নয়াদিল্লি: কৃষি বিল নিয়ে দেশজুড়ে ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে৷ কিন্তু সরকার কৃষকদের জন্য কতটা চিন্তাশীল দেশের মানুষের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিলেন সঙ্ঘ পরিবারের সহ প্রতিষ্ঠাতা দীনদয়াল উপাধ্যায়ের ১০৪ তম জন্মবার্ষিকীকে৷ দীনদয়াল উপাধ্যায় ছিলেন জনসঙ্ঘের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এদিন বিজেপি কার্যকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কৃষি বিল নিয়ে কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছে কিছু মানুষ৷ এতদিন কৃশকদের বঞ্চিত রাখার পর, তাঁদের ঘাড়েই বন্দুক রাখছেন৷’’
আরও পড়ুন- কৃষি বিলের প্রতিবাদে আজ ভারত বনধের ডাক কৃষকদের, ফুঁসছে হরিয়ানা-পঞ্জাব
এদিন নমো বলেন, দীনদয়ালজি ভারতের রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি এবং রাজনীতি, সব কিছু নিয়ে লিখেছিলেন৷ স্বাধীন ভারতের রূপরেখা তৈরিতে যখন বিদেশি নীতি অনুসরণ করা হচ্ছিল, সেইসময় দেশীয় সংস্কৃতির উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর দূরদর্শিতা ২১ শতকের ভারতকে বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নোম বলেন, এই বছর তাঁর জন্মদিন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, গত কয়েকদিনে বেশ কিছু বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশ৷ যার উপর দীনদয়ালজির চিন্তাভাবনার ছাপ রয়েছে৷ আমাদের দেশের কৃষক, শ্রমিক, যুবক এবং মধ্যবিত্তদের জন্য কিছু ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর কয়েক দশক ধরে কৃষক ও শ্রমিকদের নামে অনেক স্লোগান দেওয়া হয়েছিল। অনেক বড় বড় ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সময় প্রমাণ করে দিয়েছে যে, সে সব মিথ্যে প্রতিশ্রুতি ছিল৷ দেশবাসী এই সত্যিটা জানে৷ নমো আরও বলেন, দীনদয়লাজি সেই সময় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, অব্যবস্থা আর অনাচার, অভাব আর অসাম্য, অসুরক্ষা এবং অসামাজিকতা বেড়ে চলেছে৷ ওনার এই কথাগুলো পরের কিছু দশকে আরও বেশি করে প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে৷ রাষ্ট্রের কল্যাণের বদলে কিছু মানুষ ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তাই বছরের পর বছর সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি সাহায্য পৌঁছয়নি। তাদের এমন আইনের জালে জড়িয়ে রাখা হত, যে সরকারের নীতি সাধারণ মানুষের বোধগম্য হত না।
আরও পড়ুন- নিউ নর্মালে বিহার নির্বাচন, ৩ দফায় ভোটের দিন ঘোষণা কমিশনের
প্রদানমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষক এবং শ্রমিকের নামে অনেক সরকার গড়েছে৷ কিন্তু কৃষকদের ঝুলি ফাঁকাই থেকে গিয়েছে৷ দেশের কোষাগার পূর্ণ করতে তাঁরা কোনও খামতি রাখেনি কিন্তু কৃষকের আয় বাড়েনি৷ বেড়েছে ঋণ৷ এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আয়ের দেড় গুণ সহায়ক মূল্য তুলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের হাতে৷ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি যুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার৷ পিএম কিষাণ সম্মান নিধির মাধ্যমে ১০ কোটিরও বেশি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হয়েছে৷ যত বেশি সম্ভব কৃষকের হাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার৷ আগে যাঁদের ২ হেক্টর পর্যন্ত জমি ছিল, তাঁরাই কিষাণ ক্রেডিট কার্ড পেতেন। আজ সকলেই এই সুবিধা পান। বর্তমানে পশুপালন এবং মাছ চাষে যাঁরা নিষুক্ত রয়েছেন, তাঁদেরও এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আগে কিষাণ মান্ডিতে কৃষকরা ফসল বিক্রি করত৷ এখন তাঁরা মান্ডি হোক বা মান্ডির বাইরে, যেখানে ফসলের দাম বেশি পাবে সেখানেই বিক্রি করার স্বাধীনতা পেয়েছে৷
তিনি আরও বলেন, কৃষকদের মতোই বহু বছর ধরে শ্রমিকদের আইনের জালে আটকে রাখা হয়েছিল। ক্ষেত, নির্মাণ, সংবাদমাধ্যম, চিত্রনির্মাণ শিল্পে যুক্ত শ্রমিকদের জন্য আলাদা আলাদা আইন ছিল। তাই বিচারের জন্য বছরের পর বছর ধরে আদালতের চক্কর কাটতে হতো তাঁদের। চার লেবার কোডের মাধ্যমে তাঁদের সেই জাল থেকে বার করে আনার চেষ্টা করা হয়েছে৷ শ্রমিক আইন সহজ করা হয়েছে যাতে দেশের ৫০ কোটি শ্রমিক সময়ে বেতন পান৷ আগের আইনে মহিলা শ্রমিকদের কোনও সুরক্ষা ছিল না৷ নয়া আইনে তাঁরাও পুরুষজের সমান সুযোগ সুবিধা পাবে৷