নয়াদিল্লি: বাংলা জয়ের পর তৃণমূলের লক্ষ্য ‘মিশন দিল্লি’৷ ২০২৪-এর লক্ষ্যে এখন থেকেই ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে দল৷ তবে জাতীয় স্তরের এই লড়াইয়ে তাঁদের অন্যতম সঙ্গী হতে চলেছে কংগ্রেস৷ যে দলের মুখ রাহুল গান্ধী৷ তবে রাহুলে আস্থা নেই তৃণমূলের৷ দলের মুখপত্র বলছে, রাহুল এখনও বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে পারেনি৷ মানুষ চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ কেন রাহুলে আস্থা রাখতে পারছে না তৃণমূল৷ কংগ্রেসের কান্ডারি হিসাবে রাহুলের সাফল্য কতখানি? ব্যর্থতাই বা কত৷
আরও পড়ুন- মোদীর বিরুদ্ধে ‘মমতাই বিকল্প মুখ’! ‘অপ্রস্তুত’ রাহুলে ঘোর আপত্তি তৃণমূলের?
২০০৪ সালে রাজনীতির দুনিয়ায় পা রাখেন রাজীব-সোনিয়া তনয় রাহুল৷ একদা তাঁর বাবার নির্বাচনী কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের আমেঠি থেকেই লোকসভার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেন তিনি৷ এদিকে ওই বছরেই উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের সামগ্রিক ফল ছিল অত্যন্ত খারপ৷ ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১০টি আসন পায় কংগ্রেস৷ এই ফল দেখে সেই সময় দলের অন্দরেই একটি রব ওঠে৷ যা হতবাক করেছিল রাজনীতির কারবারিদেরও৷ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সক্রিয় রাজনীতিতে নিয়ে আসার জন্য সরব হন কংগ্রেসের একাংশ৷ তাঁদের দাবি, রাহুলের চেয়ে অনেক বেশি ক্যারিশ্মা রয়েছে প্রিয়াঙ্কার মধ্যে!
তবে সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে অনেকেই আবার মনে করেছিল ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক পরিবারের এই তরুণ যোদ্ধা দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জোয়ার নিয়ে আসবে৷ পুনরুজ্জীবিত হবে কংগ্রেসের রাজনৈতিক ভাগ্য৷ দেশের অভ্যন্তরে জাতপাতের রাজনীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠ হতে শুরু করেছিলেন রাহুল৷ নিন্দুকরা যাই বলুন, আমেঠিতে ১ লাখের বেশি ভোট পেয়ে কংগ্রেসের বুনিয়াদ ধরে রেখেছিলেন তিনি৷ এর পর ২০০৬ সালে রায় বরেলির উপনির্বাচনে সোনিয়া গান্ধীর হয়ে প্রচারে নামেন রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা৷ সেখানে সোনিয়াকে জিতিয়ে আনেন ৪ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে৷
২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করা হয় রাহুল গান্ধীকে৷ একই সঙ্গে যুব কংগ্রেসের দায়িত্বও নেন তিনি৷ ২০০৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বিদেশে থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাহুলের নাম তুলে ধরেছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলি৷ কিন্তু কোথাও গিয়ে তাল কেটেছিল৷ ২০১৩ সালে দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ওয়ানাড়ের সাংসদ৷
২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে আমেঠি কেন্দ্রে তাঁর নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন রাহুল৷ উত্তরপ্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে কংগ্রেস জিতেছিল ২১টিতে৷ ছয় সপ্তাহ ধরে ১২৫টি সমাবেশ করে প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন সোনিয়া তনয়৷ এর পর একাধিক আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি৷ ২০১১ সালে ভাট্টা পারসৌল গ্রামে আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থনে সোচ্চার হয়ে গ্রেফতারও হন তিনি৷
২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট ছিল রাহুলের রাজনৈতিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷ দু’মাস ধরে ২০০টি সমাবেশ করেছিলেন তিনি৷ ফল ২৮টা আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস৷ তবে এর মধ্যে আমেঠি কেন্দ্রের অধীনে ছিল ১৫টি আসন৷
এর পর ২০১৪৷ লোকসভা ভোটের লড়াই কঠিন হয়ে ওঠে রাহুলের কাছে৷ আমেঠি কেন্দ্রে তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ান বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানি৷ রাহুল নিজের কেন্দ্র ধরে রাখতে পারলেও কমে যায় জয়ের ব্যবধান৷ ২০১৯ সালে নেরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান তুলে ফের ভোট ময়দানে ঝাঁপান সোনিয়া তনয়৷ রাহুলের নেতৃত্বে ২০০৯ এর চেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয় কংগ্রেস৷ কিন্তু ক্ষমতায় ফিরতে পারেননি৷ এমনকী আমেঠি-কেন্দ্রকেও ধরে রাখতে পারেননি তিনি৷ স্মৃতি ইরানির কাছে ৫৫ হাজার ১২০ ভোটে পরাজিত হন৷ তবে কেরলের ওয়ানার থেকে জিতে লোকসভায় যান রাহুল৷
আরও পড়ুন- ত্রিপুরায় ক্ষতিগ্রস্ত পার্টি কর্মীদের সাহায্যে রাস্তায় নামলেন বিমান, সূর্য, সেলিম!
এবার সামনে লক্ষ্য ২০২৪৷ ইতিমধ্যেই লড়াইয়ের সুর বেঁধে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ডাক দিয়েছেন বিরোধী জেটের৷ কিন্তু এই জোটের মুখ হয়ে নেতৃত্বে দেখা যাবে কি রাহুল গান্ধীকে? নাকি এখনও তিনি লড়াইয়ের জন্য অপ্রস্তুত৷ যদিও তৃণমূল কংগ্রসের দাবি, লোকসভা ভোটে রাহুল নন, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী মুখ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বারবার সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করা রাহুল মমতার কাছে ফিকে৷