কলকাতা: বদলি সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছিল৷ অবশেষে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বদলি নিয়ে সবুজ সঙ্কেত দেন৷ তবে জানান, এবার থেকে বদলির আবেদন করতে হবে অনলাইন পোর্টালে৷ কিন্তু এই পোর্টালকে কেন্দ্র করেও দেখা দেয় একাধিক সমস্যা৷ এর পর রাজ্য সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সুবিধার্থে তাঁদের সুবিধা অনুযায়ী বদলির প্রস্তাব করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ পরিকাঠামোর অভাব এবং পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি৷ এবার তা গতি পাবে৷ তবে, শিক্ষা দফতরের নয়া বিজ্ঞপ্তি দেখে নানান প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শিক্ষকদের একাংশ৷
আরও পড়ুন- পোস্টিং কলকাতায়, বেতন ২০ হাজার, অষ্টম শ্রেণি পাস হলেই ডাক বিভাগে নিয়োগ
শিক্ষা দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের স্কুল নির্বাচন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিপুল কাজের চাপ, কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি, একাধিক মামলা এবং কম কর্মী সংখ্যার জন্য শিক্ষকদের বদলি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছিল৷ তবে এখন যে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা বদলি চান, তাঁরা স্কুল শিক্ষা কমিশনারের কাছে আবেদন জানাতে পারবেন৷ যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি আবেদন বিবেচনা করা হবে৷ উপযুক্ত ক্ষেত্রে বদলির আনুষ্ঠানিক আদেশ জারির জন্য ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন-এর কাছে সুপারিশ করতে হবে৷ শিক্ষা দফতরের নয়া বিজ্ঞপ্তি ঘিরে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বাংলায় কয়েক হাজার শিক্ষক৷
কেননা, গত সরস্বতী পুজোর আগের স্কুল শিক্ষকদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সুখবর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানিয়েছিলেন, শিক্ষকরা নিজের জেলায় বদলির সুযোগ পাবেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরও থমকে ছিল শিক্ষকদের বদলি৷ স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে পারস্পরিক বদলি জন্য গত বছর শেষের দিকে হেয়ারিং হলেও নতুন স্কুলে নিয়োগের ছাড়পত্র নিয়ে সমস্যায় পড়েন বহু শিক্ষক৷ কমিশন ও বিকাশ ভবনের সমন্বয়ের অভাব নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শিক্ষকদের একাংশ৷ এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ ছিল শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলি৷ হালে তা চালু হলেও ছিল গুচ্ছ সমস্যা৷ সাধারণ বদলি বন্ধ ২০১৫ থেকে৷ আর তাতেই শিক্ষকদের একাংশকে পড়তে হয় সমস্যায়৷ মিউচুয়াল ট্রান্সফার বা পারস্পরিক বদলি ও ট্রান্সফার অন স্পেশ্যাল গ্রাউন্ডে বদলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তাতেও ওঠে দুর্নীতির অভিযোগ৷ এবার শিক্ষকদের জন্য সুখবর শুনিয়ে গত ১৬ অক্টোবর শিক্ষা দফতর শিক্ষকদের বদলি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে৷
আরও পড়ুন- কীসের ভিত্তিতে TET-এর পুনর্মূল্যায়ন? ফের মামলা কলকাতা হাইকোর্টে
এর আগে বলা হয়েছিল অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে মিউচুয়াল ট্রান্সফারের আবেদন করা যাবে। যাঁরা ইতিমধ্যে আবেদন করেছেন সাতদিনের মধ্যে সেই আবেদন মঞ্জুর করতে হবে। কিন্তু আবেদন করতে গিয়ে একাধিক সমস্য দেখা দেয়৷ শিক্ষা দফতরের আইওএসএমএস পোর্টালে শিক্ষদের প্রোফাইলে তিনটি সেকশনের ( আপার, সেকেন্ডারি ও হায়ার সেকেন্ডারি) অপশন দেওয়া হয়েছিল৷ সেই অপশনে ‘নর্মাল সেকশন’ না থাকায় দেখা দেয় বিপত্তি। সাধারণত ২০১৬ সালের আগে নিউ সেট আপ জুনিয়র হাই স্কুলগুলিতেও নর্মাল সেকশন হিসাবেই শিক্ষকরা নিযুক্ত হতেন। সেই সময় আপার প্রাইমারি হিসাবে আলাদা কোনও সেকশন ছিল না। কিন্তু শিক্ষক প্রোফাইলে নর্মাল সেকশন এর কোনও অপশন না থাকায় ২০১৬ সালের আগে কাজে যোগ দেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমস্যায় পড়েছেন৷ অর্থাৎ তারা সেকেন্ডারি সেকশন (নবম-দশম) নিতে পারছে না, কারণ তাঁদের স্কুলে অ্যাকাডেমিক সেকশন পঞ্চম থেকে অষ্টম পর্যন্ত। আবার আপার প্রাইমারি সেকশনও (পঞ্চম থেকে অষ্টম) নিতে পারছে না৷ কারণ তাঁরা ২০১৬ সালের আগে নর্মাল সেকশনে (পঞ্চম-দশম) নিয়োগ পেয়েছিলেন। নর্মাল সেকশনকে ভেঙেই পড়ে আপার ও সেকেন্ডারি সেকসন করা হয়৷ এর ফলে জুনিয়র হাই স্কুলের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষকরা ট্রান্সফারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল৷
শিক্ষা দফতরের নয়া বিজ্ঞপ্তি বেশকিছু ধোঁয়াশা আছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার৷ তাঁর দাবি, ‘‘নতুন এই বিজ্ঞপ্তিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন ও ডিআই অফিসের ভূমিকাকে ব্রাত্য করে কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশনকে সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু যেহেতু ভাক্যান্সি লিস্ট অনলাইনে দেওয়া হবে কিনা এখানে উল্লেখ নেই৷ তাই কোনও শিক্ষক কোন স্কুল পাবেন, সে ব্যাপারে অস্বচ্ছতার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে৷ নতুন নিয়মে কী পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে, অর্থাৎ অনলাইন না অফলাইনে কী কী তথ্য সাবমিট করতে হবে, সে ব্যাপারে কিছুই পরিষ্কার করে বলা নেই৷ সবচেয়ে বড় কথা, বদলির ক্ষেত্রে সকলের কাঙ্খিত এবং যুক্তিযুক্ত পদ্ধতি আবেদনের ভিত্তিতে বদলি বা জেনারেল ট্রান্সফার কবে চালু হবে সে ব্যাপারে কোনও বার্তা নেই৷’’