কলকাতা: জীবনকে নিরাপত্তার বেড়াজালে বেঁধে ফেলতে স্বাস্থ্যবিমা করানোটা আবশ্যক৷ অসুখ-বিসুখ কখনও বলে আসে না৷ অজানা পরিস্থিতির জন্য আগে থেকে তৈরি হয়ে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ এক্ষেত্রে ত্রাতা হতে পারে স্বাস্থ্য বিমা৷ হাসপাতাল খরচ থেকে ওষুধের খরচ, আনুষাঙ্গিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সব কিছুরই টাকা পাওয়া যায় স্বাস্থ্যবিমা থাকলে। তবে শুধুমাত্র বিমা কিনলেই হবে না৷ প্রয়োজনের সময় কী ভাবে সেই স্বাস্থ্যবিমা দাবি করতে হবে, সেটাই কিন্তু জেনে রাখা দরকার৷
আরও পড়ুন-টয়লেট সিটের থেকে ৪০ হাজার গুণ বেশি জীবাণু জলের বোতলে! আপনি জানতেন
দু’ভাবে স্বাস্থ্যবিমার দাবি করা যেতে পারে৷ ক্যাশলেস এবং রিইমবার্সমেন্ট৷ তবে এই দুই পদ্ধতির ক্ষেত্রেই কিছু নিয়ম রয়েছে৷
ক্যাশলেস বা নগদহীন পদ্ধতি –
প্রতিটি ইন্সিওরেন্স বা বিমা সংস্থার সঙ্গেই কিছু হাসপাতাল বা নার্সিংহোম সংযুক্ত থাকে। ইন্সিওরেন্সের ভাষায় একে বলে, ‘নেটওয়ার্ক হসপিটাল’। আপনার যে সংস্থায় স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে, সেই সংস্থার নেটওয়ার্ক হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে চিকিৎসা করালে, সে ভাবে নগদ জমা দিতে হয় না। তবে একদমই যে কোনও টাকা দিতে হয় না, তেমনটা নয়৷ তবে পরিমাণ খুবই নগন্য৷ চিকিৎসাজনিত বিল ছাড়া কয়েকটি নন-মেডিক্যাল রশিদ বাবদ সামান্য কিছু টাকা জমা দিতে হয়। এই ধরনের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় চিকিৎসা করানোটা কিন্তু অনেকটাই সহজ।
ক্যাশলেস বা নগদহীন দাবির ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি—
১। প্রতিটি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কিন্তু আলাদা। যেমন কোনও হাসপাতালে একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্যাশলেস ক্লেমের যে ধরন তাঁর সঙ্গে কর্পোরেট গ্রুপ পলিসির ক্লেমের ধরন এক নয়৷ ফলে আগে থেকে জেনে নিতে হবে পলিসির ধরন ঠিক কী।
২। রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আগেভাগেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের ক্লেম বিভাগে বেশ কিছু নথি জমা করতে হয়। যেমন, কেওয়াইসি, পলিসি কপি, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি।
৩। পলিসি করার সময় অবশ্যই জেনে নিন আপনার পলিসিতে কোনও ক্যাপিং ক্লজ বা কো-পে ক্লজ আছে কি না। এই ক্যাপিং ক্লজ বা কো-পে ক্লজ থাকার অর্থ, চিকিৎসার খরচ বাবদ একটি নির্দিষ্ট শতাংশ অর্থ বিমা সংস্থার থেকে পাবেন আপনি। বাকি টাকা নিজের পকেট থেকে গুনতে হবে। যদি বিমায় এমন কোনও শর্ত থেকে থাকে, তা হলে প্রথমেই জেনে নিন আপনাকে ঠিক কত পরিমাণ অর্থ জমা করতে হবে।
৪। বিমা সংস্থার সঙ্গে যে হাসপাতাল বা নার্সিংহোমগুলির সংযোগ থাকে, সেগুলি মাঝে মধ্যেই পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই রোগী ভর্তির আগে জেনে নিন সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল বা নার্সিংহোমটি আপনার বিমা সংস্থার নেটওয়ার্কের অন্তর্ভূক্ত কি না।
৫। অনেক সময় ক্লেমের নথি পত্র যাচাই করে দাবি মতো চূড়ান্ত অনুমোদন আসতে দেরি হয়। অথচ ক্লেম আসার আগেই হয়তো রোগীর শারীরিক স্থিতি অনুযায়ী অবিলম্বে চিকিৎসা করা বা অপারেশন করার প্রয়োজন৷ সেই সময়ে গাঁট থেকে আপনাকেই কিছুটা নগদ অর্থ অগ্রিম জমা দিতে হয়। পরবর্তী সময়ে সেই টাকা বিমা সংস্থার থেকে ফেরত পাওয়া যায়।
৬। ক্যাশলেস প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা হলেও হাসপাতালে রোগী ভর্তির আগে ও পরে কিছু খরচ হয়েই থাকে। সেই টাকাও ফেরত পাওয়া যায়৷ এর জন্যে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় নথি-সহ নতুন করে আবেদন করতে হয়।
স্বাস্থ্যবিমার আরেকটি ভাগ হল রিইমবার্সমেন্ট৷ এই পদ্ধতির ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মনে রাখা আবশ্যক-
১। হাসপাতালে ভর্তির আগে থেকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ওষুধ বাবদ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাবদ পুরো খরচই রিইমবার্সমেন্ট পদ্ধতিতে ফেরত পাওয়া যায়৷ এর জন্য প্রয়োজনীয় নথি সহ আবেদন করতে হয়৷
২। যদি পরিকল্পনামাফিক কোনও চিকিৎসা করা হয়, সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগেই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পলিসি বিভাগে গিয়ে সমস্ত নথি জমা করতে হবে। কিন্তু, হঠাৎ করে বিপদ হলে, রোগী ভর্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিমা সংস্থাকে ভর্তির কথা জানাতে হবে।
স্বাস্থ্য বিমা সঙ্কটকালীন অবস্থায় মানুষকে সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু বিমা করার সময় সঠিক তথ্য না দিলে বা কোনও তথ্য গোপন করলে পরবর্তী সময়ে বিমার অর্থ পেতে সমস্যা হতে পারে। সেই সঙ্গে বিমা করার আগে বিমার সমস্ত নথি ও তথ্য মনযোগ সহকারে পড়ে নিন। তাতে পরবর্তীতে আপনার সুবিধাই হবে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>