নয়াদিল্লি: বুথ ফেরত সমীক্ষায় মিলেছিল ইঙ্গিত৷ সেই ইঙ্গিত অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল৷ কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে পঞ্জাবে ক্ষমতা দখলের পথে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি৷ ১১৭ আসনের মধ্যে ইতিমধ্যেই ৯০টি আসন দখল করে নিয়েছে আপ৷ অন্যান্য রাজ্যেও খুলেছে খাতা৷ অন্যদিকে, তাদের সঙ্গে ন্যূনতম লড়াইটুকুও করতে পারল না কংগ্রেস৷ বড়সড় অঘটন না ঘটলে রাজ্য কংগ্রেসের দুই হেভিওয়েট মুখ মুখ্যমন্ত্রী চরণজিৎ সিং চন্নি ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নভজ্যোত সিং সিধুও পরাজিত হতে চলেছেন৷ পাঁচ রাজ্যের কোনওটাতেই লড়াইয়ে আসতে পারেনি কংগ্রেস৷ ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে পঞ্জাবের এই ফল নিশ্চিত ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ৷
আরও পড়ুন- তৃণমূল আদৌ স্বস্তিতে কি? গোয়ায় খাতায়-কলমে এগিয়ে ‘জোট’
এতদিন দিল্লি দখলের পথে বিজেপি বিরোধী প্রধান দল হিসাবে আলোচিত হত তৃণমূল কংগ্রেসের নাম৷ নরেন্দ্র মোদীর বিকল্প মুখ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ অথচ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গোয়ায় এখনও পর্যন্ত খাতাই খুলতে পারল না তৃণমূল কংগ্রেস৷ তবে তৃণমূলের জোটসঙ্গী মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি এগিয়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি আসনে৷ অন্যদিকে দিল্লির গণ্ডি ছাড়িয়ে পঞ্জাবে আপের এই উত্থান নিশ্চিত ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ৷ কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করে বিজেপিকে গুঁড়িয়ে আপ যে ভাবে পঞ্জাবের দখল নিল, তাতে জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে একটাই প্রশ্ন৷ তবে কি জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমেই বিকল্প মুখ হয়ে উঠছে আপ?
এই প্রশ্নটা নেহাতই অমূলক নয়৷ দিল্লিতে দু’দফা ক্ষমতা দখলের পর এবার পঞ্জাব৷ ধীরে ধীরে শাখা বিস্তার হচ্ছে আম আদমি পার্টির৷ আর দুটো রাজ্য যাঁর দখলে তিনিই যে বিরোধী মুখ হবে, সেটাই দস্তুর। অন্যদিকে, এখনও পর্যন্ত একটি মাত্র রাজ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে ঘাসফুল শিবির৷ গোয়ায় তৃণমূলের ফল একেবারেই উল্লেখযোগ্য নয়৷ ফলে তৃণমূল সুপ্রিমোকে আর দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী হিসাবে গণ্য করা হবে কিনা, তা নিয়েও চর্চা শুরু হয়েছে৷
কেন্দ্রের ‘বিতর্কিত’ তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে এক বছর ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের ‘আঁতুড়ঘর’ পঞ্জাবে যে ভাবে ছুটে বেরিয়েছিলেন আপ নেতারা, তা আপের জয়ের পথ আরও মসৃণ করেছে৷ পঞ্জাবে সাংসদ ভগবন্ত মান সিংকে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল আপ৷ অন্যদিকে, শেষলগ্নে চরণজিত্ সিং চান্নিকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে তুলে ধরে অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত কংগ্রেস৷ নভজ্যোত সিং সুধুর সঙ্গে সংঘাতের জেরে আগেই দল ছেড়েছিলেন ক্যাপ্টেন৷ নতুন দল গড়ে বিজেপি’র সঙ্গে জোট বাঁধেন তিনি৷ তাতে অবশ্য বিশেষ লাভ হয়নি৷ তবে নিশ্চিত ভাবেই কংগ্রেসের ভোট কেটেছেন তিনি৷ যার ফায়দা লুটেছে আম আদমি পার্টি৷
প্রাক্তন কমেডিয়ান তথা পঞ্জাবের আপ সাংসদ ভগবন্ত মান বিধানসভা ভোটে ‘মান’ বাঁচিয়েছে আপের৷ তবে আপ যে এবার পঞ্জাবের রাজনীতিতে পালাবদল ঘটাতে পারে সেই ইঙ্গিত মিলেছিল চণ্ডীগড় কর্পোরেশন নির্বাচনেই৷ যাবতীয় সব জল্পনা সত্যি প্রমাণিত করল পঞ্জাব বিধানসভা গেল আম আদমি পার্টির দখলে। তবে আম আদমি পার্টির ‘মুখ’ ভগবন্ত মানকে নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। একদিকে তাঁর মদ্যপানের অভ্যাস নিয়ে যেমন সমালোচনা হয়েছে, তেমনই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধেও খালিস্তানিপন্থী হওয়ার অভিযোগ তুলে সোচ্চার হয়েছিল কংগ্রেস। তবে সব বিতর্কই উড়ে গেল আপ ঝড়ে৷
তাছাড়া পঞ্জাবে কংগ্রেস, অকালি দলকে যে ভাবে পিছনে ফেলে উঠে এল আম আদমি পার্টি তা নিশ্চিত ভাবেই উল্লেখযোগ্য। এ প্রসঙ্গে পঞ্জাব আপের সহ-পর্যবেক্ষক রাঘব চাড্ডার মন্তব্য, ‘‘ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। পঞ্জাবে আপ জিতছে বলে নয়, কংগ্রেসের পরিপূরক হয়ে উঠছে আম আদমি পার্টি।’’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>