রাঁচি: দুর্নীতির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে চলছে তিনটি জনস্বার্থ মমলা৷ প্রথম অভিযোগ, শেল কোম্পানিতে হিসাব বহির্ভূত বিনিয়োগ৷ দ্বিতীয় মামলাটি হল পাথর খাদানের ইজারা নিজের নামে করা এবং তৃতীয় মামলাটি এমএনআরইজিএ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দুর্নীতি৷ লাভজনক সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার মামলাতে বেশ কোনঠাসা ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে শুনানি শেষ হয়েছে। যে কোনও দিন রায় ঘোষণা হতে পারে। এই মামলায় ক্ষমতাসীন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভার সদস্যপদ খারিজের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ সেক্ষেত্রে আর বেশিদিন মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন না সোরেন। হেমন্তের বিধানসভার সদস্যপদ খারিজ হয়ে গেলে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের শূন্য পদে বসবেন কে? এই প্রশ্নেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতিতে৷
আরও পড়ুন- প্রিজন ভ্যানে বসে জন্মদিনের কেক কাটল খুনি! প্রশ্নের মুখে পুলিশের ভূমিকা
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, হেমন্ত পদ থেকে সরলেই ঝাড়খণ্ডের কুর্সি দখলে ঝাঁপাবে গেরুয়া শিবির৷ শুরু হবে দল ভাঙানোর চেনা খেলা৷ ইতিমধ্যেই বিধায়ক কেনার সেই গেম শুরু করে দিয়েছে বিজেপি৷ বিপুল টাকা সহ বাংলা থেকে ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর সেই বিষয়টি জলের মতো স্পষ্ট৷ ঝাড়খণ্ড রাজনীতিরতে এই ডামাডোল পরিস্থিতির মধ্যেই উঠে আসছে একটি নাম-‘কল্পনা সোরেন’। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের স্ত্রী। তবে হেমন্ত ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনি ‘বউদি’ বলেই পরিচিত।
রাজ্য রাজনীতির পরিমণ্ডলে তিনি চেনা মুখ হলেও, সক্রিয় ভাবে দলীয় কাজকর্ম বা কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। বরং তাঁকে বার বার দেখা গিয়েছে শিশু ও নারী কল্যাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথির আসনে৷ মুখ্যমন্ত্রীর তখত ধরে রাখতে সেই বউদি-কেই সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে আনতে চাইছে জেএমএম৷ ‘বেটার হাফের’-উপর আস্থা রাখতে চাইবেন সোরেনও৷ তেমনটা হলে ২৫ বছর পর বিহারের পুরনাবৃত্তি ঘটবে ঝাড়খণ্ডেও। ১৯৯৮ সালে একইভাবে স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছিলেন আরজেডি সুপ্রিমো লালুপ্রসাদ যাদব।
ঝাড়খণ্ডের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে কল্পনার নাম উস্কে দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর দাবি, হেমন্ত পদত্যাগ করলেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে সোরেন-পত্নী বা তাঁর পরিবারের কোনও সদস্যকে। এবং এই দৌড়ে নিশ্চিত ভাবেই এগিয়ে রয়েছেন কল্পনা। জোরকদমে সেই প্রস্তুতি চলছে শাসক শিবিরে। বিজেপি সাংসদের এই মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোড় জল্পনা৷ যদিও হেমন্ত বা তাঁর দলের তরফে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি৷
রাজনীতির সমীকরণ বলছে, সোরেন মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরলেও ঝাড়খণ্ডে সরকার পড়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷ কারণ ৮১ সদস্যের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ৪২৷ এর মধ্যে জেএমএম-সহ শাসক জোটের মোট বিধায়ক সংখ্যা ৫০। জেএমএমের একারই বিধায়ক সংখ্যা ৩০৷ ১৮ জন কংগ্রেসের। এছাড়া সিপিআই (এমএল) এবং এনসিপি-র একজন করে বিধায়ক রয়েছেন। ৩১ জন বিধায়ক রয়েছেন বিজেপি জোটের৷ তবে পরিবর্তিতি পরিস্থিতিতে ঝাড়খণ্ডে মহারাষ্ট্রের পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা নিশ্চিতভাবেই করবে বিজেপি৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই জেএমএম-এর পাল্টা চাল হবে ‘বউদি’৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>