নয়াদিল্লি: দেশের সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর ৯ মাস পর নতুন সিডিএস পেল দেশ৷ পরবর্তী চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হলেন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৌহান৷ গত ৪০ বছর ধরে ভারতীয় সেনার বিভিন্ন পদে কাজ করার পর তিন সেনার সর্বোচ্চ পদে বসছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি সেনা সচিব হিসাবেও কাজ করবেন জেনারেল চৌহান৷ । বুধবার এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- প্রয়াত সিডিএস বিপিন রাওয়াতের জায়গায় কে? ঘোষণা কেন্দ্রের
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। কিন্তু ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তামিলনাড়ুতে এক চপার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় সস্ত্রীক জেনারেল রাওয়াতের৷ এর পর থেকে ভারতের সামরিক বাহিনীর এই সর্বোচ্চ পদটি ফাঁকাই ছিল। সিডিএস পদে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা নিয়ে জল্পনা চলছিল৷ একটা সময় মনে করা হচ্ছিল সেনা প্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানে সিডিএস পদে বসতে পারেন। কিন্তু, জেনারেল নারাভানেকে টপকে এই পদ পেলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৌহান।
সেনাবাহিনী, নৌসেনা এবং বায়ুসেনা এই তিন বাহিনীর পরিষেবার মধ্যে সামঞ্জস্য আনতেই নয়া পদটি তৈরি করা হয়েছিল৷ পদাধিকার বলে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ চিফ অব স্টাফ কমিটির স্থায়ী চেয়ারম্যান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রধান সামরিক উপদেষ্টাও বটে। তবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌহানকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব সঁপার আগে সিডিএস নিয়োগের নিয়মে সংশোধন করতে হয় কেন্দ্রকে। কারণ, আগে কর্মরত লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের মধ্যে থেকেই শুধু মাত্র চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ নিয়োগ করা হত৷ কিন্ত, জেনারেল রাওয়াতের প্রয়াণের পর সেই নিয়ম সংশোধন করে কেন্দ্র জানায়, শুধু কর্মরত লেফটেন্যান্ট জেনারেলরা নন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেলরাও এই পদে বসতে পারবেন। তবে তাঁদের বয়স ৬২ বছরের কম হতে হবে। পরিবর্তিত নিয়ম মেনেই অনিল চৌহান দেশের সেনা সর্বাধিনায়ক হলেন।
১৯৬১ সালের ১৮ মে জন্ম হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৌহানের। জাতীয় প্রতিরক্ষা অ্যাকাডেমি এবং ভারতীয় সামরিক অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র চৌহান ১৯৮১ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১১ নম্বর গোর্খা রাইফেলে নিযুক্ত হন৷ বহু বছর নর্দান কমান্ডের হয়ে বারামুলা সেক্টরে কর্মরত ছিলেন তিনি। কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ রোখার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে। কাশ্মীর সম্পর্কে তাঁর এই ধারণা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আর সেই অভিজ্ঞতাকেই পুঁজি করতে চায় ভারত৷ পুলওয়ামা হামলার বদলা নিতে ২০১৯ সালে ভারত যখন পাকিস্তানের বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক চালায় এবং জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের ঘাঁটি উড়িয়ে দেয়, তখন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনের ডিরেক্টর জেনারেল ছিলেন অনিল চৌহান। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরেই তিনি ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ হন। ২০২১ সালের মে মাসে এই পদে থেকে অবসর নেন। একসময়, অ্যাঙ্গোলায় রাষ্ট্রসংঘের অভিযানেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল অনিল চৌহান৷ চিন সম্পর্কেও তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা রয়েছে৷
সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরেও, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক কৌশলগত বিভিন্ন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌহান। সেনাবাহিনীতে তার বিশেষ পরিষেবার জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিতও হয়েছেন। পরম বিশেষ সেবা পদক, উত্তম যুদ্ধ সেবা পদক, অতি বিশেষ সেবা পদক, সেনা পদক, বিশেষ সেবা ইত্যাদি পদকে সম্মানিত হয়েছেন তিনি।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>