গায়ে গোলাপি শাড়ি, হাতে লাল-কালো ব্যাগ, এই স্কুলে অ-আ, ছোটদের ছড়া শেখেন ঠাকুমারা!

গায়ে গোলাপি শাড়ি, হাতে লাল-কালো ব্যাগ, এই স্কুলে অ-আ, ছোটদের ছড়া শেখেন ঠাকুমারা!

b3395b641978a0f1463ca4b2b92a429f

ঠানে: শেখার কোনও বয়স নেই৷ না আছে জানার কোনও শেষ৷ এই ধ্রুব সত্যটাই যেন ফুটে উঠল বাস্তবের চালচিত্রে৷ 

আরও পড়ুন- ভারতীয় রেলের ইতিহাসে বেনজির ঘটনা, চাকরি পেল ১০ মাসের শিশুকন্যা!

স্থান মহারাষ্ট্রের ঠাণে। সেখানে গড়ে উঠছে এক কামরার একটি স্কুলঘর। এটি একটি গার্লস স্কুল। পড়ুয়াদের সকলেরই বয়স ৬০ থেকে ৯০-এর মধ্যে। তাঁরা কেউ ঠাকুমা, কেউ বা দিদিমা। সংসারের চার দেওয়ালের বাইরের বৃহৎ জগৎটাকে জানার আকাঙ্খা তাঁদের টেনে এনেছে এই স্কুলবাড়িতে৷ বলা ভালো তাঁদের জন্যই খোলা হয়েছে এই বিশেষ স্কুল৷ 

grang mother school

২০১৬ সালে নারী দিবসে এই স্কুলের পথ চলা শুরু৷ ঠাণের ফাগানে গ্রামে ঠাকুমা-দিদিমাদের জন্য তৈরি এই বিশেষ স্কুলের ছাত্রী সংখ্যা ৩৫৷ সোম থেকে শনি রোজ দু’ঘণ্টা করে ক্লাস নেওয়া হয়। কখনও সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত। আবার কখনও দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত চলে স্কুলের পঠনপাঠন৷ ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ইউনিফর্মও৷ ছাত্রীরা সকলে গোলাপী রং-এ শাড়ি পড়ে স্কুলে আসেন৷ হাতে থাকে লাল-কালো রঙের একটি ব্যাগ। স্কুলের নাম দেওয়া হয় ‘আজোবাইচী শালা’। স্কুলটি চালু হয় স্থানীয় জেলা পরিষদ স্কুলের শিক্ষক ও সমাজকর্মী যোগেন্দ্র বাঙ্গারের উদ্যোগে। 

GM

এই স্কুলের প্রত্যেক পড়ুয়াকে খুব যত্ন সহকারে পড়ানো হয়৷ বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়ের পর শেখানো হয় নিজেদের নাম লেখা। এই স্কুলের শিক্ষিকা বছর ৩০-এর শীতল মোরে নিজে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা তিনি। মরাঠি ভাষার বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করানোর পাশাপাশি শিশুদের ছড়াও শেখান তিনি৷ সেই সব চটপট মুখস্থ করে নেন ছাত্রীরাও৷

এই স্কুলে কোনও বেঞ্চ নেই৷ মাটিতে বসেই চলে পড়াশোনা৷  প্রত্যেকে নিজের নিজের স্লেটে মন দিয়ে বর্ণমালা লেখেন। এই বয়সেও যে ভাবে একাগ্রতার সঙ্গে তাঁরা পড়াশোনা করেন, তা দেখে অনেকেই মুগ্ধ৷ পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বও পালন করেন এই স্কুলের পড়ুয়ারা৷ স্কুলের চারপাশ জুড়ে থাকা বাগানে রয়েছে হরেক রকমের গাছ৷  প্রত্যেক পড়ুয়াকে একটি করে গাছের দায়িত্ব সঁপা হয়েছে। পড়াশোনার ফাঁকে সেই সকল গাছের যত্নআত্তিও করেন তাঁরা।

gm

স্কুলে পড়া বোঝানোর পর পডুয়াদের হোমওয়ার্কও দেওয়া হয়। বাড়িতে ঠাকুমা-দিদিমাদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন তাঁদের নাতি-নাতনিরা। প্রতিদিন সময় মতো হাতে ব্যাগ নিয়ে গোলাপি শাড়ি পরে দল বেঁধে হেঁটে হেঁটে সকলে স্কুলে যান তাঁরা। এই বিশেষ স্কুলের জন্য তহবিল দেয় একটি অছি। পিছিয়ে পড়া ও বয়স্কদের পাশে দাঁড়াতেই এই অছি তৈরি করেছিলেন দিলীপ দালাল নামে এক ব্যক্তি।

যোগেন্দ্র বাঙ্গারের কথায়, ‘‘জীবনে জ্ঞানের  মাহাত্ম্য অনেক। প্রবীণ মহিলাদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে তাঁদের আত্মবিশ্বাস ফেরাতে এই উদ্যোগ নেওয়া।’’ প্রবীণ ছাত্রীদের পড়াশোনায় কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তার নিয়মিত পর্যালোচনাও করেন বাঙ্গার।