লখনউ: একদিকে ছিল স্বপ্ন পূরণের হাতছানি৷ অন্যদিকে ছিল পরিবারের চাহিদা৷ মায়ের মৃত্যুর পর জীবনটা যেন আরও বেশি অগোছালো হয়ে গিয়েছিল৷ বিয়ের জন্য ক্রমাগত চাপ আসছিল পরিবারের তরফে৷ কিন্তু নিজের লক্ষ্য থেকে এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত হননি তিনি৷ তাই পরিবার নয়, কেরিয়ারকেই বেছে নিয়েছিলেন মীরুটের সঞ্জু রানী বর্মা৷ তিনি কী চান, তা অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল সঞ্জুর কাছে৷ সালটা ২০১৩৷ সবকিছু পিছনে ফেলে ঘর ছাড়েন সঞ্জু রানী৷
আরও পড়ুন- ওটিপি দিয়ে টাকা তোলার নিয়মে বদল আনল স্টেট ব্যাঙ্ক
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্রী ছিলেন সঞ্জু৷ অর্থের অভাবে মাঝ পথেই পড়া ছাড়তে হয় তাঁকে৷ কিন্তু সিভিল সার্ভেন্ট হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দেননি৷ আগলে রেখেছিলেন সযত্নেই৷ দিল্লিতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে শুরু করেন ছাত্র পড়ানো৷ টিউশন ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকেন৷ ৭ বছর পর সেই সঞ্জু আবার ঘরে ফিরলেন৷ ঘরে ফিরলেন পিসিএস অফিসার হয়ে৷ সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সঞ্জু বলেন, ‘‘মাত্র কয়েক দিন হয়েছিল আমার মা মারা গিয়েছিলেন৷ আর এর মধ্যেই বিয়ের জন্য চাপ দিতে শুরু করে পরিবারের লোকজন৷ আমি আমার কথা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম৷ কিন্তু সব চেষ্টাই বৃথা৷ তখনই মনস্থির করি তাঁরা যদি আমার কথা বুঝতে না চায়, তাহলে আমিও আমার নিজের মতো বাঁচব৷ আমি কোনও কিছুর সঙ্গে আপোষ করব না৷’’
আরও পড়ুন- সংসদের নতুন বিল্ডিং তৈরির বরাত পেল টাটা, খরচ ৮৬১ কোটি টাকা
সঞ্জু বলেন, কেন আমাদের সমাজের অধিকাংশ পরিবার এখনও মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে এতটা উদাসীন তা বুঝতে পারি না৷ মেয়েদের বিয়ে দিতে পারলেই যেন তাঁরা বাঁচে৷ সঞ্জু বলেন, ‘‘আমি বাড়ি ছাড়ার পর আমার বাড়ির লোকজন খুবই কষ্ট পয়েছিল৷ কিন্তু আমি এটাও জানতাম যে একজন অফিসার হিসাবে যখন লোকে আমাকে সম্মান করবে, সেটা দেখে তাঁরা খুবই খুশি হবে৷ আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন৷ সব রকম ভাবে আমি আমার পরিবারে পাশে দাঁড়াতে চাই৷ কিন্তু সমাজের এই যে চাপ, তা এখনও বুঝতে পারি না৷ মেয়ে মানেই যেন পড়াশোনার প্রয়োজন নেই৷ তাঁদের জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি বিয়ে৷’’