কলকাতা: সম্রাটহীন ফুটবল বিশ্ব৷ চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছেন বিশ্বফুটবলের সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে৷ বিশ্বদুনিয়া তাঁকে পেলে নামে চিনলেও, জন্মের পর বাবা-মা নাম দিয়েছিলেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো৷ তাঁর বাবাও ছিলেন ফুটবলার৷ তবে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাননি ফুটবল সম্রাটের৷ তাঁর ছোটবেলা কেটেছে চরম দারিদ্রতায়৷ অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ফুটবল জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পেলে। তারপর পায়ের অনবদ্য ছন্দে তিন তিনবার বিশ্বকাপ জয়৷ যে কাহিনি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়৷
আরও পড়ুন- প্রয়াত ফুটবল সম্রাট, তিনটি বিশ্বকাপ জয়ী বিশ্ব ফুটবলের প্রথম কিংবদন্তি পেলে
১৯৪০ সালের ২১ অক্টোবর, ব্রাজিলের মিনাস জেরিয়াসের কোরাক্লাসের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয় পেলের৷ বাবা ডোনডিনহো ছিলেন ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সের ফুটবলার। ইলেকট্রিক বাল্বের আবিষ্কর্তা টমাস এডিসনের নামানুসারে ছেলের নাম রেখেছিলেন তিনি। পরে অবশ্য ‘এডিসন’ বদলে ছেলের নাম দেন ‘এডসন’। এডসন আরান্তেস দি নাসিমেন্তো। ডাকনাম দেন ‘ডিকো’। পেলে নামটি তাঁর পরিবারের দেওয়া নয়। স্কুলে পড়ার সময় তাঁকে এই নামটি দিয়েছিল তাঁর বন্ধুরা।
বাবাকে দেখেই ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছিল ছোট্ট পেলের৷ ছেলেবেলা থেকেই তাঁর স্বপ্ন ছিল বড় ফুটবলার হওয়ার৷ তবে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করা ছেলেটা ছোটবেলায় চামড়ার ফুটবল নিয়ে খেলার সুযোগ পাননি৷ তাঁর ‘ফুটবল’ ছিল অন্য রকমের৷ মোজার ভিতরে কাগজ ভরে সেটিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে বল বানিয়ে চলত লাথালাথি৷ কোরাক্লাসের রাস্তায় ফুটবল খেলেই দিন কাটত তাঁর। কে জানত, সেই ছেলেই একদিন বিশ্ব ফুটবলের সম্রাট হয়ে উঠবে৷
বাবার কাছেই ফুটবলে হাতে খড়ি হয়েছিল ব্রাজিলিয় কিংবদন্তীর। তবে বাবার উপার্জন তেমন ছিল না৷ সেই সময় ফুটবলারদের বেতন ছিল খুবই সামান্য৷ ফলে অভাব-অনটনের মধ্যেই ছেলেবেলা কেটেছিল তাঁর৷ পেলেরা ছিলেন দু’ভাই। তিনিই বড়৷ অভাবের তারনায় একটা সময় চায়ের দোকানেও কাজ করতে হয়েছে পেলেকে। সেখান থেকে পাওয়া সামান্য টাকাতেই নিজের হাতখরচ মেটাতেন ফুটবল সম্রাট৷
শুধু চায়ের দোকানেই নয়, একটা সময় রেলস্টেশনে ঝাড়ুও দিতেও হয়েছিল ফুটবল কিংবদন্তীকে। করেছেন জুতো পরিষ্কার৷ কেউ হয়তো তখন ভাবতেও পারেননি জুতো পরিষ্কার করা এই ছেলেটার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এত প্রতিভা!
পেলে শুধু ব্রাজিলের নন, গোটা বিশ্বের ফুটবল সম্রাট। বল পায়ে তিনি সবুজ ক্যানভাসে শিল্প রচনা করতেন৷ তাঁর পায়ে রচিত সেই শিল্প দু’চোখ ভরে দেখতে বিশ্ববাসী৷ তিনি যতবার বল পায়ে এগিয়ে গিয়েছেন, যতবার বিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন, ততবার মোহিত হয়েছে ফুটবল বিশ্ব। ব্রাজিলের অন্যান্য ফুটবলারদের মতোই পাকে ফুটেছিল এই পদ্মফুল৷
তবে ভাগ্যদেবতা সহায় হয়েছিল পেলের৷ তাঁর অসাধরণ প্রতিভা বস্তির গলিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ব্রাজিলের পেশাদার ফুটবল লিগে স্যান্টোস ক্লাবের হয়ে সর্বাধিক গোল করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন৷ সেটা ছিল শুরু। এর পর ক্লাব ও দেশের হয়ে ১৩৬৩টি ম্যাচ খেলে মোট ১২৮১টি গোল করেন ব্রাজিলিং কিংবদন্তী। যা বিশ্ব রেকর্ড।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>