নয়াদিল্লি: দাভোস বিশ্ব ইকোনমিক সম্মেলনে ভার্চুয়াল বক্তৃতার মাঝে আচমকাই থামলেন প্রধানমন্ত্রী৷ খানিক বিরতির, তারপর ফের শুরু করেন ভাষণ৷ আর এর পর থেকেই উত্তাল জাতীয় রাজনীতি৷ তবে কি হঠাৎ করে বিগড়ে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর টেলিপ্রম্পটার? বিরোধীদের কটাক্ষ ভরা প্রশ্নে জেরবার নরেন্দ্র মোদী৷
আরও পড়ুন- যাদব পরিবারে ভাঙন! সপা ছেড়ে BJP-তে যোগ দিলেন মুলায়মের পুত্রবধূ
যিনি বিশ্ব দরবারে বাগ্মী বলে পরিচিত, যাঁর ভাষণ দক্ষতায় মুদ্ধ অনুগামীরা, সেই প্রধানমন্ত্রীই কিনা হোঁচট খেলেন বিশ্বমঞ্চে৷ নেপথ্য ‘খলনায়ক’ কি তবে টেলিপ্রম্পাট? যন্ত্রের দোষেই কি থামতে হল তাঁকে? বক্তব্যের মাঝে খেই হারেলেন তিনি৷ খানিক চাইলেন ইতিউতি৷ এর পর থেকেই বিরোধীদের প্রশ্ন, তবে কি নিজে কোনও কথাই বলতে পারেননা প্রধানমন্ত্রী? তাও ইংরেজি নয়, ভাষণ হচ্ছিল হিন্দিতে৷
ক্যামেরার সামনে প্রায় দশ সেকেন্ড চুপ করে থাকতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে৷ এই ঘটনায় রীতিমতো অপ্রস্তুতে পড়েন তিনি৷ এদিকে টেলিপ্রম্পটার ইস্যুকে হাতিয়ার করেই ময়দানে নেমে পড়েছেন রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধীরা নেতৃত্বরা৷ তাঁদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর টেলিপ্রম্পটার বিভ্রাট বিশ্বমঞ্চে ভারতের নাম ডুবিয়ে দিয়েছে৷ কংগ্রেসের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে ‘#TeleprompterPM’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে এই ইস্যুকে৷ এমনকী বলিউডের গানের লাইন তুলে লেখা হয়েছে, ‘টেলিপ্রম্পটার মানুষ: আচ্ছা চলতা হু, দুয়ায়োঁ মে ইয়াদ রাখনা৷’ শুধু তাই নয় সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠেছে ট্রোলড-মিমের ঝড়৷
সোমবার টেলিপ্রম্পটার বিভ্রাটের পর ১০ সেকেন্ড থেমে থাকেন মোদী৷ এর পর প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যায়, তাঁর বাঁ দিকে তাকাতে৷ সেখান থেকে সহকারীর ‘কম্যান্ড’ শুনে সেই বলতে শুরু করেন। সহায়কের কথামতো কানে হেডফোন গুঁজে নেন৷ হিন্দিতে বেশ কয়েক লাইন বলার চেষ্টাও করেন তিনি৷ এর পর দাভোসের মঞ্চে বসে থাকা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সিইও ক্লাউস সোয়াবের কাছে প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, তাঁর কথা এবং তাঁর দোভাষীর অনুবাদ ঠিকমতো শোনা যাচ্ছে কি না৷ ক্লাউস জানান, প্রধানমন্ত্রীর কথা শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু এর পর আর সেই স্বাচ্ছন্দ্য বা সাবলীল ভঙ্গি ফিরে পাননি নমো৷ এই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে কিছুটা বাধ্য হয়েই অনুষ্ঠানের মূল পর্বে ঢুকে যান সোয়াব৷ পরে কোনও বিভ্রাট ছাড়া নতুন করে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী৷
সূত্রের খবর, যান্ত্রিক বিভ্রাটের কারণ খুঁজতে উঠে পড়ে লেগেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর৷ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের কাছে টেলিপ্রম্পটারের ব্যবহার নতুন বিষয় নয়৷ অনেকেই সাবলীল ভাবে এই যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বাগ্মী হলেও, এর আগে বহুবার টেলিপ্রম্পটার ব্যবহার করে বিশ্ব মঞ্চে সাবলীল ভাবে বক্তৃতা রেখেছেন মোদী৷ সোমবারের ঘটনার পিছনে কোথাও কোনও অন্তর্ঘাত রয়েছে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখছে পিএমও৷
উল্লেখ্য, অতীতেও রাহুল গান্ধী নমোকে নিশানা করে বলেছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী নিজে থেকে কিছু বলতে পারেন না। তিনি টেলিপ্রম্পটার দেখে ভাষণ দেন৷ যা নিয়ন্ত্রণ করেন কন্ট্রোলার৷’ সেই সময়ে তাঁর এই মন্তব্যে শোরগোল বেঁধেছিল৷ কিন্তু এদিনের ঘটনা তাঁর সেই মন্তব্যকেই যেন প্রাসঙ্গিক করে তুলল৷ এদিন রাহুল বলেন, “টেলিপ্রম্পটারও মিথ্যে কথা বলতে চাইছিল না।” একই ভাবে মোদীকে খোঁচা দিয়ে টুইট করে করেছেন তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেত্রী নুসরত জাহানও।