কলকাতা: ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত তিনটি পর্যায় মিলে ৩৬৫ দিন পূর্ণ হল নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ এই দুটি স্তরের মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ চাকরিতে নিয়োগপত্র না পাওয়া হবু শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীদের আন্দোলন। প্রথম পর্যায়ে ২০১৯ সালে কলকাতার প্রেসক্লাবের সামনে ২৯ দিনের অনশন। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সেন্ট্রাল পার্কের পাঁচ নম্বর গেটের সামনে ১৮৭ দিনের অবস্থান বিক্ষোভ ও অনশন। তৃতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ১৪৯ দিন ব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে ধর্না চলছে।
আরও পড়ুন- বালিগঞ্জ পেয়ে নেত্রীকে ধন্যবাদ বাবুলের, আসানসোলে লড়বেন ‘বিহারিবাবু’
২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ এই দুটি স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের জন্য পরীক্ষা গ্রহণ করেছিল। শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে কলকাতা গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল, নিয়োগের সূচনা থেকেই উক্ত গেজেটের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম গুলিকে লঙ্ঘন করে গেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন, এমনই অভিযোগ। চাকরি প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর ভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশের কথা নিয়মে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও প্রকাশিত মেধাতালিকায় চাকরি প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর উল্লেখ করা হয়নি। আরও অভিযোগ, ১:১.৪ অনুপাতে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টিও লঙ্ঘন করে গেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন।
আরও পড়ুন- ইতিহাসে বিভ্রাট! কঠিন প্রশ্নপত্রে নাজেহাল মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থীরা
সাধারণ মেধাতালিকা প্রকাশের পরেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, গণিত একাধিক বিষয়ে পুনরায় নতুন প্রার্থীদের নাম অবৈধভাবে সংযোজন করে দেওয়া হয়েছে। আপডেট সিটে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টিও মান্যতা দেয়নি স্কুল সার্ভিস কমিশন। মেধাতালিকা ভুক্ত সামনের দিকে থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ না করে অনেক পিছনের দিকের প্রার্থীদের র্যাঙ্ক ড্রপ করে চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি মেধাতালিকায় কোথাও নাম না থাকা ফেলকরা বহু প্রার্থীদের অবৈধভাবে চাকরিতে নিয়োগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন এমনটাই জানিয়েছেন ধর্নারত বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকা পদপ্রার্থীগণ। তাই ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ সালে এসেও বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত।
প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি, ফলশ্রুতি কবে হবে? কবে ন্যায়বিচার পাবেন বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ? এমনটাই প্রশ্ন বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের অভিভাবকগণদের। ২০১৯ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেস ক্লাবের সামনে বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের মঞ্চে গিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে মেধাতালিকা ভুক্ত কোনো প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হবে না। প্রয়োজনে আইনের কিছু পরিবর্তন করে হলে ও তাদের নিয়োগের সুব্যবস্থা করা হবে। আবার ২০২১ সালের ১০ আগস্ট বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শুভশঙ্কর সরকার নিউজ চ্যানেলের সামনে বার্তা দিয়েছিলেন যে মেধাতালিকাভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের বিষয়টি ইতিবাচক দিক থেকে বিবেচনা করা হবে। উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য চল্লিশ দিনের সময়ও নেওয়া হলেও উক্ত সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ২০২১ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অনির্দিষ্ট কালের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ।
আরও পড়ুন- শুরু হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের করোনা টিকাকরণ!
সরাসরি গান্ধী মূর্তির পাদদেশের ধর্না মঞ্চে এসে ধর্নারত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মদন মিত্র, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, DYFI-এর রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় সহ কয়েকজন নেতৃত্ব। এসেছিলেন মহিলা কবি মন্দাক্রান্তা সেন, ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাওসাদ সিদ্দিকি, বিহার থেকে যুব বিপ্লবী অ্যাসোসিয়েশনের বিধায়ক মনোজ মঞ্জিল, কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাতেও বিশেষ কোনও লাভ হয়নি।