দীর্ঘ ১ বছরের আন্দোলন-লড়াই-কয়েকশো মৃত্যু, ফিরে দেখা কৃষক আন্দোলন

দীর্ঘ ১ বছরের আন্দোলন-লড়াই-কয়েকশো মৃত্যু, ফিরে দেখা কৃষক আন্দোলন

 নয়াদিল্লি:  তিনটে কৃষি আইন৷ আর এক বিতর্কিত অধ্যায়৷ কৃষক আন্দোলন, ধর্মঘট, কয়েকশো মৃত্যুতে ভারতের ইতিহসে যুক্ত হল এক নয়া অধ্যায়৷ গত এক বছর ধরে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে দিল্লির উপকন্ঠে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন কৃষকরা৷ অবশেষে পিছু হঠল কেন্দ্র৷ আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জানালেন বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে৷ 

আরও পড়ুন- পাহাড় থেকে হু হু নামছে জল! ধসের আতঙ্কে তিরুমালার মন্দিরে আটকে পড়া পুণ্যার্থীরা

গত এক বছরে একটা দিনের জন্যেও ছেদ পড়েনি কৃষক আন্দোলনে৷ বহুবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে৷ কিন্তু কোনও সমঝোতায় যেতে রাজি হননি কৃষকরা৷ তাঁরা নিজেদের অবস্থানে এককাট্টা থেকেছেন৷ এই তিন কৃষি আইনের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও হয়েছে৷ সেই মামলায় প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে কেন্দ্র সরকার তিনটি আইন স্থগিতের নির্দেশ দেন৷ পরে অবশ্য পাল্টা মামলা দায়ের করা হয়৷ সেই মমলা বিচারাধীন ছিল৷ 

কৃষি বিল আইনে পরিণত হতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়েন পঞ্জাব, হরিয়ানা সহ প্রায় গোটা দেশের কৃষকরা৷ দিল্লি সীমান্তে আছড়ে পড়ে আন্দোলনের ঢেউ৷ কৃষকদের পিছু হঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পুলিশ৷ ব্যারিকেড করে দেওয়া হয় টিকরি সীমান্ত৷ কৃষক আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয় দিল্লি যাওয়ার রাস্তা৷ 

কৃষক আন্দোলন

নিজেদের ট্রাক্টর ও ট্রলিতে বেশ কয়েক মাসের রেশন নিয়ে, খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে শীতের রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়ে  দিল্লির পথে রওনা দিয়েছিল কৃষকরা৷ এর পর প্রজাতন্ত্র দিবসে লালকেল্লায় পৌঁছে গিয়েছিল কৃষক আন্দোলন৷ সংঘর্ষ, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি চার্জ করেও সেদিন পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি প্রতিবাদী কৃষকদের। তিন সীমানায় সব ব্যারিকেড ভেঙে চুরমার করে কৃষকরা দখল নিয়েছিল লালকেল্লার৷ 

আন্দোলনের চাপে পড়ে সরকার বলেছিল, কৃষিপণ্যের জন্য সরকারের ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্য’ বা এমএসপিতে কোনও রকম প্রভাব পড়বে না৷ কিন্তু কৃষকরা সেই কথায় বিশ্বাস করেনি। কৃষকদের বক্তব্য ছিল, বিভিন্ন কৃষিপণ্যের জন্য সরকারের তরফে যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য তাঁরা পেতেন, এই তিন আইন চালু হলে আর তা পাওয়া যাবে না৷ চলতে থাকে লাগাতার আন্দোলন৷ তাঁদের পাশে দাঁড়ায় প্রতিটি বিরোধী রাজনৈতিক দল৷ প্রতিবাদে মোদীর ক্যাবিনেট থেকে ইস্তফা দেন অকালি দলের হরসিমরত কউর৷ 

কৃষক

আরও পড়ুন- অবশেষে পিছু হঠল কেন্দ্র, তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণা মোদীর

রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে আন্দোলনকারীরা ট্রাক্টর পুড়িয়ে আন্দোলন করেছে৷ এর পরেই আন্দোলনের উপর পুলিশি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। কিন্তু আন্দোলনকারীদের থামানো যায়নি৷ বহুবার ধর্মঘট হয়েছে৷ রেল অবরোধ হয়েছে৷ কৃষকদের দখলে চলে গিয়েছে ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক৷ কনকনে ঠাণ্ডা থেকে প্রখর রৌদ্র, বৃষ্টি উপেক্ষা করে চলেছে কৃষক আন্দোলন৷ মৃত্যু হয়েছে কয়েকশো মানুষের৷ আজ সেই আন্দোলনের জয় হল৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

17 − 7 =