দুর্গম তাওয়াঙে পেরেক-লাঠি নিয়ে চিনা হামলা, বড় আঘাত নয় বললেন রাজনাথ, ওয়াক আউট বিরোধীদের

দুর্গম তাওয়াঙে পেরেক-লাঠি নিয়ে চিনা হামলা, বড় আঘাত নয় বললেন রাজনাথ, ওয়াক আউট বিরোধীদের

নয়াদিল্লি:  গালওয়ানের পর ফের রক্ত ঝরল উপত্যকায়৷ অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াঙে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) লাল ফৌজের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ভারতীয় সেনার৷ এই ঘটনায় নয়াদিল্লি প্রতিক্রিয়া জানানোর পরই মুখ খুলল বেজিং। চিনা বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘‘ ভারত-চিন সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক এবং সামরিক স্তরে নিরবচ্ছিন্ন আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল।’’ তবে গত শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) তাওয়াঙে চিন সেনার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন বা হামলা সম্পর্কে ভারতের অভিযোগের কোনও কথা উল্লেখ করেননি ওয়াং। 

আরও পড়ুন- নেতৃত্ব তৈরি! কারা পরামর্শ দেবেন মেঘালয়ে, জানালেন মমতা

২০২০ সালের জুন মাসে লাদাখের গালওয়ানের পর ২০২২-এর ডিসেম্বর৷ অরুণাচলের তাওয়াঙে ফের চিনা ফৌজের হামলা, নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে নয়াদিল্লিকে৷ এই ঘটনা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার লোকসভায় বিবৃতি দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানে সরাসরি লাল ফৌজের বিরুদ্ধে ‘এলএসি লঙ্ঘনের চেষ্টা’র অভিযোগ তুলেছেন তিনি। 

সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন, দু’দেশের সেনার মধ্যে সংঘাত বড় ঘটনা নয়, বরং এই ধরনের সমস্যা সামলে নেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে ভারতীয় সেনা৷ রাজনাথ সিং-এর এই বক্তব্য শোনার পরই প্রতিবাদে লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা। অন্যদিকে, তাওয়াঙের ঘটনায় সেনাবাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারতীয় সেনা যথা সময়ে হস্তক্ষেপ করেছিল বলেই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। চিনের পিপল লিবারেশন আর্মির জওয়ানরা পিছু হঠতে বাধ্য হন।’’ এর পরেই রাজনাথ বলেন, ‘‘ … তা ছাড়া, অরুণাচল সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় কোনও সেনার মৃত্যু হয়নি। কেউ গুরুতর জখমও হননি। আমরা মনে করি এটুকু সমস্যা সামলে নেওয়ার ক্ষমতা আছে ভারতীয় সেনার।’’ 
 

সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী,  শুক্রবার রাতে লাঠিসোঁটা হাতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) অতিক্রম করে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি বা পিএলএ৷ শুরু হয় দু’পক্ষের সংঘর্ষ৷ জানা গিয়েছে, চিনা বাহিনীর সঙ্গে ছিল পেরেক লাগানো লাঠি। তা নিয়ে ভারতীয় সেনার উপর চড়াও হন তাঁরা। তবে ভারতীয় সেনা প্রস্তুত থাকায় বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তবে সংঘর্ষের জেরে  দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন সেনা আহত হয়েছেন।

শুক্রবার গভীর রাতে অরুণচলের যে অংশে সংঘর্ষ হয়েছে, সেই জায়গাটির নাম তাওয়াং। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ছোট্ট পাহাড়ি শহর৷ তাওয়াঙের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক কথায় অতুলনীয়।

চারিদিক উঁচু পাহাড়ে ঘেরা৷ যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই ঘন সবুজ জঙ্গল। মধ্যিখান দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা পাহাড়ি নদী। প্রকৃতির রূপ-রসে ঘেরা হলেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এই এলাকা বেশ দুর্গম৷ গত শুক্রবার এই এলাকাতেই হামলা চালায় চিনা সেনাবাহিনী।  ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, তাওয়াঙ শহরে মাত্র ১১ হাজার মানুষের বাস। এই অঞ্চলের গড় উষ্ণতা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  বছরে গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ৯১৫ মিলিমিটার৷  শীতকালে বরফে ঢাক তাওয়াং।

পাহাড়, নদী, গাছগাছালির ভিড়ে প্রকৃতি এখানে মোহময়ী। প্রকৃতির এই স্নিগ্ধতার মাঝেই বেঁধে সংঘর্ষের কাঁটা। ভারত-চিন সীমান্তবর্তী এই শহর শান্ত হতে পারে না। ২০২০ সালের গালওয়ান-কাণ্ডের মতো প্রাণহানি না ঘটলেও শুক্রবার রাতের ঘটনায় দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন সেনা আহত হয়েছেন। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, কোনও ভারতীয় সেনার জখম গুরুতর নয়। গালওয়ানের মতোই তাওয়াঙেও দ্বিপাক্ষিক সেনাস্তরের ‘রুল অব এনগেজমেন্ট’ মেনে কোনও পক্ষই সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি।