কলকাতা: ত্রিপুরায় বিজেপি দুষ্কৃতীদের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত সিপিএম কর্মীদের সাহায্যার্থে এবং আক্রান্ত মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে বুধবার কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে চলছে অর্থসংগ্রহ। নিউ মার্কেট চত্বরে বিমান বসু, শ্যামবাজারে সূর্য মিশ্র, বেহালা ১৪নং বাসস্ট্যান্ডে মহম্মদ সেলিম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
প্রসঙ্গত ত্রিপুরায় বাম কর্মী সমর্থকদের উপর পরিকল্পিত এবং সংগঠিত আক্রমণ করেছে সেখারকার শাসক দল বিজেপি। ত্রিপুরায় শাসক দলের দুর্বৃত্ত বাহিনী বামপন্থীদের বিরুদ্ধে হিংসার বেনজির আক্রমণ সংগঠিত করেছে। গত ৮-৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সিপিআই(এম)-র রাজ্য দপ্তর, জেলা কমিটি, মহকুমা কমিটি-সহ প্রায় ৫০টি অফিসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর করা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্যান্য বামপন্থী দলের দপ্তর, গণ সংগঠনের অফিস। ত্রিপুরার শ্রদ্ধেয় জননেতা কমরেড দশরথ দেবের মূর্তি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বামপন্থী কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ করা হয়েছে, অনেকের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের অফিসেও হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গোমতী জেলার উদয়পুরে আরএসপি এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা দপ্তর নৃশংস আক্রমণ করে ধ্বংস করা হয়েছে। এই আক্রমণ ঘটেছে পুলিশের সামনে, তারা নীরব, নিষ্ক্রিয় থেকেছে। এমনকি তান্ডবে মদতও দিয়েছে। যেভাবে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে তা থেকে স্পষ্ট পূর্বপরিকল্পিতভাবে এবং রাজ্য প্রশাসনের মদতে বিরোধীদের ওপরে এই জঘন্য আক্রমণ চালানো হয়েছে। ঘটনার পরে একজনও দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হয়নি, বরং রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে এই আক্রমণকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
ত্রিপুরায় গণতন্ত্র বিপন্ন। বিজেপি সরকারের আসীন হবার পর থেকেই বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকে খুন হয়ে গেছেন। বিরোধীদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক কাজকর্ম করার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার বারংবার আক্রান্ত হচ্ছে। সংবিধান মেনে আইনের শাসনের বাতাবরণ নেই। এরই মধ্যে জীবনজীবিকা, কাজের দাবি, খাদ্যের দাবিতে মানুষ ক্রমশ প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছেন। সভা-সমাবেশ, মিছিল, বিক্ষোভ হচ্ছে। এই প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করতেই বিজেপি ভয়াবহ আক্রমণ নামিয়ে এনেছে।
বামফ্রন্ট ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের যৌথ সভা এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা করছে ইতিমধ্যেই। বামফ্রন্টের বক্তব্য, এই হিংসার অবসান ঘটাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ত্রিপুরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারও দেশের একটি রাজ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপরে এই আক্রমণে নীরব থাকতে পারে না। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। ত্রিপুরার সংগ্রামী জনগণের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছে পশ্চিমবঙ্গ বামফ্রন্ট ও সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। ত্রিপুরায় আক্রমণের বিরুদ্ধে এরাজ্যেও প্রতিবাদী কর্মসূচী হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে।