নয়াদিল্লি: ভারতের শৈল শহর হিমাচল প্রদেশ পর্যটকদের বড় প্রিয়৷ প্রকৃতির টানে বারবার সেখানে ছুটে যায় মানুষ৷ তবে হিমাচল প্রদেশ বললেই মনে আসে শিমলা, কুলু, মানালি, ডালহৌসির মতো শৈলশহরগুলির নাম। কিন্তু হিমাচলের পাহাড়ের কোলে লুকিয়ে রয়েছে বহু অজানা জায়গা৷ যার পাতা উল্টালে মিলবে অনেক অজানা রহস্যের খোঁজ৷ যা এখনও পর্যন্ত খুব কম মানুষেরই জানা৷
আরও পড়ুন- হাজারের নীচেই ঘোরাফেরা করছে দেশের সংক্রমণ, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু একাধিক
হিমাচল প্রদেশের এমনই একটি গ্রাম হল মালানা৷ যার পরতে পরতে লুকিয়ে অনেক রহস্য৷ বহির্জগতের আঁচ এই গ্রামকে স্পর্শ করতে পারেনি৷ বাইরের দুনিয়া থেকে সযন্তে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে তাঁরা। তবে শিক্ষা বা সভ্যতার আলো ঢোকেনি তেমনটা নয়৷ স্কুল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট— সব কিছুই আছে৷ সেই সঙ্গে আছে সম্পূর্ণ আলাদা একটি জগৎ৷
হিমাচল প্রদেশের বহু পুরনো এই গ্রামেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গণতন্ত্রের জন্ম বলে দাবি করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৭০১ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা এই গ্রামে ৬২৫টি পরিবারের বাস৷ জনসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার হবে।
কুলু থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম মালানা৷ কুলু থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা৷ ২ ঘণ্টা গাড়িতে সফর করার পর, আরও ২ ঘণ্টা আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে পায়ে হেঁটে উঠতে হয়। সেখানেই রয়েছে মালানার রহস্যময় জগত। এই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা সম্রাট আলেকজান্ডারের বংশধর৷
মালানার আরও একটি পরিচয় রয়েছে৷ এটি ‘চরস গ্রাম’ নামেই পরিচিত। কারণ এখানেই বিশ্বের অন্যতম উন্নত মানের চরস পাওয়া যায়। যা ‘মালানা ক্রিম’ নামে পরিচিত।
আসন্ন বিধানসভা ভোট নিয়ে এখন সরগরম হিমাচল৷ চার দিকে চলছে জোর প্রচার৷ কিন্তু মালানায় তার আঁচ নেই৷ বরং তাঁরা ব্যস্ত অন্য কাজে৷
বছরের তিনটি মাস এই গ্রামে তৎপরতা থাকে তুঙ্গে৷ হবে নাই বা কেন? এই তিন মাসই যে চরস তৈরি হয়৷ সেই কাজেই ব্যস্ত থাকেন গ্রামবাসীরা। বছরের বাকি ৯ মাসের উপার্জন হয় এই তিন মাসেই৷ যে গাছ থেকে চরস তৈরি হয়, বছরের এই তিন মাসই সেই গাছ জন্মায়।
‘দৈনিক ভাস্কর’-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, এই তিন মাসে মালানা গ্রামে প্রতি দিন ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার চরস তৈরি হয়। দিনভর চরস বানিয়ে এক এক জন ১০ হাজার টাকাও উপার্জন করেন।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক জন দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করে ১২ গ্রাম চরস তৈরি করতে পারেন। ১০ গ্রাম চরসের মূল্য ৮ হাজার টাকা। গ্রামবাসীরা দিনে প্রায় সাড়ে ১৪ কেজি চরস তৈরি করেন৷ যার দাম এক কোটি টাকারও বেশি।
মাসে প্রায় ৪৩২ কেজি চরস তৈরি হয় মালানায়৷ যার বাজার মূল্য ৩৬ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ তিন মাসে এই গ্রামের উপার্জন মোট ১০৮ কোটি টাকা৷
এতো গেল চরসের কথা৷ এছাড়াও আরও নানা নিয়ম রয়েছে এ মুলুকে৷ এখানে বাইরের লোকজনের প্রবেশাধিকার রয়েছে ঠিকই৷ সেই সঙ্গে রয়েছে গুচ্ছ বিধিনিষেধ৷ যা লঙ্ঘন করলেই নামবে শাস্তির খাঁড়া৷ হতে পারে বিপুল অঙ্কের জরিমানাও৷
মালানায় রয়েছে নিজস্ব শাসন, রয়েছে আইন৷ যেমন এই গ্রামে আসা কোনও মানুষ গ্রামবাসী এবং তাঁদের কোনও জিনিস ছুঁতে পারবেন না। এই গ্রামের নিজস্ব ভাষাও রয়েছে। যে ভাষার নাম কানাশি৷ গোটা হিমাচল প্রদেশে এই ভাষার কোনও ব্যবহার নেই।
এই গ্রামে কোনও ঘটনা ঘটলে বা অপরাধ করলে ব্যবস্থা নেয় গ্রাম পরিষদ৷ এখানে পুলিশ ডাকার অনুমতি নেই৷ এখানে দেশের আইন বা শাসন চলে না। কোনও অভিযুক্ত যদি পুলিশের সহযোগিতা চান, তা হলে তাঁকে জরিমানা করে গ্রাম পরিষদ। এখানে গ্রাম পরিষদই শেষ কথা৷
এই গ্রামে ঠাকুর সম্প্রদায়ের মানুষ জনই বেশি। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেদের ঠাঁই গ্রামের বাইরে৷ পঞ্চায়েত আছে শুধু নামেই, যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেন গ্রামবাসীরাই৷
এই গ্রামে ছবি তোলার উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু কোনও ভিডিয়ো করার ছাড় নেই৷ এখানে দোতলা, তিনতলা বাড়ি রয়েছে। নীচতলাকে বলা হয় খুরাং৷ এখানে গবাদি পশু এবং জ্বালানি কাঠ রাখা হয়। দোতলাকে বলা হয় গায়িং৷ এখানে খাবার এবং ব্যবহারের যাবতীয় জিনিস থাকে৷ তিনতলা হল পাতি৷ এখানে রয়েছে শোয়ার ঘর৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>