পাটনা: করোনা কাঁটায় দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল স্কুল-কলেজ সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি৷ প্রায় আড়াই বছর ছাত্রছাত্রীদের না পড়িয়ে বাড়িতে বসেই বেতন পেয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা৷ এ নিয়ে শিক্ষকদের সমাজের নানা কটাক্ষও সইতে হয়েছে৷ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যখন অভিযোগের আঙুল তোলা হচ্ছে তখন ব্যতিক্রমী বিহারের মুজফফরপুরের নীতীশ্বর কলেজের সহকারী অধ্যাপক লালন কুমার। কঠিন সিদ্ধান্তে গড়লেন নৈতিকতার নজির৷
আরও পড়ুন- ইডি’র তল্লাশি শুরু, ভারত ছেড়ে পালাল ‘ভিভো’র দুই কর্তা
অন্যান্য শিক্ষকরা যখন বাড়িতে বসে বেতন নিচ্ছেন, তখন ‘বিবেকের দংশনে’ ভুগছিলেন লালন৷ না পড়িয়ে এ ভাবে বেতন নেওয়াটা মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি৷ আর ঠিক সেই কারণেই কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে ফিরিয়ে দিলেন নিজের ২ বছর ৯ মাসের বেতন৷ এই ক’মাসে তিনি মোট বেতন পেয়েছিলেন ২৩ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা৷ গোটা রাশি তিনি তুলে দেন রেজিস্ট্রারের হাতে৷ তাঁর এই পদক্ষেপে গর্বিত শিক্ষা মহল৷ লালনের মহানুভবতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা৷
লালনের কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের না পড়িয়ে বিনা পরিশ্রমে এত দিন ধরে বেতন নিয়েছি৷ কিন্তু কোথাও যেন এভাবে বেতন নিতে বিবেকে বাধছিল। অনলাইন ক্লাস হয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু খুব কম পড়ুয়াই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমি যদি না পড়িয়ে আগামী পাঁচ বছর ধরে মাসের পর মাস বেতন নিয়ে যাই, তা হবে আমার শিক্ষাকে গলা টিপে হত্যা করার শামিল হবে!”
লালন জানান, তাঁর বেতন ফেরানোর প্রস্তাব পেয়ে অবাক হয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ৷ এতগুলো টাকা নিতে তাঁরা দ্বিধাবোধ করছিলেন। কিন্তু লালনই তাঁদের বুঝিয়ে বলেন, কেন বেতনের টাকা ফিরিয়ে দিতে চাইছেন৷ তাঁর ব্যাখ্যা শোনার পরে অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই প্রস্তাব মেনে নেন। লালনের অভিযোগ, কলেজে আসার পর থেকে সেভাবে পড়াশোনার পরিবেশ চোখে পড়েনি তাঁর। অভিযোগ, কলেজে হিন্দি বিভাগে ১,১০০ জন পড়ুয়া রয়েছে৷ কিন্তু, তাঁদের উপস্থিতির হার যৎ সামান্য। অনলাইন ক্লাস চালু করা হলেও সেখানে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল হাতে গোনা৷ তাই ছাত্রছাত্রীদের না পড়িয়ে তিনি বেতন নিতে পারবেন না। তাই ৩৩ মাসের বেতনের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
লালনের এই পদক্ষেপে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বিহারের শিক্ষামহলে৷ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্যে কলেজের শিক্ষাব্যবস্থার মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে নীতীশ্বর কলেজের অধ্যক্ষের বক্তব্য, “লালন আসলে বদলি নিতে চাইছেন৷ সেই কারণেই বেতন ফিরিয়ে দিয়ে চাপের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছেন৷ আসল কারণ পড়ুয়াদের অনুপস্থিতি নয়, উদ্দেশ্য স্নাতকোত্তর স্তরে বদলি৷’’ অধ্যক্ষ যাই বলুন, লালনের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিআর অম্বেডকর বিহার ইউনিভার্সিটির (বিআরএবিইউ) রেজিস্ট্রার। তাঁর কথায়, লালন কুমার যেটা করেছেন সেটা নগণ্য বিষয় নয়৷ আমরা উপাচার্যের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করব৷
লালন হিন্দিতে স্নাতকোত্তর পাশ করার পর দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি এবং এমফিল করেছেন৷ ২০০৯ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে তিনি যোগ দেন নীতীশ্বর কলেজে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>