-এর যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য৷ এখন বয়স ৭৭ বছর। রোগী দেখা শুরু করেছিলেন মাত্র ২ টাকা দিয়ে৷ তাঁর বর্তমানে তাঁর পারিশ্রমিক ২০ টাকা। রাজনীতি থেকে বরাবরই দূরে থেকেছেন তিনি। এক কথায় বলা চলে তিনি এখ ব্যতিক্রমী চিকিৎসক৷ তাঁর এই মহান কাজের জন্যই ডা. এমসি দাওয়ারকে চলতি বছরে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত ককরা হল। এই সম্মান পাওয়ার পর গরিবের ডাক্তারবাবু বলেন, “দেরিতে হলেও, কঠিন পরিশ্রমের ফল পাওয়া যায়।  মানুষের আশীর্বাদেই আমি এই পুরস্কার পেলাম।”

১৯৬৭ সালে মধ্য প্রদেশের জবলপুর থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন এমসি দাওয়ার৷  ১৯৭১ সালে  ভারত-পাক যুদ্ধ শুরু হলে প্রায় ১ বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে পরিষেবা দেন তিনি। ১৯৭২ সালে সাধারণ মানুষের জন্য নিজের চেম্বার খোলেন। তখন থেকে এক ভাবে রোগী দেখে চলেছেন৷ কোনও ক্লান্তি নেই তাঁর৷ স্থানীয়রা বলেন, প্রতি বছর ঋতু বদলায় কিন্তু ডাক্তারবাবুর ফি বদলায় না৷ বদলাতেও চায় না৷ দুঃস্থ রোগীর চিকিৎসা করাটাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য৷ 

তাঁর পদ্মশ্রী সম্মান প্রাপ্তিতে উচ্ছ্বসিত তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। ডা. দাওয়ারের পুত্র ঋষি বলেন, “আমরা ভাবতাম রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকলে তবেই পুরস্কার পাওয়া যায়। কিন্তু, যারা সত্যিকারের কাজ করছেন, সরকার তাঁদের খুঁজে বার করে সম্মান জানাচ্ছেন, এটা সত্যিই খুব ভাল বিষয়। এই কারণেই বাবা এই পুরস্কার পেয়েছেন।” 

বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যূব্জ শরীর৷ কিন্তু, রোগী দেখা থেকে ছুটি নিতে চাননা দাওয়ার। তাঁর কথায়, যতদিন বাঁচব, শক্তি থাকলে মানব সেবায় নিজেকে নিযুক্ত রাখব। এর আগে নূন্যতম ফি-তে রোগী দেখে পদ্ম সম্মান পেয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের বাসিন্দা সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে রোগীর চিকিৎসা করতেন তিনি৷ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসতেন তাঁর কাছে। তাঁর চিকিৎসায় পাকাপাকিভাবে রোগমুক্তি ঘটেছিল অনেকের। এই অবদানের জন্য ২০২১ সালে সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়কে পদ্মশ্রী খেতাবে সম্মানিত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।