জীবনের এই অপূরণীয় ক্ষতির দায়ভার নেবে কি? প্রশ্ন তুলে ডেপুটেশন টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের

জীবনের এই অপূরণীয় ক্ষতির দায়ভার নেবে কি? প্রশ্ন তুলে ডেপুটেশন টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের

কলকাতা: সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সোমবার এপিসি ভবনে ডেপুটেশন জমা দিল ডিএলএড প্রশিক্ষিত প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ মঞ্চ৷ সঙ্গে চলে তাঁদের বিক্ষোভ কর্মসূচি৷ মোট সাত দফা অভিযোগ তুলে এদিন ডেপুটেশন দেন টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা৷ সেই সঙ্গে বেশ কিছু প্রশ্নও তুলে ধরেন তাঁরা৷  

আরও পড়ুন- বদলি থেকে নিয়োগ, ন’দফা দাবি পেশ বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির

মঞ্চের বক্তব্য, ২০১৫ সালে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন প্রাথমিকে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের পরেই যাঁরা সেই সময়ে প্রশিক্ষণরত ছিলেন, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে৷ সবশেষে সুযোগ পাবেন অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীরা৷ কিন্তু অভিযোগে, পর্ষদ সেই নির্দেশ অমান্য করে নিয়োগ করেছে৷ প্রশিক্ষনরত প্রার্থীদেরকে বঞ্চিত করে বহু অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী নিয়োগ করা হয়েছে৷ অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীদের থেকে অনেক এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও, আজ প্রায় ৩০০ জন প্রার্থী চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ 

তাঁরা আরও জানান, নিয়োগ পর্ব চলার সময় শুধুমাত্র ২০১৪-২০১৬ ও ২০১৫-২০১৭ এই দুটি ব্যাচই প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ছিল৷ পরবর্তী অন্য কোনও ব্যাচ ২০১৪-র প্রাথমিক নিয়োগে শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার শর্ত পূরণ করছে না। ২০১৬ সালে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রায় এক-দেড় বছর পর ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর প্রাইমারি বোর্ড একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে৷ সেই মোতাবেক ২০১৪-২০১৬ ব্যাচকে চাকরি দেওয়া হয়৷ সুযোগ পান দিল্লীর আরসিআই (RCI) বোর্ড থেকে ২০১৫-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ট্রেনিং নেওয়া প্রার্থীরাও৷ অথচ দুঃখজনক বিষয় হল, প্রাইমারি বোর্ড তাদের নিজস্ব বোর্ড থেকে ২০১৫-২০১৭ সেশনে ট্রেনিং করা একজন প্রার্থীকেও চাকরি দেয়নি৷

প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টে ২০১৭-র ১ মার্চের অর্ডার ছিল (কেস নং-WP 25581W of 2016)  ২০১৪-২০১৬  ব্যাচকে ট্রেন্ড ক্যান্ডিডেট হিসেবে বিবেচনা করে নিয়োগ দেওয়া যাবে না৷ তা সত্বেও পর্ষদ ওই বছর নভেম্বর মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে৷ সেই সঙ্গে দিল্লি বোর্ডের আরসিআই  স্বীকৃত ২০১৫-২০১৭ ব্যাচের প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ থেকে ২০১৫-২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ট্রেনিং করা ৩০০ টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীকে চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার জন্য তাঁরা সম্পূর্ণ দায়ী করেছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি বোর্ডকেই৷  কারণ অনেক দিন আগে সেশান শেষ হলেও পরীক্ষা ও রেজাল্ট আটকে রেখেছিল প্রাইমারি বোর্ড।

আরও পড়ুন- ২০২১ সালে কতটা বাড়তে পারে আপনার বেতন? বলছে সমীক্ষা

তাঁদের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও প্রাইমারি বোর্ড মামলার জন্য প্রাইমারিতে নিয়োগ আটকে রয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল৷ মামলা করার আগে বঞ্চিত প্রার্থীরা বিভিন্ন দফতরের দরজায় দরজায় ঘুরে অনেক আবেদন নিবেদন করেছিলেন৷ কিন্তু কোনও লাভ হয়নি৷ উল্টে বঞ্চিত প্রার্থীদেরকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। হাইকোর্টে মামলা ঝুলে থাকার অন্যতম কারণ প্রাইমারি বোর্ডের সদিচ্ছার অভাব৷ দিনের পর দিন শুনানিতে সরকার/পর্ষদ পক্ষের উকিল অনুপস্থিত থেকেছে৷ 

টেট উত্তীর্ণ এই প্রার্থীদের প্রশ্ন, বাইরে থেকে দিল্লির আরসিআই বোর্ড থেকে যাঁরা ২০১৫-২০১৭ সেশনে ট্রেনিং করেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাইমারি বোর্ড তাঁদেরকে চাকরি দিল৷ কিন্তু এই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যাঁরা প্রাইমারি বোর্ডকে নির্দিষ্ট কোর্স ফি দিয়ে ২০১৫-২০১৭ সেশনে ট্রেনিং সম্পূর্ণ করল, তাঁদের কেন চাকরি দিল না পর্ষদ? WBBPE বোর্ড থেকে ২০১৫-২০১৭ সেশনে ট্রেনিং করা বহু প্রার্থীই আজ চাকরির নির্ধারিত বয়সসীমার প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে৷ আগামী টেটে তাঁরা আর আবেদনই করতে পারবেন না৷ টেট পাশ করা সত্ত্বেও তাঁদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হল। তিনি বা তাঁরা কী মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছেন, তা কি একবারও বিবেচনা করে দেখা হয়েছে? অন্য বোর্ড থেকে ট্রেনিং করে প্রায় ২ বছর চাকরি জীবন অতিবাহিত করে ফেলল কিছু প্রার্থী৷ অথচ বঞ্চিত প্রার্থীরা দরজায় ঘুরেও চাকরি নিশ্চিত করতে পারল না৷ তাঁদের জীবনের এই অপূরণীয় ক্ষতির দায়ভার কে নেবে? 
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve + seventeen =