নয়াদিল্লি: পশু মাংস খাওয়া মানুষের চিরকালীন অভ্যাস। সভ্যতার আদি লগ্নে শিকার করা পশুর কাঁচা মাংসই খেত মানুষ, সভ্যতা যত আধুনিকতার পথে পা বাড়িয়েছে তত মাংসেও লেগেছে আগুনের প্রলেপ। কিন্তু আধুনিক মানুষের কাছে শুধু ঝলসানো মাংসই নয়, ধর্মও বড় বালাই। আর তাই এবার মাংস খাওয়ার চিরকালীন রীতিতেও ঢুকছে ধর্মীয় বিধিনিষেধ।
হালাল না ঝটকা, কী পদ্ধতিতে বিক্রিত পশুকে হত্যা করা হয়েছে এবার থেকে রেস্টুরেন্টে খাবার পরিবেশনের আগে উল্লেখ করতে হবে তার নাম, এদিন এমনটাই জানিয়েছে উত্তর দিল্লি প্রশাসন। এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বিজেপি পরিচালিত উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে পাশ হওয়ার পরেই একথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন এলাকার মেয়র জয় প্রকাশ। প্রস্তাব অনুযায়ী তিনি জানান, “এখন থেকে উত্তর দিল্লির সমস্ত হোটেল এবং রেস্টুরেন্টে বাধ্যতামূলক ভাবে প্রদর্শন করতে হবে বিক্রিত মাংসের ধরণ। অর্থাৎ তা হালাল না ঝটকা, কোন পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন- বাংলায় ‘বন্ধু’ বামেদের কেরালায় ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা প্রিয়াঙ্কার! বিড়ম্বনায় বঙ্গ কংগ্রেস
কেন এই নির্দেশিকা? জানানো হয়েছে, হালালের মাংস খাওয়া হিন্দু এবং শিখ ধর্মবিরোধী, তাই অনেকক্ষেত্রেই ধর্মপ্রাণ ক্রেতারা মাংসের ধরণ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। এক্ষেত্রে তাঁদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগার সম্ভাবনা আছে বলেও জানানো হয়েছিল উত্তর দিল্লি প্রশাসনের তরফে। এর আগে দক্ষিণ দিল্লিতেও অনুরূপ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। গত জানুয়ারি মাসে থেকে সেখানে এই নির্দেশিকা কার্যকর করা হয়। এবার মাংস বিক্রির ক্ষেত্রে দক্ষিণ দিল্লির দেখানো পথেও হাঁটল উত্তরও।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইসলাম ধর্মে হালাল পদ্ধতিতে পাওয়া মাংস খাওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। কিন্তু হিন্দু কিংবা শিখ ধর্মে স্বীকৃতি পেয়েছে ‘ঝটকা’ পদ্ধতি। হালাল অনুযায়ী পশু হত্যায় একটি বিশেষ পদ্ধতি মেনে চলা হয়। এক্ষেত্রে পশুর ঘাড়ের কাছের একটি শিরা, করোটিড আর্টারি এবং শ্বাসনালী কেটে তাকে হত্যা করা হয়। ইসলামিক ধর্মীয় নির্দেশিকায় বলা রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পশুর দেহের সমস্ত রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন পশু জীবিত থাকে। এই পদ্ধতি হিন্দু কিংবা শিখ ধর্মে স্বীকৃত নয়। ঝটকা অর্থাৎ এক ঝটকায় তৎক্ষণাৎ পশুর প্রাণ নিয়ে নেওয়াই স্বীকৃত ওই দুই ধর্মে।