কলকাতা: কল্পকাহিনী বা সায়েন্স ফিকশনের চরিত্রগুলি পড়ে কিংবা ‘ডিসি’ বা ‘মার্ভেল’ সিরিজের ছবিগুলি দেখে মাঝেমধ্যে সুপারহিরো হওয়ার সাধ জাগে অনেকের মনেই৷ কেমন হত যদি তাদের মতো ‘সুপার পাওয়ার’ থাকত! তবে এই সব সুপার হিরোদের শুধু বইয়ের পাতা কিংবা সিনেমার পর্দাতেই খুঁজে পাওয়া যায় না৷ ‘সুপার পাওয়ার’-এর অস্তিত্ব রয়েছে বাস্তবেও। এমন এমন ঘটনা ঘটেছে যাঁর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বিশেষজ্ঞরাও৷ বাস্তবে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা কোনও না কোনও দুর্ঘটনার পর ‘সুপার পাওয়ার’ লাভ করেছেন।
আরও পড়ুন- হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কায় ডুবেছিল টাইটানিক, কাহিনি লেখা হয়ে গিয়েছিল দুর্ঘটনার ৩৬ বছর আগেই!
এমনই একজন হলেন জ্যাসন প্যাডগেট। ছোট থেকেই অঙ্কে ভীতি ছিল তাঁর৷ অঙ্ক দেখলেই একেবারে গলদঘর্ম অবস্থা৷ পড়াশোনার বদলে সারা দিন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হইহুল্লোড় করাই ছিল তাঁর পছন্দের৷ তবে এক দুর্ঘটনায় তাঁর জীবনের মোড় বদলে যায়৷
কোনও এক বছরের ১৩ তারিখ বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করে বাড়ি ফিরছিলেন জ্যাসন। দিনটা ছিল শুক্রবার৷ ফেরার পথে তাঁর উপর অতর্কিতে হামলা চালায় ওই দুষ্কৃতী৷ জ্যাসনের কাছ থেকে সমস্ত টাকাপয়সা ছিনতাই করে পালায় সে৷ গুরুতর আহত হন জ্যাসন। মাথায় চোট লাগে তাঁর৷ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন৷ এর পরেই ঘটে অবাক কাণ্ড৷ জ্যাসন নাকি কোনও কিছুই আর স্বাভাবিক চোখে দেখতে পেতেন না। সবটাই দেখতেন পিক্সেল বাক্সের মতো৷ এমনকী আগে যে জ্যাসন অঙ্ক দেখলেই ভয়ে পালতেন, সেই জ্যাসনই পাতার পর পাতা অঙ্ক কষতে থাকেন৷ ভৌতবিজ্ঞানের সাহায্যে জটিল সমস্যার সমাধান করে ফেলতেন নিমেষে৷ অনেকে মনে করেন, দুর্ঘটনার ফলে মাথায় আঘাত পাওয়ার ফলেই ‘সুপার পাওয়ার’ পান জ্যাসন।
নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা টোনি সিকোয়ার সুপার পাওয়ার পাওয়ার কাহিনিটা অবশ্য অন্য রকম। ১৯৯৪ সালের একটি ঘটনা তাঁর জীবন পুরোপুরি পাল্টে দেয়৷ রাস্তার ধারের একটি ‘পেফোন’ থেকে সেদিন তাঁর মাকে ফোন করছিলেন টোনি৷ এই ধরনের ফোন থেকে কথা বলার জন্য কয়েন ফেলে নম্বর ডায়াল করতে হয়। সেই নিময় মেনে টোনি কয়েন ফেলে তাঁর মায়ের নম্বর ডায়াল করছিলেন৷ সেই সময়ই ঘটে বিপত্তি। আচমকা বাইরে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়৷ বিশাল জোড়ে বাজ পড়তে থাকে৷ বাজ পড়ার শব্দে হঠাৎ করে হৃদ্স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় টোনির।
সৌভাগ্যবশত সেই সময় টেলিফোন বুথের বাইরে ফোন করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন এক মহিলা৷ তিনি আবার পেশায় নার্স৷ তাঁর প্রচেষ্টায় হৃদ্স্পন্দন ফিরে পান টোনি। এই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর স্নায়ু বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা করাতে গেলে তিনি এক অদ্ভুত জিনিস লক্ষ করেন৷ এই ঘটনার আগে পর্যন্ত টোনি বেশি ক্ষণ কিছু মনে রাখতে পারতেন না। জোর আওয়াজে গানবাজনা শুনতেও ভালোলাগত না তাঁর৷ কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন পিয়ানোর সুর তাঁকে টানছে৷ যে কিনা কোনও দিন পিয়ানো ছুঁয়েই দেখেননি, সেই মানুষটিই পিয়ানোর প্রতিটি নোট পড়ে ফেলছেন৷ এমনকী পিয়ানোয় নিজে সুরও তুলতে থাকেন। দুর্ঘটনার পরই পিয়ানো বাজানোর বিশেষ ক্ষমতা পান টোনি৷
এবার বলব অরল্যান্ডো ক্লেমেন্টের কথা৷ অরল্যান্ডোর বয়স তখন মাত্র ১০৷ সালটা ১৯৭৯৷ ওই বছর ১৭ অগাস্ট মাঠে বেসবল খেলার সময় মাথায় বল লাগে তার৷ চোট পেলেও তাঁর আঘাত গুরুতর ছিল না। বেশ কিছু দিন মাথার যন্ত্রণায় ভুগলেও পরে সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর পরেই অরল্যান্ডো অদ্ভুত সব জিনিস লক্ষ করতে থাকেন। তিনি দেখেন, মনে মনেই অঙ্কের জটিল সমাধান করে ফেলতে পারছেন। জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট ঘটনার স্মৃতিও তাঁর মনে স্পষ্ট। এত প্রখর স্মৃতিশক্তি সাধারণত কোনও মানুষের থাকতে পারে না৷ অধিকাংশেরই ধারণা, মাথায় চোট লাগার ফলেই এই ‘সুপার পাওয়ার’ পান অরল্যান্ডো।
সাঁতার কাটতে খুব ভালোবাসতেন ডেরেক আমাটো৷ তাতেই তিনি মনের শান্তি খুঁজে পেতেন৷ একদিন সাঁতার কাটবেন বলে সুইমিং পুলে ঝাঁপ দেন। কিন্তু সেদিন পুলে জল কম থাকায় মাথায় চোট লাগে তাঁর। এই চোটের পর ডেরেকের শ্রবণক্ষমতাও কমে যায়। কিন্তু অদ্ভূতভাবে তাঁর চোখের সামনে সাদা কালো বাক্সের আকারে ভেসে উঠতে থাকে গানের নোট৷ এর পর তিনি নিজে থেকেই পিয়ানোতে অসাধারণ সুর সৃষ্টি করতে শুরু করেন।
এমনই এক সুপার হিরো আদরোয়া৷ বছর চারেক আগের ঘটনা৷ উগান্ডার একটি মাঠে ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই একদল বাচ্চার সঙ্গে খেলছিল বছর ১৩-র আদরোয়া৷ হঠাৎ করেই বাজ পড়ার শব্দে অজ্ঞান হয়ে পড়ে সে৷ সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও, তার মধ্যে অদ্ভূত বদল ঘটে। চোখের মণি আর বাদামি ছিল না৷ তা নীল রঙে পরিণত হয়। শরীরের শিরা-ধমনীগুলিও স্পষ্ট বোঝা যায় এখন। এই ঘটনার পর রাতে খালি চোখে স্পষ্ট দেখার ‘সুপার পাওয়ার’ পায় আদরোয়া।