একাধারে ডাক্তার, আইপিএস, আইএএস… অশান্ত কাশ্মীর থেকে উঠে আসা এক তেজস্বিনী রুবেদা

একাধারে ডাক্তার, আইপিএস, আইএএস… অশান্ত কাশ্মীর থেকে উঠে আসা এক তেজস্বিনী রুবেদা

নয়াদিল্লি:  একটা স্বপ্ন আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি৷ এই দু’য়ের জোরে ভেঙে ফেলা যায় সমস্ত প্রতিকূলতা৷ সমস্ত বাধা পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় নিজের লক্ষ্যে৷ অশান্ত পরিবেশ থেকেও যে এভাবে উঠে আসা যায়, ছোঁয়া যায় সফল্যের শিখড়, রুবেদা সালাম তাঁর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত৷ জানেন কী ভাবে আইপিএস অফিসার হয়ে উঠলেন এই কাশ্মীরি কন্যা?

আরও পড়ুন –২ কোটি বরাদ্দ, সংস্কারে খরচ নামমাত্র! মোরবি সেতু নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য

কাশ্মীরের কুপওয়াড়ার ফারকিনে জন্ম রুবেদা সালামের। তাঁর শৈশব কেটেছে বন্দুকের গুলির শব্দ শুনে৷ দেখেছেন উপত্যকাজুড়ে জঙ্গিদের উপদ্রব৷ শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করে রুবেদা জানান,  প্রায়ই অশান্ত হয়ে উঠত কুপওয়াড়া। একদিকে সেনা জওয়ান, অন্যদিকে জঙ্গি, দু’ পক্ষের গুলির লড়াইয়, সেনাবাহিনীর বুটের শব্দ, বারুদের গন্ধ, সবকিছু গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল। তবে এই অশান্তির জেরে রোজ স্কুলে যেতে পারতেন না তিনি৷ অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যেত স্কুল৷ ফলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ত। রুবেদা নিজেও ছিলেন একজন ভুক্তভোগী। কিন্তু সেই সব বাধা কাটিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গিয়েছেন এই পাহাড়ি কন্যা।

রুবেদা

রুবেদার বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়েকে নিয়ে৷ তিনি চাইতেন মেয়ে আইপিএস অফিসার হবেন। বাবার সেই স্বপ্নকে কখন যেন নিজের করে নিয়েছিলেন রুবেদা৷ জঙ্গিদের চোখরাঙানি তাঁকে রুখতে পারেনি৷ এক সাক্ষাৎকারে এই আইপিএস জানান,  তিনি যে সমাজে বেড়ে উঠেছে, সেই সমাজের এক জন মেয়ে আইপিএস অফিসার হবেন, এটা যে কেউ ভালো নজরে দেখবেন না, সেটা তিনি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন৷ তিনি খুব ভালো ভাবেই জানতেন এই স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক লড়াই করতে হবে তাঁকে।

রুবেদা

তবে আইপিএস অফিসার হিসাবে কেরিয়ার শুরুর আগে শ্রীনগর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেন রুবেদা। কিন্তু, ডাক্তার হওয়া তাঁর লক্ষ্য ছিল না। ফলে ডাক্তারির পাশাপাশি শুরু করেছিলেন ইউপিএসসির প্রস্তুতি৷ রুবেদার কথায়, ‘‘আইপিএস-কে বেছে নেওয়া ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ কিন্তু, আইপিএস পাশ করার পর মনের মধ্যে আরও একটা বিষয় উথাল-পাথাল করতে থাকে৷ সমাজ এটাকে কী ভাবে নেবে। ফলে পাশ করলেও আইপিএসের চাকরি করব কি না তা নিয়ে একটা দোলাচল ছিল৷ কিন্তু, এই লড়াইয় আমি পরিবারকে পাশে পেয়েছি৷ তাঁরা আমারা সাহস ও সমর্থন জুগিয়েছে।”

রুবেদা

২০১৩ সালে প্রথমবার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন রুবেদা। শুধু তাই নয়, জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা হিসাবে ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশও করেন৷ তিনিই জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম মহিলা আইপিএস অফিসার। আইপিএস পাশ করার পর হায়দরাবাদ থেকে প্রশিক্ষণ নেন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ খুবই কঠিন ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে চেন্নাইয়ে অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার হিসাবে কাজে যোগ দিই।”

মহিলাদের কাছে অনুপ্রেরণার প্রতীক রুবেদা। তবে আইপিএস হওয়ার পরেও থেমে যাননি তিনি। দ্বিতীয়বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। এ বারও সফল। আইপিএস হিসাবে কাজ করার পর আমলার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এই তেজস্বিনী।

রুবেদা জানিয়েছেন, কাশ্মীরের মেয়েদের ইউপিএসসি পরীক্ষায় উৎসাহিত করা তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। এ কাজে যাতে তাঁরা পরিবারের সমর্থন পান, সেই কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷